হিলনিউজবিডি প্রতিবেদক | ঢাকা
বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় নিরাপত্তা আজ কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। একদিকে দেশীয় স্বার্থান্বেষী মহলের ষড়যন্ত্র, অন্যদিকে বিদেশি শক্তির কূটকৌশল—এ দুইয়ের সম্মিলিত আক্রমণে জাতির স্থিতিশীলতা বিঘ্নিত হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি, সীমান্ত এলাকায় ভারতীয় আগ্রাসন এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ক্রমবর্ধমান তৎপরতা দেশকে গভীর সংকটের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে সার্বভৌমত্ব রক্ষায় জাতীয় ঐক্য গঠনের কোনো বিকল্প নেই।
এই প্রেক্ষাপটে, সার্বভৌমত্ব সুরক্ষা পরিষদ-এর উদ্যোগে গত ১৫ মার্চ ২০২৫, শনিবার, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের ১নং হলে “সার্বভৌমত্ব সুরক্ষায় জাতীয় ঐক্যের প্রয়োজনীয়তা” শীর্ষক এক গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা সভা ও ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা মো: হাবিবুর রহমান হাবিব। প্রধান আলোচক ছিলেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব এডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বিজিপি’র ভাইস চেয়ারম্যান মতিন, ক্যান্সার গবেষক ডা. সরওয়ার, মেজর জেনারেল (অব.) আমছা আমিন, পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী মজিবর রহমান, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মফিজুর রহমান, লে. কর্নেল (অব.) ফরিদ আকবর, ড. আরিফ শাকি, ফয়েজ আহম্মেদ, প্রফেসর শাহজাহান সাজু, সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী মহসিন রশিদ, ড. মালেক ফরাজী, অধ্যক্ষ এম. এ. আমিন, অ্যাড. নূর মোহাম্মদ কীরণ প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, “বাংলাদেশের জাতীয় ঐক্য আজ অতীব প্রয়োজনীয় হয়ে উঠেছে। পার্বত্য চট্টগ্রামকে ঘিরে ভারতের ষড়যন্ত্র এখন স্পষ্ট, তারা এ অঞ্চলে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মদদ দিচ্ছে এবং আরাকান আর্মির মাধ্যমে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে প্রক্সি যুদ্ধ চালানোর চেষ্টা করছে।”
তারা আরও বলেন, “দেশে চলমান অস্থিতিশীল পরিস্থিতি, সীমান্তে ভারতীয় আগ্রাসন ও পার্বত্য অঞ্চলে সশস্ত্র বিদ্রোহীদের তৎপরতা প্রমাণ করে যে, আমাদের জাতীয় ঐক্য না থাকলে সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে পড়বে।”
পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যার স্থায়ী সমাধানের লক্ষ্যে আলোচনায় অংশগ্রহণকারীরা সাত দফা দাবি উত্থাপন করেন।
১. ১৯০০ সালের ব্রিটিশ কোম্পানি শাসনবিধি বাতিল করে পার্বত্যাঞ্চলে স্বাধীন সাংবিধানিক শাসন প্রতিষ্ঠা এবং পার্বত্য জনগণের স্বকীয়তা রক্ষায় আলাদা কমিশন গঠন।
২. পার্বত্যাঞ্চলে ভূমি জরিপ চালু করে ভূমিহীন ও ক্ষতিগ্রস্ত পাহাড়ি ও বাঙালিদের স্থায়ী পুনর্বাসনের ব্যবস্থা গ্রহণ।
৩. বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে সকল জাতিসত্তাকে সাংবিধানিক স্বীকৃতি প্রদান এবং সংবিধানে বাংলাদেশী বাঙালি/চাকমা/ত্রিপুরা/মারমা/অন্যান্য জাতিসত্তার অন্তর্ভুক্তি।
4. “শান্তি চুক্তি” নামক কালো চুক্তি বাতিল করে সংখ্যানুপাতে সকল জাতির সমান অধিকার নিশ্চিত করতে “সম্প্রীতি কমিশন” গঠন।
৫. ১৯৮৯ সালের পার্বত্য জেলা পরিষদ আইন বাতিল করে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে পার্বত্য জেলা পরিষদ পুনর্গঠন।
৬. পার্বত্য অঞ্চলে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের নির্মূলে সামরিক কমিশন গঠন এবং স্বাধীনতা-পরবর্তী সব গণহত্যার বিচারের জন্য বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন।
৭. ২০১৮ সালে জারিকৃত “আদিবাসী” শব্দ ব্যবহার নিষিদ্ধকরণ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন বাস্তবায়ন এবং “আদিবাসী” স্বীকৃতির ষড়যন্ত্র স্থায়ীভাবে বন্ধ ঘোষণা।
বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা কেবল সরকারের দায়িত্ব নয়, এটি সকল নাগরিকের নৈতিক কর্তব্য। কিন্তু, সাম্প্রতিক ঘটনাবলীতে প্রতীয়মান হয় যে, কিছু গোষ্ঠী পরিকল্পিতভাবে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করে জাতীয় নিরাপত্তাকে বিপন্ন করতে চাইছে। বিশেষ করে পার্বত্য চট্টগ্রামকে ঘিরে ভারতের সুদূরপ্রসারী ষড়যন্ত্র এবং বিচ্ছিন্নতাবাদীদের কার্যক্রম বন্ধে এখনই কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।
জাতীয় ঐক্যের ভিত্তিতে রাষ্ট্রীয় শক্তির পূর্ণ প্রয়োগের মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামের স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা করা না গেলে, এটি দেশের সার্বিক নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে উঠতে পারে। তাই, সরকার ও সাধারণ জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সর্বাত্মকভাবে প্রস্তুত থাকতে হবে।