খাগড়াছড়িতে চবি’র ৫ পাহাড়ি শিক্ষার্থী ইউপিডিএফ কর্তৃক অপহরণের অভিযোগ।

0

নিজস্ব প্রতিবেদক | খাগড়াছড়ি

খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার গিরিফুল এলাকায় আজ বুধবার (১৬ এপ্রিল ২০২৫) সকাল আনুমানিক ৬টা ৩০ মিনিটে পার্বত্য চুক্তিবিরোধী সংগঠন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ-প্রসীত) এর সশস্ত্র গ্রুপ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি’র) ৫ জন পাহাড়ি শিক্ষার্থীকে অস্ত্রের মুখে অপহরণ করেছে। অপহৃতরা বিঝু উৎসব শেষে ক্যাম্পাসে ফেরার পথে কুকিছড়া এলাকা থেকে টমটমযোগে খাগড়াছড়ি সদর আসার পথে গিরিফুল নামক স্থান থেকে অপহরণের শিকার হয়।

অপহৃত শিক্ষার্থীরা বিঝু উৎসব উপলক্ষে বন্ধুদের সাথে রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়িতে বেড়াতে যায়। বিঝু শেষে গতকাল ১৫ এপ্রিল ২০২৫ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ফেরার উদ্দেশ্যে বাঘাইছড়ি থেকে দিঘীনালা হয়ে খাগড়াছড়ি সদরে চলে আসে। ঐদিন চট্টগ্রামগামী বাসের টিকিট না পাওয়ার কারণে তারা পাঁচজন খাগড়াছড়ি শহর থেকে কিছু দূরে কুকিছড়া নামক জায়গায় এক আত্মীয়ের বাড়িতে রাত্রি যাপন করে।

অপহৃত শিক্ষার্থীরা হলেন—চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী অলড্রিন ত্রিপুরা ও মৈত্রীময় চাকমা, নাট্যকলা বিভাগের দিব্যি চাকমা, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের রিশন চাকমা এবং প্রাণীবিদ্যা বিভাগের লংঙি স্রো। এদের সকলেই ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রছাত্রী। তাদের সঙ্গে থাকা টমটম চালককেও সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা অপহরণ করেছে। জানা গেছে, অপহৃত রিশন চাকমা পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ (পিসিপি), চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার একজন সক্রিয় সদস্য।

ঘটনার পরপরই পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা এক বিবৃতিতে অপহরণের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং অপহৃতদের অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানিয়েছে। পিসিপির চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার তথ্য, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক রিবেক চাকমা এক বিবৃতিতে বলেন, “এই ঘৃণ্য অপহরণ ঘটনা শুধু মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘনই নয়, বরং এটি পাহাড়ে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। আমরা এই ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং প্রশাসনের কাছে দ্রুত উদ্ধার অভিযানের দাবি জানাচ্ছি।”

তিনি আরও বলেন, “ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনের বিজয়ের মধ্য দিয়ে যখন পার্বত্য জনজীবনে নতুন প্রত্যাশা জন্ম নিচ্ছে, তখন এমন অপহরণ ঘটনা গণচেতনার বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার শামিল।”

এদিকে বৈসাবি উৎসব শেষ হতেই এ ধরনের অপহরণের ঘটনায় এলাকায় চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর সবচেয়ে বড় সামাজিক উৎসবের আনন্দ মুহূর্তগুলো এমন সহিংসতায় বিঘ্নিত হওয়ায় স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা দেখা দিয়েছে।

তবে ৫ পাহাড়ি শিক্ষার্থী ও ১ টমটম চালক অপহরণের অভিযোগের বিষয়ে  ইউপিডিএফ-এর পক্ষ থেকে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

অপহরণের প্রায় ১২ ঘণ্টা পার হয়ে গেলেও এখনো পর্যন্ত প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো উদ্ধার অভিযান শুরু হয়নি বলে জানা গেছে। অপহৃতদের পরিবার ও সহপাঠীদের মধ্যে চরম উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে।

উল্লেখ্য যে, পার্বত্য চট্টগ্রামে আঞ্চলিক সংগঠন ইউপিডিএফ ও জেএসএস-এর মধ্যে দীর্ঘ দুই যুগের বেশি সময় ধরে আধিপত্য, চুক্তি বিরোধ, ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যকে ঘিরে সংঘাত, হত্যা, অপহরণ ও মুক্তিপণের মতো ঘটনা চলছে। ইউপিডিএফ ১৯৯৮ সালের ২৬ ডিসেম্বর ঢাকায় এক সম্মেলনের মাধ্যমে গঠিত হয়, যারা সরকার ও জেএসএস মধ্যকার পার্বত্য চুক্তির বিরোধিতা করে স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে সশস্ত্র আন্দোলন করে যাচ্ছে।

 

আগের পোস্টপাহাড়ে প্রোপাগান্ডার খেলায় কারা?
পরের পোস্টখাগড়াছড়িতে কাল বৈশাখী ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।

রিপ্লাই দিন

আপনার কমেন্ট লিখুন
আপনার নাম লিখুন