প্রেমের সম্পর্ক থেকে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র: বাঙালি যুবককে ফাঁসানোর গল্প।

0

কাউখালী প্রতিনিধি

রাঙামাটির কাউখালী উপজেলার কলমপতি ইউনিয়নের বড়ঢুলু পাড়ায় বসবাসকারী ২৩ বছর বয়সী এক মারমা তরুণী এবং বাঙালি যুবক মোঃ ফাহিমের মধ্যে দীর্ঘদিনের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। তাদের সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল ফাহিমদের বাসায় ভাড়া থাকার সুবাদে। ফাহিমের পিতা আনোয়ার হোসেন উপজেলার কলমপতি ইউনিয়নের পোয়াপাড়া ওয়ার্ড মেম্বার এবং আওয়ামী লীগের নেতা। কিন্তু রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর থেকে আনোয়ারের রাজনৈতিক অবস্থান দুর্বল হয়ে পড়ে, যা তার পরিবারের উপর প্রভাব ফেলে।

এই প্রেমের সম্পর্ক মেনে নিতে পারেনি এলাকার কিছু রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ। স্থানীয় সূত্র জানায়, ফাহিম ও মারমা তরুণীর সম্পর্ককে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার জাল বোনা হয়। গত ১৭ এপ্রিল রাতে প্রতিপক্ষ গোষ্ঠী পরিকল্পিতভাবে তরুণী ও ফাহিমকে আটকের চেষ্টা করে। ফাহিম তার বন্ধু রিমন চাকমার সঙ্গে পালিয়ে যায়, কিন্তু কতিপয় বাঙালি তরুণীকে চাপে ফেলে মারমা সম্প্রদায়, তার পরিবার এবং ইউপিডিএফের কাছে মিথ্যা তথ্য ছড়ানো হয়। এরপর তরুণীকে ভয়ভীতি দেখিয়ে ফাহিম ও রিমনের বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা দায়ের করানো হয়। অভিযোগটি পরিকল্পিতভাবে বাঙালি যুবক ফাহিমের বিরুদ্ধে “মারমা তরুণী ধর্ষণ” হিসেবে প্রচার করা হয়।

স্থানীয় বাসিন্দা মোঃ হক সাব বলেন, “ছেলে-মেয়ের মধ্যে প্রেম ছিল, তাদের মধ্যে যা হয়েছে তা সম্মতিক্রমে। এটাকে ধর্ষণ বলে প্রচার করা রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ছাড়া আর কিছুই নয়।” তিনি আরও বলেন, এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সমগ্র পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙালিদের “ধর্ষক” হিসেবে চিত্রিত করা হচ্ছে, যা অত্যন্ত নিন্দনীয়।

ইউপিডিএফ ও তাদের সহযোগী সংগঠনগুলো এই ঘটনাকে বাঙালি-বিরোধী প্রচারণার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। তারা ফাহিমকে “সেটেলার বাঙালি” হিসেবে উল্লেখ করে এবং রিমন চাকমার নাম বাদ দিয়ে শুধু ফাহিমকে অপরাধী হিসেবে উপস্থাপন করছে। স্থানীয় কিছু অতিউৎসাহী সাংবাদিক অর্থের বিনিময়ে এই প্রচারণায় অংশ নিচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। ১৯ এপ্রিল কাউখালী সদরে ইউপিডিএফের মিছিলে ধর্ষণের বিষয় ছাপিয়ে “সেনা হটাও” স্লোগান দেওয়া হয়, যা ঘটনার রাজনৈতিক উদ্দেশ্য স্পষ্ট করে। ২০ এপ্রিল পার্বত্য চট্টগ্রামসহ ঢাকা-চট্টগ্রাম এই নিয়ে বাঙালিকে ধর্ষক বানিয়ে বিক্ষোভ করেছে উপজাতি সন্ত্রাসী সংগঠনগুলো। আজ ২১ এপ্রিল খাগড়াছড়িতে এই নিয়ে কর্মসূচী ঘোষণা করা হয়েছে!

মামলার তথ্যে বলা হয়, ২৫ মার্চ থেকে ৩ এপ্রিল পর্যন্ত ধর্ষণের ঘটনা ঘটলেও তরুণী তখন কোনো অভিযোগ করেননি। ১৬ এপ্রিলের ঘটনাকে “জোরপূর্বক ধর্ষণ” হিসেবে উপস্থাপন করা হলেও স্থানীয়রা দাবি করছেন, তরুণীকে মিথ্যা জবানবন্দি দিতে বাধ্য করা হয়েছে। পুলিশ ফাহিমের পিতা-মাতার উপর চাপ সৃষ্টি করে গতকাল ১৯ এপ্রিল তাকে হাজির করার জন্য তুলে নিয়ে গেছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।

স্থানীয় বাসিন্দা হোসেন বলেন, “ইউপিডিএফ মারমা সম্প্রদায়কে বাঙালিদের বিরুদ্ধে উসকে দিচ্ছে। পাহাড়ে উপজাতি সম্প্রদায়ের ধর্ষণের ঘটনা ধামাচাপা দেওয়া হয়, কিন্তু বাঙালির সঙ্গে কথা বলা, প্রেম কিংবা বিরাহ সম্পর্কিত বিষয় বড় ইস্যু করা হয়। এটা শুধুই রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র।”

স্থানীয় এক ব্যক্তি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “ভিকটিম ধর্ষিত হয়েছেন কি না, তা এখনো নিশ্চিত নয়। মেডিকেল রিপোর্ট আসেনি। তাছাড়া একজন ২৩ বছর বয়সী তরুণী যদি স্বেচ্ছায় প্রেম ও শারীরিক সম্পর্কে জড়ায়, তবে সেটিকে কীভাবে ধর্ষণ বলা যায়? ধর্ষণের সংজ্ঞা কী?”
স্থানীয় কিছু বাঙালি ও রাজনৈতিক নেতার ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ। যদি প্রমাণ হয় যে তারা বাঙালির সামগ্রিক ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার উদ্দেশ্যে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিলেন, তবে অতিসত্বর তাদের চিহ্নিত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে এই ঘটনা একটি প্রেমের সম্পর্ককে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ও সাম্প্রদায়িক বিভেদ সৃষ্টির প্রচেষ্টা বলে মনে হচ্ছে। তবে এই ঘটনাকে ব্যবহার করে বাঙালি সম্প্রদায়ের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার প্রচেষ্টা বন্ধ করা জরুরি। পাহাড়ি-বাঙালি সকলের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় শান্তি ও ন্যায় প্রতিষ্ঠা সম্ভব।

আগের পোস্টইস্টার সানডে উপলক্ষে বান্দরবান সেনা জোনের সৌজন্যমূলক কেক বিতরণ।
পরের পোস্টমানিকছড়ি চেকপোস্ট দিয়ে সিলিন্ডারের ছদ্মবেশে কাঠ পাচার: পুলিশের হাতে ধরা।

রিপ্লাই দিন

আপনার কমেন্ট লিখুন
আপনার নাম লিখুন