জাত-ধর্মের বাঁধায় প্রেম, অপহরণ মামলায় বাঙালি যুবকের কারাবাস।

দীঘিনালা প্রতিনিধি

0

প্রেমের কোনো জাত-বর্ণ-ধর্ম নেই—এই চিরন্তন সত্যকে প্রমাণ করতে গিয়ে কারাগারে ঠাঁই হলো এক বাঙালি যুবকের। খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় এক উপজাতীয় মেয়ের প্রেমে পড়ে অপহরণের মিথ্যা মামলার শিকার হয়েছেন মো. শাকিল আহম্মেদ (১৮)।

দীঘিনালা উপজেলার বোয়ালখালী ইউনিয়নের পশ্চিম কাঠালতলীর মো. খায়রুল ইসলামের ছেলে শাকিল আহম্মেদ প্রায় দুই বছর ধরে প্রেমের সম্পর্কে জড়িত ছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা মিথুলী ত্রিপুরার (১৭) সঙ্গে। মিথুলীর বাবা খগেশ্বর ত্রিপুরা শাকিলের বাবার বেকারিতে শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন, সেই সূত্রেই তাদের পরিচয় ও প্রেমের শুরু। তাছাড়া তারা দুইজন পাশাপাশি বাসিন্দা।

প্রেম গাঢ় হতে হতে একসময় তারা পালিয়ে গিয়ে সংসার পাতার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু গত ১৯ মার্চ গভীর রাতে পালানোর সময় ধরা পড়ে যায় তারা। এরপরই সমাজের প্রভাবশালী গোষ্ঠীর চাপে মিথুলীর বাবা খগেশ্বর ত্রিপুরা দীঘিনালা থানায় শাকিলের বিরুদ্ধে অপহরণের অভিযোগ এনে মামলা করেন।

শাকিলের বাবা খায়রুল ইসলাম বলেন,
“আমার ছেলে আর মেয়েটি দু’জন দু’জনকে ভালোবাসে, এটি তো স্বাভাবিক ব্যাপার। আমার ছেলে তো জোর করে তাকে নেয়নি। আমি তো তাদের বিয়ের পক্ষেই ছিলাম, তাহলে কেন এই মিথ্যা মামলা?”

এ নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দা আকবর হোসেন বলেন, “এই প্রেমিক যুগল নিজেরাই সিদ্ধান্ত নিয়ে পালাতে চেয়েছিল, কাউকে জোর করা হয়নি। কিন্তু ধরা পড়ার পর প্রেমিকের ভাগ্যে শ্রীঘর জুটল, আর প্রেমিকার ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়ল। অপহরণের অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।”

দীঘিনালা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জাকারিয়া জানান,
“মিথুলী ত্রিপুরার বাবা বাদী হয়ে শাকিলের বিরুদ্ধে অপহরণের মামলা দায়ের করেছেন। পুলিশ অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে এবং আদালতের মাধ্যমে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। ভিকটিমকেও উদ্ধার করা হয়েছে এবং তার জবানবন্দি নেওয়া হয়েছে।”

স্থানীয় সূত্র জানায়, স্থানীয় আঞ্চলিক দল ও সমাজের চাপে মিথুলী ত্রিপুরার পরিবার এ মামলা করতে বাধ্য হয়েছে। মিথুলী ত্রিপুরা (১৭) স্থানীয় বালিকা উচ্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী। সে আগামী ১০ এপ্রিলে অনুষ্ঠিত এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিলেন। মিথুলী নিজের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া পর্যন্ত সেফ কাস্টডিতে (নিরাপদ আশ্রয়ে) থাকার ইচ্ছা প্রকাশ করলেও আদালত বয়স কম থাকায় তাকে বাবার জিম্মায় দিয়েছে।

এ ঘটনায় প্রশ্ন উঠেছে, প্রেম কি অপরাধ? দু’জন সম্মতিতে সম্পর্ক গড়ে উঠলেও ধর্ম, সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে তা অপহরণ হিসেবে চিত্রিত হচ্ছে। একদিকে প্রেমের পরাজয়, অন্যদিকে এক যুবকের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

এই ঘটনাটি প্রমাণ করে, জাত-ধর্মের বাঁধায় সমাজ এখনো প্রেমের স্বাধীনতা মেনে নিতে প্রস্তুত নয়। ক্ষমতার রাজনীতি প্রেমিক-প্রেমিকাদের স্বপ্ন ভেঙে দিতে পারে, আর তার জ্বলন্ত উদাহরণ শাকিল আহম্মেদ ও মিথুলী ত্রিপুরার করুণ পরিণতি।

 

আগের পোস্টসেনাবাহিনীর সহায়তায় দীর্ঘ ১১ মাস পর ঘরে ফিরল ৭ বম পরিবার
পরের পোস্টরাঙ্গামাটিতে সুবিধাবঞ্চিতরা পেয়েছে সেনাবাহিনীর ঈদ উপহার

রিপ্লাই দিন

আপনার কমেন্ট লিখুন
আপনার নাম লিখুন