খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি: একজন নারী কতটা অসহায় হলে তাকে নিজের স্বামীর বিরুদ্ধেই থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করতে হয়? এমনই একটি হৃদয়বিদারক ও বেদনাদায়ক ঘটনা ঘটেছে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলায়, যেখানে একজন ক্ষমতাবান নারী – জেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান জিরুনা ত্রিপুরা – নিজেকে রক্ষার জন্য পুলিশের দ্বারস্থ হতে বাধ্য হয়েছেন।
জানা গেছে, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জিরুনা ত্রিপুরা তাঁর স্বামী রেভিলিয়াম রোয়াজার বিরুদ্ধে খাগড়াছড়ি সদর মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি (নং ৯৮৭, তারিখ ২০ এপ্রিল ২০২৫) করেছেন। তিনি অভিযোগে উল্লেখ করেছেন, বিয়ের পর থেকে তিনি শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়ে আসছেন এবং তিনি জেলা পরিষদের দায়িত্ব গ্রহণের পর এ নির্যাতনের মাত্রা আরও বেড়ে যায়। তাঁর স্বামী অফিসিয়াল কার্যক্রমে হস্তক্ষেপ করে, গালমন্দ করে এবং হত্যার হুমকি দেয়।
জিডিতে আরও বলা হয়েছে, রেভিলিয়াম রোয়াজা প্রায়শই আত্মহত্যার ভয় দেখিয়ে স্ত্রীকে ফাঁসিয়ে দেওয়ার হুমকি দেন। জিরুনা ত্রিপুরার ভাষায়, “সে যেকোনো সময় আমাকে গুরুতর জখম কিংবা হত্যা করতে পারে অথবা নিজেই আত্মহত্যা করে আমাকে বিপদে ফেলতে পারে।”
এই ঘটনার তদন্ত করছেন এসআই ইসমাইল হোসেন। বর্তমানে বিষয়টি গুরুত্বের সাথে দেখা হচ্ছে বলে জানা গেছে।
এই ঘটনা শুধু একজন নারীর ব্যক্তিগত দুর্ভাগ্য নয় – বরং এটি পাহাড়ে নারী নিরাপত্তার সার্বিক বাস্তবতা ও নৈরাজ্যের প্রতিচ্ছবি। যে সমাজে একজন নারী জনপ্রতিনিধি, একজন জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পর্যন্ত নিজের পরিবারে নিরাপদ নন, সেখানে একজন সাধারণ উপজাতি নারী কতটা নিরাপদ?
এখানে একটি প্রশ্ন উঠে আসে – উপজাতি সমাজে কিছু পুরুষের মধ্যকার উগ্রতা ও দমন-পীড়নের মনোবৃত্তি কি সভ্যতার ধারাকে ম্লান করে দিচ্ছে না? নারীর অবস্থান যখন এখনও দমনের শিকলেই বাঁধা থাকে, তখন এই পাহাড়ি জনপদে নারী স্বাধীনতা কতটা বাস্তব?
এই ঘটনার মাধ্যমে পাহাড়ে নারীর প্রতি সহিংসতা এবং পারিবারিক নির্যাতনের একটি গভীর বাস্তবতা প্রকাশ পেয়েছে। এটি শুধু একটি জিডি নয় – এটি এক অসহায় নারীর আত্মচিৎকার, এক সহিংস মানসিকতার প্রতিচ্ছবি এবং একটানা নির্যাতনের বিরুদ্ধে তার ন্যায্য প্রতিরোধ।
এই প্রশ্নটি সমাজের প্রতিটি বিবেকবান মানুষের মনে নাড়া দিক – “সভ্যতার এই যুগেও কি পাহাড়ে নারীরা এখনো পরাধীন?”