লামার দুর্গম লেমুপালংয়ে ৯ বাঙালি অপহরণ।

0

হিলনিউজবিডি | প্রতিনিধি

বান্দরবান জেলার লামা উপজেলার সরই ইউনিয়নের দুর্গম লেমুপালং এলাকায় নতুন করে সন্ত্রাসী তৎপরতার শিকার হয়েছে বাঙালি শ্রমিকরা। অদ্য ৮ মার্চ (মঙ্গলবার) রাত আনুমানিক ১টার সময় স্থানীয় দুইজন তামাকচাষী এবং তাদের সাথে থাকা ৭ জন শ্রমিককে অপহরণ করে নিয়ে গেছে উপজাতি সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, লুলাইন এলাকার একটি তামাক খেতে কাজ শেষে শ্রমিকরা খামারঘরে ঘুমিয়ে ছিলেন। দুর্গম ও নেটওয়ার্কবিহীন এলাকায় ঘটনাটি ঘটায় তা সকাল নাগাদ স্থানীয়দের কাছে প্রকাশ পায়। অপহরণের ঘটনায় পুরো এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে। এই অপহরণ চক্র মুক্তিপণের দাবিতে বারবার এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়ে আসছে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।

এই ঘটনা মোটেও বিচ্ছিন্ন নয়। লেমুপালং এবং আশপাশের দুর্গম এলাকাগুলোতে গত কয়েক বছর ধরেই নিয়মিতভাবে এ ধরনের অপহরণের ঘটনা ঘটছে। বিশেষ করে সরই, রুপসীপাড়া, আজিজনগর ইউনিয়নে কৃষি ও তামাক খাতে নিয়োজিত শ্রমিকদের লক্ষ্য করে বারবার অপহরণের মতো ঘটনা ঘটে চলেছে।

২০২৩ সালের নভেম্বরে একই ইউনিয়নের ছিকনছড়ি এলাকা থেকে ৬ জন কৃষিশ্রমিককে অপহরণ করে একই ধরনের মুক্তিপণ আদায় করেছিল এক উপজাতি সন্ত্রাসী গ্রুপ। এছাড়াও ২০২২ সালের জুলাই মাসে ম্রো সম্প্রদায়ের এক বৃদ্ধা ও তার নাতিকে অপহরণ করে গভীর জঙ্গলে আটকে রাখা হয় প্রায় এক সপ্তাহ, পরে স্থানীয়দের সহযোগিতায় তারা মুক্তি পান।

২০২৫ সালের শুরুতেও অপহরণের ভয়াবহ চিত্র লক্ষ্য করা যায়। সরই ইউনিয়নে ১৪ জানুয়ারি ও ১ ফেব্রুয়ারি দুই দফায় ১৪ জনকে এবং ১৬ ফেব্রুয়ারি ফাসিয়াখালী ইউপি এলাকার একটি রাবার বাগান থেকে একযোগে ২৫ জন শ্রমিককে অপহরণ করা হয়। প্রত্যেক ক্ষেত্রেই অপহরণকারীরা মুক্তিপণের বিনিময়ে অপহৃতদের ফেরত দেয়, যা এই অপরাধ প্রবণতাকে উৎসাহিত করছে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।

স্থানীয়দের বক্তব্য, “যতবারই কেউ অপহৃত হয়েছে, ততবারই মুক্তিপণ দিয়েই তাদের ফিরিয়ে আনতে হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কার্যত দৃশ্যমান কোনো প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারেনি। এরফলে সন্ত্রাসীরা লাগামহীনভাবে সাধারণ জনগণকে জিম্মি করে ফেলেছে।”

এছাড়াও অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় প্রশাসনের নির্লিপ্ততা এবং সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কার্যকর অভিযান না থাকার কারণে এসব অপহরণকারী চক্র দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে যেসব এলাকা প্রশাসনিকভাবে “অত্যন্ত দুর্গম” হিসেবে পরিচিত, সেখানে নজরদারির অভাব প্রকট।

অপহৃত ৯ জনের বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হলে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী তৎপরতা শুরু করেছে বলে জানান লামা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তোফাজ্জল হোসন। তিনি বলেন, সেনাবাহিনী ও পুলিশের একটি বিশেষ দল লেমুপালংয়ের গভীর জঙ্গলের দিকে অভিযানের প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে ঠিক কত দ্রুত অপহৃতদের মুক্ত করা যাবে তা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে।

স্থানীয় মানবাধিকার সংগঠনগুলোর দাবি, “এই ধরনের পরিকল্পিত অপহরণ ও মুক্তিপণ বাণিজ্যকে সন্ত্রাসবাদ (terrorism) হিসেবেই বিবেচনা করা উচিত এবং তার ভিত্তিতে রাষ্ট্রকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।”

বারবারের অপহরণ এবং দুর্বল প্রতিক্রিয়া আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সক্ষমতা ও সদিচ্ছা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। দুর্গম পার্বত্য অঞ্চলে সাধারণ কৃষক ও শ্রমজীবীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে না পারলে এই অঞ্চল ধীরে ধীরে চরম সন্ত্রাস ও অনিরাপত্তার ঘাঁটিতে পরিণত হবে।

 

 

আগের পোস্টসাংগ্রাই উৎসবে মারমা শিল্পীর সম্মানী আত্মসাতের অভিযোগ: বিএনপি-সমর্থিত  মাসসের বিরুদ্ধে।
পরের পোস্টরোহিঙ্গা ফিরিয়ে নিতে রাজি হওয়ায় মায়ানমার সরকারকে স্বাগত জানান সার্বভৌমত্ব সুরক্ষা পরিষদ।

রিপ্লাই দিন

আপনার কমেন্ট লিখুন
আপনার নাম লিখুন