তালহা জুবায়ের | পার্বত্য চট্টগ্রাম
পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙালি সংগঠনের দীর্ঘদিনের অস্তিত্ব ও রাজনৈতিক গতিধারার মধ্যে নতুন মোড় নিতে যাচ্ছে পার্বত্য চট্টগ্রাম সমঅধিকার আন্দোলন। ২০০৪ সালে খাগড়াছড়ির সাবেক সংসদ সদস্য ওয়াদুদ ভূঁইয়ার নেতৃত্বে গঠিত এই সংগঠনটি একসময় বাঙালি সংগঠনগুলোর একটি ফেডারেশন হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছিল। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন প্রতিকূলতার কারণে সংগঠনটির কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ে।
পার্বত্য চট্টগ্রামে বিভিন্ন সময়ে বাঙালি স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলো আত্মপ্রকাশ করলেও বেশিরভাগই নেতৃত্ব সংকট ও বিভক্তির কারণে বিলুপ্ত হয়েছে।
এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংগঠনগুলোর মধ্যে ছিল—
১। পার্বত্য চট্টগ্রাম গণ পরিষদ (প্রথম বাঙালি সংগঠন; জালাল উদ্দিন চৌধুরী আলমগীর ১৯৭৯/৮০), ২। পার্বত্য বাঙালি ছাত্র পরিষদ (১৯৯১ সালে প্রতিষ্ঠিত, কুমিল্লা জামতল), ৩। পার্বত্য বাঙালি ছাত্র ঐক্য পরিষদ (উজ্জ্বল পাল), ৪। পার্বত্য নাগরিক পরিষদ মামুন ভুইঁয়া, ইয়াকুব আলী চৌধুরী, ৫। পার্বত্য অধিকার ফোরাম (মাইন উদ্দিন-মাসুম)
৬। ২০১৯ সালের ৫ ডিসেম্বর ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এসব সংগঠন একত্রিত হয়ে জাঁকজমকপূর্ণ ভাবে পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ (পিসিএনপি) নামে আত্মপ্রকাশ করে। খাগড়াছড়ির বাসিন্দা আবুল হাশেম জানান, অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও নেতৃত্ব সংকটের কারণে পিসিএনপি সংগঠিত হতে ব্যর্থ হয়। ফলে সংগঠনটি ক্রমশ নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে এবং বাঙালিদের অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেনি।
সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর পার্বত্য চট্টগ্রাম সমঅধিকার আন্দোলন নতুন করে সক্রিয় হওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে সংগঠনটি খাগড়াছড়ি জেলার ১৩১ সদস্য বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি প্রকাশ করেছে। এতে জেলার বিএনপির নেতাকর্মী ও সমর্থকরা স্থান পেয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) প্রকাশিত নতুন কমিটির শীর্ষ পদে রয়েছেন—
১। মোশাররফ হোসেন – চেয়ারম্যান, মেরুং, দীঘিনালা (খাগড়াছড়ি জেলা সভাপতি), তিনি জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক। ২। মো. আসাদ উল্লাহ – কুমিল্লা টিলা, খাগড়াছড়ি (জেলা সাধারণ সম্পাদক) ৩। মো. মনির হোসেন – দীঘিনালা (জেলা সাংগঠনিক সম্পাদক)
সমঅধিকার আন্দোলনের নতুন কমিটিতে মো. আসাদ উল্লাহ গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পেয়েছেন, যিনি পূর্বে পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের অধীনস্থ পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও পরে পার্বত্য চট্টগ্রাম যুব পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি ছিলেন।
তার সমঅধিকারে যোগদানের ফলে ধারণা করা হচ্ছে, নাগরিক পরিষদের আরও অনেক নেতাকর্মী সমঅধিকার আন্দোলনে যোগ দেবে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আসাদ উল্লাহর পোস্টে নাগরিক পরিষদের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী তাকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন, যা এই দলবদলের ইঙ্গিত বহন করে।
এক ফেসবুক পোস্টে মো. আসাদ উল্লাহ লিখেছেন:
“পাহাড়ের সকল বৈষম্যের বিরুদ্ধে রাজপথেই ফয়সালা হবে, ইনশাআল্লাহ। ✌️✌️”
তিনি আরও উল্লেখ করেন—
“পার্বত্য চট্টগ্রাম সমঅধিকার আন্দোলনের ১৩১ সদস্য বিশিষ্ট খাগড়াছড়ি জেলা পূর্ণাঙ্গ কমিটি প্রকাশ। আমাকে গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব দেওয়ায় সম্মানিত উপদেষ্টা মহোদয়ের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। পাহাড়ের সকল সম্প্রদায়ের সমান অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সকলের দোয়া ও সার্বিক সহযোগিতা কামনা করছি।”
তার এই ঘোষণার পর নাগরিক পরিষদের অনেক নেতাকর্মী শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে মন্তব্য করেন, যা পিসিএনপির জন্য এক বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দাঁড়িয়েছে।
আগামীর পথচলা ও রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ: সমঅধিকার সূত্রে জানা গেছে, সংগঠনটি অতি শীঘ্রই রাঙামাটি জেলায় পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করবে। খাগড়াছড়ির পর রাঙামাটি ও বান্দরবানে সমঅধিকারের কার্যক্রম বিস্তৃত হলে এটি পার্বত্য চট্টগ্রামের বাঙালি স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণ ঘটাতে পারে।
এই পুনর্জাগরণ পার্বত্য চট্টগ্রামের বাঙালিদের অধিকার রক্ষার আন্দোলনে নতুন মাত্রা যোগ করতে পারে, তবে নাগরিক পরিষদসহ অন্যান্য সংগঠন কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানায়, সেটাও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।