রাঙামাটি প্রতিনিধি
রাঙামাটির কে কে রায় সড়কে এক চলন্ত সিএনজিতে উপজাতি এক ছাত্রীকে কথিত যৌন হয়রানির অভিযোগকে কেন্দ্র করে মোঃ রাশেদ নামের এক সমতল বাঙালিকে বেধড়ক মারধর করেছে স্থানীয় একদল উপজাতি উগ্র যুবক। এই ঘটনার ভিডিও ও বিবরণ ইতোমধ্যেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
ভিডিও: https://www.facebook.com/share/v/16JpeLam2Y/
ঘটনার সূত্র অনুযায়ী, আজ সোমবার (১২ মে) সন্ধ্যা ৭টার দিকে জুম্ম জনগোষ্ঠীর এক ছাত্রী চলন্ত সিএনজিতে যৌন হয়রানির শিকার হন বলে দাবি করা হয়। স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী আঞ্চলিক সশস্ত্র সংগঠন নিয়ন্ত্রিত একাধিক সোশ্যাল মিডিয়া পেজে জানানো হয়, ছাত্রীটি নিজেকে রক্ষার জন্য সিএনজি থেকে লাফ দেন। এর পর স্থানীয়রা সিএনজি গতিরোধ করে মোঃ রাশেদকে ঘেরাও করে এবং প্রকাশ্যে মারধর শুরু করে।
জানা গেছে, মারধরের শিকার মোঃ রাশেদ চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার বাসিন্দা। ঘটনার পর তাঁর পক্ষে কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ঘটনাস্থলে প্রায় এক ঘণ্টাব্যাপী তাকে লাঠি, ঘুষি, লাথি ও বিভিন্ন আঘাতে নির্মমভাবে নির্যাতন করা হয়। পরে বিষয়টি জানাজানি হলে পুলিশের হাতে তুলে দেয়।
কিছু উপজাতি এবং তাদের মদদপুষ্ট ব্যক্তিদের দাবি উপজাতি ছাত্রীকে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে। স্থানীয়রা মনে করেন, সিএনজি হচ্ছে চলন্ত গাড়ি, তাছাড়া রাঙামাটি শহর হচ্ছে জনসমাগম এখানে ধর্ষণের চেষ্টা করার পরিবেশ কী হয়? এমন অভিযোগটি ডাহামিথ্যে হতে পারে।
এদিকে, এই ঘটনার সূত্র ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি প্রোফাইল ‘হিলোর আহভিলেচ্’ (প্রোফাইল লিংক: https://www.facebook.com/share/1EnG3kQvcU/) থেকে ইসলাম ধর্ম ও মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ আঃ)-কে কটূক্তি করে একটি পোস্ট করা হয় (পোস্ট লিংক: https://www.facebook.com/100086275647969/posts/pfbid02X9uQGeCVN7FFp4D24bzvY63FDnxcyChmNUjdJxsJs92jseMM1MKZfVn6xciwwPDNl/?app=fbl)।
স্থানীয় ধর্মপ্রাণ মুসলিমরা বলেন, “সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের ঘৃণ্য প্রয়াসে পরিকল্পিতভাবে উপজাতি সন্ত্রাসীরা ইসলাম ধর্ম ও মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ আঃ)-এর বিরুদ্ধে কটূক্তিমূলক পোস্ট ছড়িয়ে পাহাড়কে অস্থিতিশীল করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানা পাহাড়ে নতুন কোনো ঘটনা নয়; অতীতেও একাধিকবার এমন ধর্মদ্রোহী কর্মকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে।
সকালে এক ঘটনার প্রেক্ষিতে ইউপিডিএফ সমর্থিত পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির তথ্য প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক তনুময় চাকমা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানায়, সমাবেশ চলাকালে বনরূপা বাজার এলাকায় ভিডিও করাকে কেন্দ্র করে বাঙালিরা বিনা উস্কানিতে পপুলার ফার্মাসিউটিক্যাল লিমিটেড’র রাঙাামটি এরিয়া বিক্রয় প্রতিনিধি প্রান্তর চাকমা নামে এক পাহাড়ি যুবকের ওপর হামলা চালায় ও তাঁর পরনের কাপড়-চোপড় ছিঁড়ে ফেলে এবং কিল-ঘুষি দিয়ে তাঁকে মাটিতে ফেলে দেয়। এ সময় বাঙালিরা তাঁর সাথে থাকা একটি মোবাইল ও কোম্পানির মালামাল বিক্রয়ের নগদ ৪৩ হাজার টাকাসহ পকেট খরচের জন্য রাখা সকল টাকাও কেড়ে নেয় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সমাবেশ আহ্বানকারী সংগঠনের নেতারা দাবি করেন, তাদের সামনে এধরনের ঘটনা ঘটেনি এবং হামলার সঙ্গে তাদের কেউ জড়িত নয়।
অন্যদিকে, স্থানীয়দের মধ্যে ধারণা সৃষ্টি হয়েছে যে, প্রান্তর চাকমার ওপর সকালবেলা হামলার প্রতিশোধ হিসেবে বিকেলের ঘটনায় যৌন হয়রানির অভিযোগে মোঃ রাশেদকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করা হয়।
বিষয়টি নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় উঠেছে। স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখনও কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি আসেনি। তবে জনমনে উদ্বেগ বাড়ছে, বিশেষ করে ইসলাম ধর্মকে হেয় প্রতিপন্ন করে প্রকাশিত পোস্টটির কারণে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা করছেন সচেতন মহল।
ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন সাধারণ মানুষ। স্থানীয়রা দ্রুত প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ কামনা করছেন যাতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট না হয়।