হাক্কে মুরিম্মি বুক্কো সুলোট্টে ভগবান: ভারতী দেওয়ান।

0

অনন্ত অসীম | পার্বত্য চট্টগ্রাম

বুকফাটা আর্তনাদে কাঁপছে পাহাড়—অপহৃত সন্তানের জন্য মায়ের প্রার্থনা।

পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি জনপদে যেন নেমে এসেছে এক বিষণ্ন নিস্তব্ধতা। এক মায়ের বুকফাটা আর্তনাদ আজ কাঁপিয়ে দিচ্ছে পুরো পাহাড়কে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে কান্নাজড়িত কণ্ঠে নিজের মেয়ের অপহরণের খবর দিয়ে হৃদয়বিদারক বার্তা দিয়েছেন, ভারতী দেওয়ান। তার মেয়ের নাম দিব্যি চাকমা—চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী।

তিনি তার ফেসবুক আইডি Bharati Dewan আইডি থেকে লিখেছেন, “Hakke murimmi bukko sulotte vogoban”—বাংলায় যার মর্ম হলো, “বুক ব্যথা করছে সৃষ্টি কর্তা, একটু পরে মৃত্যু হবে।”
এই বাক্যে যেন ধ্বনিত হয় একটি অসহায় মায়ের অন্তরের গুমরে ওঠা কান্না, বুকের ভেতর ছটফট করে ওঠা ভয়, এবং সন্তানের নিরাপত্তার জন্য এক প্রকার মৃত্যুকামনা।

এরপর আরেকটি স্ট্যাটাসে তিনি অশ্রুভেজা কণ্ঠে আবেদন জানান:
“খাগড়াছড়িতে আমার মেয়ে দিব্যি চাকমা তার সহপাঠী সহ বিজুতে গেলে, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ফেরার পথে খাগড়াছড়ির গিরিফুল এলাকা থেকে অপহরণ করা হয়েছে। প্লিজ কারোর মায়ের বুক খালি না করে দোষ থাকলে, অন্যায় করলে উপযুক্ত শাস্তি দিন—তবুও সন্তান হারানোর বেদনা যেন কারোর বুকে না লাগে। আমি হাত জোড় করছি ফিরিয়ে দিন আমাদের সন্তানদের।”

অপহৃত শিক্ষার্থীরা হলেন:
মৈত্রীময় চাকমা, চারুকলা বিভাগ, দিব্যি চাকমা, নাট্যকলা বিভাগ, রিশন চাকমা, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, লংঙি ম্রো, প্রাণীবিদ্যা বিভাগ ও অলড্রিন ত্রিপুরা, চারুকলা বিভাগ।

সকলেই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী এবং বিজু উৎসব শেষে খাগড়াছড়ি থেকে ক্যাম্পাসে ফেরার পথে গিরিফুল থেকে অপহরণের শিকার হন।

জেএসএস পিসিপি বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছেন, গতকাল ১৬ এপ্রিল সকালবেলা ইউপিডিএফ (প্রসীত সশস্ত্র গ্রুপ) কর্তৃক পার্বত্য চুক্তি-সমর্থিত জেএসএস ও তাদের সহযোগী সংগঠন পিসিপি এর পাঁচ সদস্যকে অপহরণ করা হয়। তাদের গন্তব্য ছিল বিশ্ববিদ্যালয়, কিন্তু গিরিফুল পাহাড়ি পথরেখা হয়ে উঠল জীবনের অনিশ্চিত বাঁক।

অপহৃত শিক্ষার্থীদের পরিবারের সদস্যরা দারুণ আতঙ্কে দিন পার করছেন। একজন আত্মীয় জানান,
“বাচ্চারা কেমন আছে জানি না। ফোনে কথা বলার সুযোগও নেই। আমরা শুধু চাই, তারা নিরাপদে ফিরে আসুক। রাজনীতি থাকুক রাজনীতির জায়গায়—শিক্ষার্থীদের নিয়ে এমন নির্মম খেলা বন্ধ হোক।”

স্থানীয় এক সূত্র বলছে, সংবাদ প্রকাশ ও সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হওয়ায় ইউপিডিএফ এখন সমালোচনার মুখে পড়ে কিছুটা নরম হয়েছে। ইতিমধ্যেই অপহৃতদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছে এবং আজ ১৭ এপ্রিল দুপুর ২টায় পরিবারের সদস্যদের ডেকে পাঠিয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, মুক্তিপণ আদায় করে অপহৃতদের মুক্তি দেওয়া হতে পারে।

এই ঘটনার পর পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর মধ্যে আবারও উদ্বেগ ও অনিরাপত্তার বাতাবরণ তৈরি হয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন,
“যে কোনো রাজনৈতিক মতবিরোধ থাকুক না কেন, শিক্ষার্থী অপহরণ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এটি শুধু মানবাধিকারের লঙ্ঘন নয়, এটি পুরো পার্বত্য জনপদের শান্তিপ্রচেষ্টায় আঘাত হানে।”

ভারতী দেওয়ান-এর করুণ আর্তি, সামাজিক প্রতিক্রিয়া এবং শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তাহীনতা আমাদের নতুন করে ভাবাচ্ছে—পাহাড় কি আদৌ শান্তির পথে এগোচ্ছে, না কি রাজনৈতিক সংঘাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে বলি দেওয়া হচ্ছে?

এই একটি প্রশ্ন থেকেই যায়— “একটি মায়ের বুক খালি করে কী কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য পূরণ হয়। পার্বত্য চট্টগ্রামে জেএসএস ও ইউপিডিএফ কত নিরীহ বাঙালি ও পাহাড়ির জীবন কেড়ে নিয়েছে তার হিসাব কী আছে? জেএসএস ও ইউপিডিএফ সহযোগী অঙ্গসংগঠন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) পাহাড়ে আতঙ্ক হিসেবে কাজ করে। এখন তাদের অপহরণ নিয়ে তাদের মায়েদের যেমন অবস্থা তেমনি অন্যদের বেলায়ও একই অবস্থা হয়। সুতরাং এটি অনুধাবন করতে হবে।”

আগের পোস্টখাগড়াছড়িতে কাল বৈশাখী ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।
পরের পোস্টউগ্রবাদীদের হাতে জিম্মি শিক্ষার্থীদের মুক্তির দাবি জানান সার্বভৌমত্ব সুরক্ষা পরিষদ

রিপ্লাই দিন

আপনার কমেন্ট লিখুন
আপনার নাম লিখুন