মহিবুল্লাহ চৌধুরী | লামা
বান্দরবানের লামা উপজেলায় সম্প্রতি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করায় হুমকির হুমকির সম্মুখীন হচ্ছেন নওমুসলিম। আজহারুল ইসলাম (পূর্ব নাম: অজহা ত্রিপুরা) খ্রিস্টান ধর্ম ত্যাগ করে ইসলাম গ্রহণ করার পর থেকেই তিনি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। অভিযোগ রয়েছে, ইসলাম ধর্ম বিদ্বেষী সৈয়রাম ত্রিপুরা তার বিরুদ্ধে বিভিন্নভাবে ষড়যন্ত্র করে চলেছেন।
সম্প্রতি ঢাকায় একটি ইসলামী ধর্মীয় প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে তিন দিন অংশগ্রহণ শেষে লামায় ফেরার পথে সৈয়রাম ত্রিপুরা তাকে হুমকি দেন বলে অভিযোগ করেছেন নওমুসলিম আজহারুল ইসলাম। সৈয়রাম ত্রিপুরা তার স্ত্রীকে ব্যবহার করে থানায় মৌখিক অভিযোগ করান। তবে লামা থানায় ওসির সঙ্গে সরাসরি আলোচনা করে বিষয়টি আপাতত মীমাংসা হলেও তিনি এখনো নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।
স্থানীয় সূত্র জানায়, সৈয়রাম ত্রিপুরা, পিতা: হানিচরণ ত্রিপুরা, মাতা: কচাংতমা ত্রিপুরা, সাং: গতিরাম পাড়া খ্রিস্টান মিশনারিদের সহযোগিতায় ঢাকা সায়দারবাদ এলাকায় একটি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল চালু করেছেন। অভিযোগ রয়েছে, তিনি লামার বিভিন্ন দুর্গম এলাকা থেকে দরিদ্র শিশুদের ঢাকায় নিয়ে গিয়ে খ্রিস্টান ধর্মে ধর্মান্তরিত করার কাজ করছেন।
এছাড়া, মানিকজন পাড়া (ব্রিকফিল্ড), গজালিয়া ২ নং ওয়ার্ডে বিদেশি অর্থায়নে নতুন একটি হোস্টেল গড়ে তোলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তিনি। স্থানীয়দের মতে, এই প্রতিষ্ঠানগুলো খ্রিস্টান মিশনারিদের অর্থায়নে পরিচালিত হচ্ছে, এবং নতুন করে বিদেশি ডোনার সংগ্রহের লক্ষ্যে সৈয়রাম ত্রিপুরা শীঘ্রই দেশের বাইরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
অভিযোগের বিষয়ে সৈয়রাম ত্রিপুরার সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বিষয়টি অস্বীকার করেন।
স্থানীয়দের দাবি, বান্দরবানসহ পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলায় খ্রিস্টান মিশনারিদের প্রতিষ্ঠান ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠেছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর নিজস্ব আচার-অনুষ্ঠান, শিক্ষা, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য।
বিশেষত, ম্রো (মুরং) জনগোষ্ঠীর আদি ধর্ম ‘ক্রামা’, খেয়াং, মারমা, চাকমা, তংচংগ্যা ও চাক সম্প্রদায়ের বৌদ্ধ ধর্ম, ত্রিপুরাদের সনাতন ধর্ম।
এই ধর্মগুলোর অনুসারীরা দিন দিন খ্রিস্টান ধর্মে ধর্মান্তরিত হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। অনেক ক্ষেত্রেই এই ধর্মান্তর অর্থের বিনিময়ে হচ্ছে বলে স্থানীয়রা দাবি করেছেন।
অপরদিকে, বম, লুসাই, কুমি, পাংখোয়া সম্প্রদায়ের মানুষ ঐতিহাসিকভাবে খ্রিস্টান ধর্মের অনুসারী হওয়ায় তাদের ধর্মান্তর নিয়ে বিতর্ক নেই। তবে কোনো ব্যক্তি খ্রিস্টান থেকে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করলে তাকে নানা ধরনের প্রতিকূলতার সম্মুখীন হতে হয়।
প্রসঙ্গত, অতীতে রোয়াংছড়ির নওমুসলিম শহীদ ওমর ফারুক ত্রিপুরাকে হত্যার ঘটনাও পার্বত্য চট্টগ্রামে নওমুসলিমদের উপর হামলার প্রমাণ হিসেবে উল্লেখ করেন স্থানীয় মুসলিমরা।
লামার ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের দাবি, নতুন করে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করা ব্যক্তিদের সুরক্ষা দেওয়া উচিত। তারা প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, যাতে নওমুসলিমদের প্রতি কোনো ধরনের নির্যাতন না হয় এবং তারা নিরাপদে ধর্মীয় জীবনযাপন করতে পারেন।
এ বিষয়ে প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক মন্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে স্থানীয়রা বলছেন, ধর্মীয় উত্তেজনা এড়াতে প্রশাসনকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।