হিলনিউজবিডি ডেস্ক, ২৪ এপ্রিল ২০২৫:
গত ১৬ এপ্রিল খাগড়াছড়ি সদরের গিরিফুল এলাকা থেকে অপহৃত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ পাহাড়ি শিক্ষার্থী, যাদের মধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সদস্য রিশন চাকমা অন্যতম, তারা অবশেষে মুক্তি পেয়েছেন। নিরাপত্তা বাহিনীর কঠোর অভিযান এবং জনগণের ব্যাপক চাপের মুখে অপহরণকারীরা কয়েক দফায় শিক্ষার্থীদের মুক্তি দিতে বাধ্য হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে প্রসীত বিকাশ খীসার নেতৃত্বাধীন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)-এর বিরুদ্ধে। আজ বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়ে মুক্তি পাওয়ার বিষয়টি জানায় (পিসিপি)।
মুক্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা হলেন: রিশন চাকমা (আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষ), অলড্রিন ত্রিপুরা (চারুকলা ইনস্টিটিউট, ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষ), মৈত্রীময় চাকমা (চারুকলা ইনস্টিটিউট, ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষ), দিব্যি চাকমা (নাট্যকলা বিভাগ, ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষ) এবং লংঙি স্রো (প্রাণীবিদ্যা বিভাগ, ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষ)।
গত ১৬ এপ্রিল বাঘাইছড়িতে বিঝু উৎসবে অংশ নিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ফেরার পথে টমটম ড্রাইভারসহ পাঁচ শিক্ষার্থীকে অপহরণ করা হয়। অপহরণের দিন টমটম ড্রাইভারকে ছেড়ে দেওয়া হলেও শিক্ষার্থীদের আটক রাখা হয়। এ ঘটনার পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও ছাত্র সংগঠনগুলো মুক্তির দাবিতে ব্যাপক আন্দোলন গড়ে তোলে। সংবাদমাধ্যম গুলো সংবাদ প্রকাশ করে।
সূত্রে জানা গেছে, গত ২২ এপ্রিল খাগড়াছড়ি জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে অপহৃতদের রাঙামাটির কাউখালী উপজেলার ঘাগড়া ইউনিয়নের নাকশাছড়িতে নিয়ে আসা হয়। একই দিন সন্ধ্যা ৭টায় ইউপিডিএফ নেতা উদয় চাকমার মাধ্যমে জীবতলী মইন এলাকায় দিব্যি চাকমাকে তার পিতা ধনঞ্জয় চাকমার কাছে হস্তান্তর করা হয়। বাকি শিক্ষার্থীদের কঠোর গোপনীয়তার মধ্যে বিভিন্ন এলাকা থেকে ধাপে ধাপে মুক্তি দেওয়া হয়। গতকাল, ২৩ এপ্রিল প্রকাশিত হিলনিউজবিডির সংবাদের মাধ্যমে মুক্তির বিষয়টি প্রকাশিত হয়। তবে তখন পর্যন্ত আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কিংবা অপহৃত ব্যক্তির পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য পাওয়া যায়নি, ফলে মুক্তি-সংক্রান্ত ঘটনা ঘিরে এক ধরনের রহস্যের সৃষ্টি হয়। শেষপর্যন্ত পিসিপি’র প্রেস বিজ্ঞপ্তি সেই রহস্যের অবসান ঘটে।
জানা গেছে, নিরাপত্তা বাহিনী অপহৃত শিক্ষার্থীদের উদ্ধারে দ্রুত এবং কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করে। তারা গত ২১ এপ্রিল খাগড়াছড়ির ভাইবোনছড়ায় অপহরণকারীদের একটি আস্তানা ধ্বংস করে এবং ব্যাপক অভিযান শুরু করে। এই অভিযানের চাপে ইউপিডিএফ শিক্ষার্থীদের মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। নিরাপত্তা বাহিনীর এই তৎপরতা এবং পেশাদারিত্ব সকলের প্রশংসা কুড়িয়েছে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম জন সংহতি সমিতি (জেএসএস) সহযোগী অঙ্গসংগঠন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়েছে এই অপহরণে ইউপিডিএফ-এর সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। ১৯৯৭ সালের পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির পর থেকে এই সংগঠন একাধিক অপহরণের সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে। উল্লেখযোগ্য ঘটনাগুলোর মধ্যে রয়েছে ২০০১ সালে রাঙামাটির নান্যচরে তিন বিদেশী নাগরিক অপহরণ, ২০১৩ সালে লংগুদুতে জেএসএসের ৭০ নেতা-কর্মী অপহরণ এবং একই বছর বাঘাইছড়িতে টেলিটকের পাঁচ কর্মী অপহরণ।
তবে পাঁচ শিক্ষার্থী অপহরণ নিয়ে ইউপিডিএফ সংগঠক অংগ্য মারমা ইতোমধ্যে অপহরণের সঙ্গে ইউপিডিএফ জড়িত নয় বলে জানান এবং আজ রাঙামাটি সংগঠক সচল চাকমা জানান, অপহরণ কিংবা মুক্তি দেওয়ার সঙ্গে তারা জড়িত নয়।
পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ (পিসিপি), চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার তথ্য, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক রিবেক চাকমা এই মুক্তির জন্য চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এবং সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়েছেন। পাশাপাশি, পার্বত্য চট্টগ্রামে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য ১৯৯৭ সালের পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির দ্রুত ও যথাযথ বাস্তবায়নের জন্য সময়সূচিভিত্তিক কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নের আহ্বান জানিয়েছেন।
স্থানীয়রা মনে করেন, এই ঘটনা পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি ও স্থিতিশীলতার প্রশ্নকে আবারও সামনে এনেছে। নিরাপত্তা বাহিনীর কার্যকর অভিযান এবং জনগণের ঐক্যবদ্ধ প্রতিবাদ এই সাফল্যের মূল চাবিকাঠি। পার্বত্য চট্টগ্রামে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য সন্ত্রাসী কার্যক্রমের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ অব্যাহত রাখা এখন সময়ের দাবি।
মুক্তি পাওয়া পাঁচ শিক্ষার্থী এখন কোথায় বা কীভাবে আছে তা পিসিপি প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে স্পষ্ট করেনি। শুধুমাত্র মুক্তি পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
পাঁচ শিক্ষার্থী মুক্তির বিষয়ে এখন পর্যন্ত আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে বক্তব্য পাওয়া যায়নি।