রাঙ্গুনিয়ার দেড় শতাধিক ইটভাটায় কাউখালী থেকে চাঁদা দিয়ে যাচ্ছে জ্বালানি কাঠ।

0

বিধান দাস কাউখালী থেকে ফিরে এসে:

রাঙামাটি পার্বত্য জেলার কাউখালী উপজেলা থেকে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার দেড় শতাধিক অবৈধ ইটভাটায় প্রতিনিয়ত নিষিদ্ধ জ্বালানি কাঠ পাচার হচ্ছে। ইসলামপুর ও রাজানগর ইউনিয়নে গড়ে ওঠা এসব ইটভাটার জন্য কাউখালীর বনাঞ্চল উজাড় হতে বসেছে। চেলাছড়া, যৌথখামার, রস্যাবিলি, বেতছড়ি হয়ে রাত-দিন কাঠ পাচার অব্যাহত রয়েছে। পানছড়ি, তালুকদার পাড়া, বটতলী ও কাশখালী থেকেও একইভাবে কাঠ নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ইটভাটাগুলোতে।

স্থানীয়রা অভিযোগ করে জানিয়েছেন, ইউপিডিএফ (প্রসীত গ্রুপ) ও স্থানীয় কিছু চাঁদাবাজদের চাঁদাবাজির কারণে প্রশাসনের নাকের ডগা দিয়ে নিরবচ্ছিন্নভাবে কাঠ পাচার হচ্ছে। একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, টাকার বিনিময়ে এই কাঠ পরিবহন নির্বিঘ্ন করা হচ্ছে।

স্থানীয় বাসিন্দা মিজানুল ইসলাম বলেন, “প্রশাসন যদি সহযোগিতা না করত, তাহলে এত কাঠ কীভাবে পাচার হয়? নিশ্চয়ই ম্যানেজ করেই পাচার চলছে।”

এক রাজনৈতিক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “কাঠ পাচারে প্রশাসন ও বন বিভাগের ভূমিকা সন্দেহজনক। তারা ম্যানেজ হয়ে ইটভাটাগুলোতে কাঠ যেতে দিচ্ছে। এই কাঠ পাচারের ফলে কাউখালীর বনভূমি ধ্বংস হচ্ছে, পরিবেশের মারাত্মক বিপর্যয় দেখা দিচ্ছে। প্রতিদিন রাত ৮টার পর বিদ্যুৎ গতিতে কাঠভর্তি ট্রাক যেতে দেখা যায়, অথচ কেউ বাধা দেয় না।”

সরেজমিন পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, কাউখালী উপজেলার লেবারপাড়া, চেলাছড়া, পানছড়ি, তালুকদার পাড়া, বটতলী ও কাশখালী এলাকায় নির্বিচারে বৃক্ষনিধন চলছে। এসব অঞ্চলে ছোট ছোট সেগুন, গামারি এবং বিলুপ্তপ্রায় পাহাড়ি গাছগাছালি কেটে ফেলা হয়েছে, যার ফলে বনাঞ্চল ধ্বংসের মুখে পড়েছে।

জামাল হোসেন নামে এক ব্যক্তি বলেন, “নিজের ঘরের জন্য কাঠ ক্রয় করলে প্রশাসনের বাধার সম্মুখীন হতে হয়, কিন্তু অবৈধভাবে কাঠ পাচার হলে কোনো বাধা দেওয়া হয় না। এটি সত্যিই রহস্যজনক!”

কলমপতি কাঠ সমিতি জানান, রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর থেকে কাঠ সমিতির অফিসে তালা মারা। আমরা এখন কাঠ পাচার ও টাকা তোলার সঙ্গে সম্পৃক্ত নেই। জোরপূর্বক অন্যরা লাইন পরিচালনা করে এবং টাকা আদায় করে।

পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো বলছে, “ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন নিয়ন্ত্রণ আইন-২০১৩” (৫৯ নং আইন) অনুযায়ী ইট পোড়ানোর কাজে জ্বালানি কাঠ ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এই আইনের ১৪(৬) ধারায় স্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে—

“কোনো ব্যক্তি ইটভাটায় ইট পোড়ানোর কাজে জ্বালানি হিসেবে কাঠ ব্যবহার করতে পারবেন না।”

তবে আইন লঙ্ঘন করে এসব ইটভাটাগুলো নির্বিচারে কাঠ ব্যবহার করছে, যা পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের জন্য ভয়াবহ হুমকি সৃষ্টি করছে।

কাঠ পাচার বন্ধে প্রশাসনের নির্লিপ্ততা নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে। তবে প্রশাসন এখনো এ বিষয়ে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও বন বিভাগের পক্ষ থেকে অবৈধ কাঠ পাচার রোধে কোনো অভিযান পরিচালনার তথ্যও পাওয়া যায়নি।

পরিবেশবিদরা বলছেন, অবিলম্বে এই কাঠ পাচার বন্ধ করা না হলে কাউখালীর বনাঞ্চল ধ্বংস হয়ে যাবে, যার দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব পড়বে স্থানীয় পরিবেশ ও জলবায়ুর ওপর। প্রশাসনের কার্যকর ভূমিকা ছাড়া এই ধ্বংসযজ্ঞ থামানো সম্ভব নয় বলে মত প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।

 

আগের পোস্টসুবলং ইউপিডিএফের গুলিতে প্রত্যাগত জেএসএস সদস্য নিহত, আহত ১
পরের পোস্টপার্বত্য চট্টগ্রামে সমঅধিকার আন্দোলনের পুনর্জাগরণ: বাঙালি সংগঠনের নতুন দিগন্ত।

রিপ্লাই দিন

আপনার কমেন্ট লিখুন
আপনার নাম লিখুন