স্টাফ রিপোর্টার | হিলনিউজবিডি
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের শিক্ষার্থী দিব্যি চাকমা অপহরণমুক্ত হয়ে পরিবারের কাছে ফিরেছেন। গত ২২ এপ্রিল ইউপিডিএফ (প্রসীত গ্রুপ) তাকে মুক্তি দিয়ে পিতা ধনঞ্জয় চাকমার কাছে হস্তান্তর করে। অপহরণ ও মুক্তির এ নাটকীয় ঘটনায় পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশের সচেতন মহলে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। তার বাড়ি রাঙামাটি পার্বত্য জেলার বরকল উপজেলা।
দিব্যির মা ভারতী চাকমা ২৪ এপ্রিল বিকাল ৫:৩০ মিনিটে তার ফেসবুক আইডি “Bharati Dewan” থেকে এক আবেগঘন পোস্টে লেখেন,
“ভগবানের অশেষ কৃপা… অবশেষে আমার হাতজোড় করাটা সহ সবার প্রচেষ্টা সার্থক হয়েছে। জানিনা আমার সেই পোস্ট করাটা কতটুকু অন্যায় ছিল, যদিও অন্যায় করে থাকি আমাকে ক্ষমা করে দিবেন। আবেগের বশীভূত হয়ে কখন পোস্ট করেছি নিজেও জানিনা। যাদের সন্তানের এমন হয় তারা বুঝে কতটা যন্ত্রণা। কারো সাথে যেন এমন না হয় সেটা প্রার্থনা করি। যারা আমাদের সন্তানদের জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন তাদেরকে অনেক অনেক কৃতজ্ঞতা এবং তাদের প্রতিও যারা আমাদের সন্তানদের সুস্থভাবে ফিরিয়ে দিয়েছেন। আমাদের মেয়েকে আশীর্বাদ করবেন যেন দেশ ও জাতির কল্যাণে এক যোগ্য সন্তান হতে পারে।”
এর আগে, ১৭ এপ্রিল অপহরণের পরদিন তিনি হৃদয়বিদারক এক স্ট্যাটাসে লেখেন:
“Hakke murimmi bukko sulotte vogoban”— যার বাংলা অর্থ, “বুক ব্যথা করছে সৃষ্টি কর্তা, একটু পরে মৃত্যু হবে।”
এই শব্দগুলিতে ফুটে ওঠে এক অসহায় মায়ের অন্তরের রুদ্ধ আহাজারি ও সন্তানের নিরাপত্তাহীনতায় ক্রমবর্ধমান আতঙ্ক।
আরেকটি স্ট্যাটাসে তিনি অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে লিখেছিলেন,
“খাগড়াছড়িতে আমার মেয়ে দিব্যি চাকমা তার সহপাঠীসহ বিজুতে গেলে, ফেরার পথে খাগড়াছড়ির গিরিফুল এলাকা থেকে অপহরণ করা হয়েছে। প্লিজ কারোর মায়ের বুক খালি না করে দোষ থাকলে, অন্যায় করলে উপযুক্ত শাস্তি দিন—তবুও সন্তান হারানোর বেদনা যেন কারোর বুকে না লাগে। আমি হাত জোড় করছি, ফিরিয়ে দিন আমাদের সন্তানদের।” যদিও এই স্ট্যাটাসটি তিনি তার টাইম লাইন থেকে সরিয়ে নেন।
প্রসঙ্গত, ১৬ এপ্রিল খাগড়াছড়ির গিরিফুল এলাকা থেকে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫ শিক্ষার্থীকে অপহরণ করে। বিষয়টি বিভিন্ন মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে প্রশাসন, মানবাধিকারকর্মী এবং সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ উদ্ধারে সোচ্চার হন। এরই ধারাবাহিকতায় ২২ এপ্রিল দিব্যি চাকমাকে মুক্তি দেওয়া হয়।
এই ঘটনার মধ্য দিয়ে পার্বত্য অঞ্চলে নিরাপত্তা ও সন্ত্রাসী কার্যকলাপ নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। অনেকেই দাবি করছেন—শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।
(হিলনিউজবিডি.কম – সব খবর পাহাড়ের কথা বলে)