মারমা তরুণী ধর্ষণ ঘটনায় স্বজাতিকে আড়াল, বাঙালিদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার।

0

নিজস্ব প্রতিনিধি | হিলনিউজবিডি

রাঙামাটির কাউখালী উপজেলায় গত ১৬ এপ্রিল একটি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে, যা নিয়ে এলাকায় তীব্র উত্তেজনা ও বিতর্ক চলছে। অভিযোগ উঠেছে, এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে একটি চক্র রাজনৈতিক ও সাম্প্রদায়িক উদ্দেশ্যে বাঙালি সম্প্রদায়ের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার চেষ্টা করছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কথিত ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্তদের মধ্যে মোঃ ফাহিম নামে এক বাঙালি যুবকের পাশাপাশি রিমন চাকমা নামে এক চাকমা যুবকও জড়িত ছিলেন। তবে স্থানীয় মিডিয়া ও ইউপিডিএফের চাপে শুধু ফাহিমের নাম উল্লেখ করে তাকে এককভাবে অপরাধী হিসেবে উপস্থাপন করা হচ্ছে, যা বাঙালি সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অংশ বলে অভিযোগ উঠেছে।

কথিত ধর্ষিত তরুণী (২৩) কাউখালীর কলমপতি ইউনিয়নের বড়ঢুলু পাড়ার বাসিন্দা এবং স্থানীয় একটি কলেজের শিক্ষার্থী। তিনি পোয়াপাড়া ১ নং ওয়ার্ডের বর্তমান মেম্বার আনোয়ার হোসেনের ভাড়াটিয়া। অভিযোগ অনুযায়ী, আনোয়ারের ছেলে মোঃ ফাহিম এবং রিমন চাকমা এই ঘটনায় জড়িত। মামলার সূত্রে জানা গেছে, ফাহিম গত ২৫ মার্চ থেকে ৩ এপ্রিল পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে তরুণীকে ধর্ষণ করেছে এবং সর্বশেষ ১৬ এপ্রিল রাতে জোরপূর্বক ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। তরুণী ১৭ এপ্রিল থানায় অভিযোগ দায়ের করেন।

স্থানীয়দের অভিযোগ, এই ঘটনায় ফাহিমের পাশাপাশি রিমন চাকমাও জড়িত থাকলেও ইউপিডিএফ ও তাদের সহযোগী সংগঠনগুলো শুধু ফাহিমকে অভিযুক্ত করে বাঙালি সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে বিদ্বেষমূলক প্রচারণা চালাচ্ছে। তারা ফাহিমকে “সেটেলার বাঙালি” হিসেবে উল্লেখ করে ঘটনাটিকে “মারমা তরুণী ধর্ষণ” হিসেবে প্রচার করছে। এমনকি অভিযোগে রিমন চাকমার নাম থাকলেও তার নাম বাদ দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে বলে অভিযোগ। মিডিয়া ও ইউপিডিএফ সহযোগী অঙ্গসংগঠনের বয়ানে রিমন চাকমার নাম নেই!

ছবি: কাউখালী সদরে অনুষ্ঠিত ইউপিডিএফ কর্মসূচী

– ২৫ মার্চ থেকে ৩ এপ্রিল পর্যন্ত ধর্ষণের ঘটনা ঘটলেও তরুণী কেন তখন অভিযোগ করেননি?
– মামলায় গণধর্ষণের কথা উল্লেখ না থাকলেও ইউপিডিএফ দাবি করছে তরুণীকে তুলে নিয়ে গণধর্ষণ করা হয়েছে। এই দাবির সত্যতা কী?
– স্থানীয়দের অভিযোগ, তরুণীকে জোরপূর্বক মিথ্যা জবানবন্দি দিতে বাধ্য করা হচ্ছে। এর পেছনে কারা জড়িত?

ইউপিডিএফের ভূমিকা ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য—
ইউপিডিএফ ও তাদের সহযোগী সংগঠন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে বাঙালি বিরোধী প্রচারণা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ। গত ১৯ এপ্রিল কাউখালী সদরে তারা “সেটেলার বাঙালি ধর্ষক ফাহিমের বিচার” দাবি করে মিছিল করলেও মিছিলে “পাহাড় থেকে সেনা হটাও” ও “সেনা শাসন বন্ধ করো” স্লোগান দেওয়া হয়, যা ধর্ষণের ঘটনার সঙ্গে সম্পর্কহীন। এতে প্রশ্ন উঠেছে, ইউপিডিএফ কি প্রকৃত অপরাধীর বিচার চায়, নাকি এই ঘটনাকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করছে?

স্থানীয় মারমা জনগোষ্ঠীকে উস্কে দিয়ে বাঙালি বিদ্বেষ কর্মসূচীতে অংশ গ্রহণ করার ইউপিডিএফ

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ইউপিডিএফ স্থানীয় কিছু সাংবাদিককে অর্থ দিয়ে মিডিয়া কাভারেজ করিয়েছে, যাতে বাঙালিদের বিরুদ্ধে নেতিবাচক প্রচারণা চালানো যায়। পাহাড়ের বিভিন্ন জায়গা কর্মসূচী পালন করছে। এছাড়া, খাগড়াছড়িতে ৫ শিক্ষার্থী অপহরণের ঘটনাকে ধামাচাপা দিতে এই ধর্ষণ ঘটনাকে ইস্যু করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দা হোসেন বলেন, মারমা সম্প্রদায়কে বাঙালিদের বিরুদ্ধে উসকে দিচ্ছে ইউপিডিএফ। ইউপিডিএফ-এর পক্ষ থেকে অর্থ গ্রহণ করে স্থানীয় সাংবাদিকদের একটি অংশ বাঙালিদের বিরুদ্ধে তথ্যসন্ত্রাস চালাচ্ছে। পাহাড়ে চাকমা, মারমা ও অন্যান্য স্বজাতি উপজাতিদের দ্বারা ধর্ষণের ঘটনা ঘটলে তা ধামাচাপা দেওয়া হয়। তখন হলুদ সাংবাদিকদের নীরব থাকতে দেখা যায়। অথচ এই কথিত ধর্ষণ ইস্যুতে যেভাবে বাঙালিদের ধর্ষক হিসেবে অভিযুক্ত করে দেশ-বিদেশে পার্বত্য বাঙালিদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করা হচ্ছে—তা অত্যন্ত দুঃখজনক, নিন্দনীয় এবং রাজনৈতিক ও ব্যক্তি স্বার্থপ্রসূত বলেই প্রতীয়মান হয়।

স্থানীয়রা বলছেন, ফাহিমের পিতা আনোয়ার মেম্বার আওয়ামী লীগ নেতা হওয়ায় একটি প্রেম সংক্রান্ত বিষয়কে ধর্ষণের ঘটনা হিসেবে উপস্থাপন করে ফাহিমকে এককভাবে অপরাধী বানানে গিয়ে সমগ্র বাঙালিদের ক্ষতিসাধন করছে। তারা দাবি করছেন, প্রকৃত অপরাধী যে-ই হোক, জাত-ধর্ম নির্বিশেষে সবার বিচার হওয়া উচিত।

ধর্ষণ একটি জঘন্য অপরাধ, এবং এর বিচারে জাত-ধর্ম বা রাজনীতির বিবেচনা করা উচিত নয়। কাউখালীর এই ঘটনায় প্রকৃত অপরাধীদের বিচার নিশ্চিত করতে হবে। একইসঙ্গে, এই ঘটনাকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করে সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির প্রচেষ্টা বন্ধ করতে হবে। পাহাড়ি-বাঙালি সবাই মিলে শান্তি ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য ঐক্যবদ্ধ হওয়া এখন সময়ের দাবি।

তথ্যসূত্র: স্থানীয় সূত্র, মামলার নথি, এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য।

আগের পোস্টঅপহৃত শিক্ষার্থীদের মুক্তিতে জেএসএসের প্রতি ইউপিডিএফের শর্ত।
পরের পোস্টনাগরিকদের পার্বত্য চট্টগ্রাম ভ্রমণ না করার পরামর্শ মার্কিন দূতাবাসের।

রিপ্লাই দিন

আপনার কমেন্ট লিখুন
আপনার নাম লিখুন