ইয়েন ইয়েন মানবতার ফেরিওয়ালা না স্বার্থান্বেষী চরিত্র?

0

হান্নান সরকার 

পার্বত্য চট্টগ্রামে সাম্প্রতিক সময়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ পাহাড়ি শিক্ষার্থীর অপহরণ এবং ইউপিডিএফ (প্রসীত গ্রুপ)-এর বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগের প্রেক্ষাপটে এক চরম বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন তথাকথিত চাকমা রানী ইয়েন ইয়েন। বরাবরই ইস্যুভিত্তিক মানবাধিকারের “ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর” হিসেবে আন্তর্জাতিক মহলে নিজেকে তুলে ধরার প্রবণতা লক্ষ করা গেলেও, এই ন্যক্কারজনক ও অমানবিক ঘটনায় তার সম্পূর্ণ নীরবতা বিস্ময়কর এবং সন্দেহজনক। অথচ ফ্রান্স দূতাবাসের অতিথি হয়ে মানবতা আর অধিকার রক্ষার মুখোশে চাকচিক্যপূর্ণ কূটনৈতিক প্রচারণায় অংশগ্রহণ করতেও তিনি পিছপা হননি।

এখানে প্রশ্ন উঠছে—এই মানবতা কি কেবল তখনই জাগ্রত হয়, যখন অপরাধে অভিযুক্ত হয় সেনাবাহিনী বা বাঙালি জনগোষ্ঠী? কেন যখন পাহাড়ের মধ্যেই কোনো সশস্ত্র সংগঠন সন্ত্রাস চালায়, তখন ইয়েন ইয়েন মুখে কুলুপ এঁটে বসে থাকেন? কেন এই ‘সিলেক্টিভ হিউম্যানিজম’ (নির্বাচিত মানবতা)? পাঁচ শিক্ষার্থী এবং এক নিরীহ টমটম চালক অপহরণ হওয়ার পর যখন সমগ্র পার্বত্য চট্টগ্রাম উত্তাল, ছাত্রসমাজ রাজপথে, তখন তার নীরবতা একধরনের পলায়নপরতা নয় কি?

চাকমা সার্কেল চিফ ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায়ের স্ত্রী পরিচয়ে, ইয়েন ইয়েন নিজেকে “রানী” বা “রানী মা” হিসাবে পরিচয় দিয়ে থাকেন। কিন্তু এক্ষেত্রে তার ভূমিকা যেন শুধু প্রটোকলভিত্তিক। এ ধরনের সংকটকালে একজন সমাজ নেতৃত্বের ভূমিকায় তার প্রকাশ্যে উচ্চারণ থাকা উচিত ছিলো। অথচ, তিনি এখনো ফ্রান্স দূতাবাসে চাকমা ডায়াসপোরা নিয়ে ব্যস্ত। রোমাঞ্চকর হলেও সত্য, যেখানে পাহাড়ের পাঁচজন পাহাড়ি শিক্ষার্থী নিখোঁজ, সেখানে ইয়েন ইয়েন টুইটার বা ফেসবুকে একটি বাক্যও উচ্চারণ করেননি। তার এই দ্বৈতনীতি (double standard) তার ভূমিকার প্রকৃত রূপ তুলে ধরেছে।

তাকে মানবাধিকার রক্ষায় আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে যেভাবে তুলে ধরা হচ্ছে, তা বাস্তবতার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। কারণ তিনি কখনোই ইউপিডিএফ বা তাদের সশস্ত্র তৎপরতার বিরুদ্ধে মুখ খোলেননি। বরং নিঃশব্দে কিংবা কৌশলে পাহাড়ে বিরাজমান বিচ্ছিন্নতাবাদী নেটওয়ার্কের দোসর বলেই তার অবস্থান সন্দেহজনক হয়ে উঠেছে।

চাকমা সার্কেল চিফের একজন ব্যারিস্টার স্বামী হিসেবে দেবাশীষ রায়ের নৈতিক দায়িত্ব ছিলো, তার ঘরোয়া রাজনৈতিক সংযোগ এবং স্ত্রীর অবস্থান নিয়ে পরিষ্কার বার্তা প্রদান করা। কিন্তু এখানেও একটি পরিস্কার নীরবতা দেখা যাচ্ছে। এই নীরবতা কি কৌশলগত? নাকি এই দম্পতির অবস্থানও বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীর প্রতি সহানুভূতিশীল?

ইয়েন ইয়েন যে কেবল ইস্যুভিত্তিক, জাতি-কেন্দ্রিক এবং স্বার্থান্বেষী ‘মানবতার ফেরিওয়ালা’—তা বারবার প্রমাণিত হয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে একবার কোনো পাহাড়ি নিরাপত্তা বাহিনীর তল্লাশিতে পড়লে বা কাউকে পাহাড়ে আটক করা হলে ‘মানবাধিকারের লঙ্ঘন’ বলে চিৎকার করতে দেখা যায় তাকে। কিন্তু এই অপহরণ—যেখানে তারই জাতির ৫ জন শিক্ষার্থী নিখোঁজ—সেখানে তার নিশ্চুপ থাকা প্রমাণ করে, মানবতার প্রতীক নয়, বরং তিনি এক পক্ষপাতদুষ্ট চরিত্র।

পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণ, বিশেষত শিক্ষিত ছাত্রসমাজ আজ এসব দ্বিচারিতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে। তারা বোঝে, যে নেতৃত্ব পক্ষপাতদুষ্ট, যে মানবতা দলীয় ও জাতিভিত্তিক, তা আসলে মানবতার নামে ভণ্ডামি ছাড়া কিছু নয়। ইউপিডিএফ-এর সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যেমন সবাই একাট্টা, তেমনি ইয়েন ইয়েন-এর মত লোকদেখানো অধিকারকর্মীদের মুখোশও আজ খুলে ফেলার সময় এসেছে।

সুতরাং, ইয়েন ইয়েন যদি সত্যিকার অর্থে মানবতার পক্ষে থাকেন, তবে তার উচিত অবিলম্বে অপহৃত শিক্ষার্থীদের মুক্তির দাবি তোলা, ইউপিডিএফ-এর সন্ত্রাসের নিন্দা জানানো এবং জাতিগত পক্ষপাতদুষ্টতা পরিহার করে পাহাড়ে সর্বজনীন শান্তি প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে আসা। না হলে, ইতিহাস তাকে ‘অসত্যের পৃষ্ঠপোষক’ এবং ‘স্বার্থান্বেষী রাণী’ হিসেবেই চিহ্নিত করবে।

পার্বত্য চট্টগ্রাম আর কাউকে আদর্শের মুখোশ পরে হিংসার রাজনীতি করতে দেবে না। সময় এসেছে সত্যকে বলার, পক্ষপাতের মুখোশ খোলার, এবং শান্তির জন্য নিরপেক্ষ নেতৃত্ব খোঁজার। ইয়েন ইয়েন যদি সত্যিকার ‘রাণী’ হতে চান, তবে এখনই সময় রাজনীতি নয়, মানবতার পক্ষে দাঁড়ানোর।

আগের পোস্টআলীকদম সেনা জোন কর্তৃক প্রায় তিন লাখ টাকার মাসিক অনুদান বিতরণ।
পরের পোস্টবান্দরবানের ১০ কিমি ভেতরে আরাকান আর্মির ইউনিফর্মে জলকেলি উৎসব।

রিপ্লাই দিন

আপনার কমেন্ট লিখুন
আপনার নাম লিখুন