পিসিপি চট্টগ্রাম সমাবেশে কাউখালী থেকে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের বাধ্যতামূলক অংশগ্রহণের অভিযোগ।

0

নিজস্ব প্রতিবেদক | হিলনিউজবিডি.ডটকম

আগামীকাল মঙ্গলবার, ২০ মে ২০২৫ খ্রি. চট্টগ্রাম মহানগরের জামালখান-চেরাগী পাহাড় মোড়ে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) (প্রসীত গ্রুপ) সমর্থিত ছাত্র সংগঠন বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি)-এর প্রতিষ্ঠার তিন যুগ পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত এক বিশাল ছাত্র সমাবেশ ও র‌্যালি। এই সমাবেশকে ঘিরে পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলায় এক ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের জোরপূর্বক ক্লাস বন্ধ করে সমাবেশে অংশ নিতে বাধ্য করার অভিযোগ উঠেছে ইউপিডিএফ-এর বিরুদ্ধে।

বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, রাঙামাটি জেলার কাউখালী উপজেলার মুবাইছড়ি, পানছড়ি, লেবারপাড়া, ফটিকছড়ি ডাবুয়া, ম্যাতিঙ্গ্যাছড়ি, তালুকদার পাড়াসহ বেশ কয়েকটি গ্রামে স্কুল ক্লাস বন্ধ করে শিক্ষার্থীদের চট্টগ্রাম অভিমুখে পাঠানো হচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, ইউপিডিএফ এই নির্দেশ মানতে বাধ্য করছে স্কুল কর্তৃপক্ষ এবং অভিভাবকদের।

স্থানীয়রা জানান, গত দুই সপ্তাহ ধরে ইউপিডিএফ এর নেতাকর্মীরা রাতের আঁধারে গ্রামে গ্রামে গিয়ে পোস্টারিং, চিকা ও হুমকি-ধামকি চালিয়ে যাচ্ছে। চট্টগ্রাম সমাবেশে বিপুল পরিমাণ অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে না পারলে জেএসএস-এর পিসিপির কাছে নিজেদের অবস্থান দুর্বল হয়ে পড়বে—এই আশঙ্কায় চলছে এই মারমুখী তৎপরতা।

ঘাগড়ার ম্যাতিঙ্গ্যাছড়ি ও ফটিকছড়ির ডাবুয়া থেকে অভিভাবকরা জানিয়েছেন, ইউপিডিএফ সদস্যরা সরাসরি বাড়িতে গিয়ে ছেলে-মেয়েদের নাম লেখাচ্ছে, এবং গাড়িতে তোলার জন্য সময় বেঁধে দিচ্ছে। পানছড়ির এক স্কুল শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ” আগামীকাল স্কুলের ক্লাস বন্ধ করতে বাধ্য হচ্ছি। না হলে আমাদের উপর বড় সমস্যা হবে। আমরা আতঙ্কে আছি।”

লেবারপাড়া ও রিফিউজি হারাঙ্গীপাড়া থেকে একই ধরণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এমনকি কিছু ক্ষেত্রে শিক্ষকদের জিম্মি করে ছাত্র-ছাত্রীদের তালিকা নিয়েছে বলে জানা গেছে। ইউপিডিএফ-এর এই অমানবিক আচরণে অভিভাবকদের মধ্যে চরম উদ্বেগ ও ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।

অভিভাবকদের আর্তনাদ: ‘আমার সন্তান পড়তে যাবে না রাজনৈতিক মঞ্চে’
কাউখালীর কয়েকজন অভিভাবক হিলনিউজবিডিকে বলেন, “আমার ছেলে অষ্টশ শ্রেণিতে পড়ে, এখন তাকে চট্টগ্রাম নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি চলছে। ও জানেও না সেখানে কী হচ্ছে! এটাই কি রাজনীতি?”
তাদের মতে, এ ধরণের রাজনৈতিক কর্মসূচীতে শিশুদের ব্যবহার মানে তাদের মানসিক ও শিক্ষাজীবনে দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতি করা। অভিভাবকদের দাবি ইউপিডিএফ বিভিন্ন কর্মসূচীতে সেনা, বাঙালি ও রাস্ট্র বিরোধী স্লোগান দেন, যা একজন কোমলমতি ছাত্রের মানসিক বিকাশে প্রভাব ফেলবে। এটি শিশু অধিকার লঙ্ঘনের জঘন্য উদাহরণ।

খাগড়াছড়ি মানিকছড়ি ও গুইমারা থেকে খবর পাওয়া গেলে, ইউপিডিএফ বিভিন্ন স্কুল, কলেজের ক্লাস বন্ধ করে চট্টগ্রাম সমাবেশে যেতে কঠোর নির্দেশ দিয়েছে৷ কেউ এই আদেশ অমান্য করলে তাকে হাঙর মাছ (কাটা আকৃতির মাছ) শরীরে ঘর্ষণ করা হবে।

গোপন তহবিল ও বাম রাজনৈতিক শক্তির সম্পৃক্ততার অভিযোগ—
বিশেষ সূত্রে জানা যায়, ইউপিডিএফ চট্টগ্রাম সমাবেশ সফল করতে বাম রাজনৈতিক নেতৃত্ব, তথাকথিত সুশীল সমাজ ও কিছু প্রভাবশালী গণমাধ্যমকর্মীদের অংশগ্রহণ ও সমর্থন নিশ্চিত করতে কোটি টাকা বরাদ্দ রেখেছে। এই অর্থ সংগ্রহ করা হয়েছে পার্বত্য এলাকার নিরীহ জনগণের কাছ থেকে জোরপূর্বক চাঁদা আদায় করে।

ইউপিডিএফ পিসিপি’র শিশু-কিশোর থেকে চাঁদাবাজি

বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডেরই ধারাবাহিকতা এবং জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্নেও বড় হুমকি।

প্রতিপক্ষ জেএসএস সমর্থিত পিসিপি একই দিনে রাঙামাটি শিল্পকলা একাডেমিতে প্রতিনিধি সম্মেলন ও কাউন্সিল আয়োজন করেছে। এতে উপস্থিত থাকবেন সাবেক সংসদ সদস্য ও জেএসএস কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি উষাতন তালুকদার। তারা জেলার জুরাইছড়ি, বিলাইছড়ি, কাপ্তাই এবং সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে ছাত্র-ছাত্রীদের অংশ নিতে গোপন প্রকাশ্যে কাজ করছে। জেলা শহরে চিকা, পোস্টারি লাগিয়েছে।

জেএসএস নেতাকর্মীদের দাবি, ইউপিডিএফ শিশু, কিশোরদের ব্যবহার করে শক্তি প্রদর্শনের অপপ্রয়াস চালাচ্ছে, যা রাজনৈতিক শিষ্টাচার বহির্ভূত।

তিন যুগের পিসিপি: শিক্ষার্থী না সন্ত্রাসী?
১৯৮৯ সালের ২০ মে গঠিত হয়েছিল বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি)। এক সময় এই সংগঠন ছাত্রদের অধিকার আদায়ে কথা বললেও সময়ের সাথে তা রূপ নিয়েছে একটি অন্ধকার অধ্যায়ে। চুক্তি পরবর্তী সময়ে বিভক্ত হয়ে একাংশ ইউপিডিএফ এর অধীনে গিয়ে বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, চাঁদাবাজি, অপহরণ ও খুনের সাথে জড়িত হয়েছে বলে বহু অভিযোগ রয়েছে।

আজকের ইউপিডিএফ-সমর্থিত পিসিপি কার্যত ‘শিশু ইউপিডিএফ’ হিসেবে পরিচিতি পাচ্ছে—যেখানে ছাত্রদের নয়, রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের কুশলী খেলোয়াড়দের উদ্দেশ্য পূরণ হচ্ছে কোমলমতি শিশুদের মঞ্চে দাঁড় করিয়ে।

চট্টগ্রাম জামালখান ও চেরাগী পাহাড়ে ২০ মে’র এই ছাত্র সমাবেশ আদৌ ছাত্রদের? নাকি এটি পাহাড়ি এলাকায় সংগঠিত একটি রাজনৈতিক সংগঠনের প্রদর্শনী মাত্র? রাষ্ট্র, প্রশাসন ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো এই ভয়াবহ পরিস্থিতি ও শিশু অধিকারের চরম লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেয় সেটাই এখন দেখার বিষয়।

সমাবেশের নামে পিসিপি’র চাঁদাবাজি
আগের পোস্টবান্দরবান জেলা ফার্নিচার সমিতির নির্বাচনে সভাপতি ফরিদুল আলম, সাধারণ সম্পাদক আবু কাশেম।
পরের পোস্টমিজোরাম সীমান্তে গোলাবারুদ জব্দ: পার্বত্য চট্টগ্রামে সন্ত্রাসীদের জন্য পাচারের ষড়যন্ত্র ব্যর্থ।

রিপ্লাই দিন

আপনার কমেন্ট লিখুন
আপনার নাম লিখুন