সামাজিক উৎসব উপলক্ষে উপজাতিদের জন্য ৪৫০ টন গম বরাদ্দ।

0

স্টাফ রিপোর্টার | হিলনিউজবিডি

পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত উপজাতীয় জনগোষ্ঠীর ঐতিহ্যবাহী সামাজিক অনুষ্ঠান বিঝু, সাংগ্রাই, বৈসু, বিষু, চাংক্রান ও বিহু উৎসব উদযাপনের জন্য পার্বত্য চট্টগ্রাম মন্ত্রণালয় ৪৫০ মেট্রিক টন গম বরাদ্দ দিয়েছে। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে গতকাল ৬ এপ্রিল ২০২৫ তারিখে এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।

এই বরাদ্দের বাজারমূল্য বর্তমান হিসাবে (প্রতি কেজি গম ৪২ টাকা ধরে) ১৮,৯০০,০০০ টাকা। এই বরাদ্দ শুধুমাত্র উপজাতীয় জনগোষ্ঠীর সামাজিক উৎসবের জন্য প্রদান করা হয়েছে, যেখানে পার্বত্য চট্টগ্রামের সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালি মুসলিম জনগণের সামাজিক উৎসবের জন্য বরাদ্দ থাকে না। এমনকি গত ২৫ মার্চ একই মন্ত্রণালয় থেকে জেলা প্রশাসক অনুকূলে তিন পার্বত্য জেলার জন্য ঈদুল ফিতরের বরাদ্দ ছিল মাত্র ১২ লাখ টাকা!

প্রাপ্ত তথ্যমতে, খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি ও বান্দরবান—এই তিন পার্বত্য জেলায় সমানভাবে ১৫০ মেট্রিক টন করে মোট ৪৫০ টন গম বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এই বরাদ্দ শুধুমাত্র চাকমা বা মারমা, ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে কিনা—সে বিষয়েও সন্দেহ পোষণ করছেন স্থানীয়রা। কারণ, এ অঞ্চলে বসবাসরত লুসাই, পাংখোয়া, চাক, বম, খুমি, মুরং, ম্রোসহ অন্যান্য ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীগুলো বরাবরই বরাদ্দ ও সুবিধার প্রশ্নে উপেক্ষিত ও অপেক্ষমাণ থেকে এসেছে।

সরকারি আদেশে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, এই বরাদ্দ “বিশেষ প্রকল্প কর্মসূচির আওতায় সামাজিক সহায়তা” হিসেবে প্রদত্ত এবং তা জরুরিভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকের তত্ত্বাবধানে বিতরণ ও ব্যবস্থাপনার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এই বরাদ্দ নিয়ে স্থানীয় বাঙালি জনগোষ্ঠীর মাঝে ব্যাপক ক্ষোভ ও অসন্তোষ তৈরি হয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, পার্বত্য অঞ্চলের উপজাতিদের সামাজিক ও ধর্মীয় উৎসবের জন্য সরকার বিলাসবহুল অনুদান বরাদ্দ দিলেও, মুসলিম কিংবা হিন্দু ধর্মাবলম্বী বাঙালি জনগণের উৎসবগুলোতে অনুদান বরাদ্দ হয় অত্যন্ত সামান্য।

একই মন্ত্রণালয়ের অধীনে বরাদ্দ প্রাপ্ত পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড, আঞ্চলিক পরিষদ এবং জেলা পরিষদের বিগত কয়েক বছরের বরাদ্দ পরিসংখ্যানেও দেখা যায়, বৌদ্ধ ধর্মের ধর্মীয় স্থাপনা ও উৎসবের জন্য বড় অঙ্কের অনুদান বরাদ্দ হয়েছে, যেখানে ইসলাম ও হিন্দু ধর্মের জন্য সে তুলনায় নামমাত্র বরাদ্দই দেখা গেছে।

গত ২৫ মার্চ ২০২৫ তারিখে পার্বত্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব নাহিদ ইসলাম স্বাক্ষরিত একটি আপদকালীন অনুদান তালিকা প্রকাশিত হয়। ওই তালিকায় দেখা যায়, তিন পার্বত্য জেলা পরিষদের অনুকূলে বরাদ্দকৃত প্রায় ৪ কোটি টাকার ত্রাণ ও সাহায্য অনুদান মূলত চাকমা জনগোষ্ঠীর দখলে গেছে। বাঙালি, মারমা ও ত্রিপুরা সামান্য কিছু পেলেও অন্যান্য উপজাতিদের মধ্যে এই বরাদ্দ কার্যত ছিল অনুপস্থিত।

এই ঘটনায় সোশ্যাল মিডিয়াসহ স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। নাগরিক সমাজ ও স্থানীয় সংগঠনগুলো তখন থেকেই বরাদ্দের স্বচ্ছতা ও ন্যায্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে আসছে।

অসাম্যই কি দীর্ঘমেয়াদে সামাজিক উত্তেজনার কারণ?

স্থানীয় পর্যবেক্ষকদের মতে, দীর্ঘদিন ধরে চলমান এ ধরনের পক্ষপাতমূলক বরাদ্দই পার্বত্য অঞ্চলে সাম্প্রদায়িক দৃষ্টি ভঙ্গি গড়ে তুলছে এবং সামাজিক সংহতির অবক্ষয় ঘটাচ্ছে। সরকার যদি অবিলম্বে ন্যায্য ও সুষম বরাদ্দ নীতিমালা প্রণয়ন না করে, তাহলে এই অঞ্চলে সামাজিক ও সাম্প্রদায়িক সম্পর্ক আরও বিপন্ন হতে পারে।

সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা এখন পর্যন্ত এই বিষয় নিয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানায়নি। তবে পার্বত্যবাসীর দাবি, ঈদ, পূজা, বৌদ্ধ পূর্নিমা ও বাঙালির নববর্ষ, বৈসাবি—সব উৎসবই যেন সমান গুরুত্ব পায় এবং কারো প্রতি বাড়তি পক্ষপাত যেন না থাকে।

 

আগের পোস্টক্লাস-পরীক্ষা বর্জন ও ৮ দফা দাবিতে কর্মসূচির ঘোষণা রাঙ্গামাটি এটিআই শিক্ষার্থীদের।
পরের পোস্টসাংগ্রাই উৎসবে মারমা শিল্পীর সম্মানী আত্মসাতের অভিযোগ: বিএনপি-সমর্থিত  মাসসের বিরুদ্ধে।

রিপ্লাই দিন

আপনার কমেন্ট লিখুন
আপনার নাম লিখুন