বান্দরবানে বৌদ্ধ মূর্তি ভাংচুরের অভিযোগ: ম্যারাইনতং পাহাড়ে উত্তেজনা।

0

নিজস্ব প্রতিনিধি

বান্দরবানের আলীকদম উপজেলার মুরুং ম্যারাইনতং পাহাড়ে জমি দখলকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। ম্রো জনগোষ্ঠীর অভিযোগ, বৌদ্ধ ধর্মীয় গুরু ও বিহার পরিচালক ভিক্ষু উ:উইচারা তাদের চাষাবাদের জমি দখল করে সেখানে বৌদ্ধ জাদী নির্মাণ ও পর্যটনের নামে বানিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। একই ধরনের অভিযোগ উঠেছে পার্শ্ববর্তী আলীকদম উপজেলার নয়াপাড়া গ্রামেও, দুটি জায়গাতে প্রায় ১২৫ মুরং ও ম্রো পরিবারের জায়গা দখল হয়েছে বলে দাবি করেছেন স্থানীয় হেডম্যান চংপাত ম্রো। এই নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে উত্তেজনা বিরাজ করেছিল।

স্থানীয়দের বক্তব্য অনুযায়ী, জমিগুলো মূলত ম্রো-মুরং সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যগত জুম চাষের ভূমি। তবে বান্দরবান জেলা পরিষদ বৌদ্ধ উপাসনালয় স্থাপনের জন্য ১০ একর ভূমির অনুমোদন দেয়। এখন ১০ একের বাহিরেও জেলা পরিষদের অনুমোদন ব্যতিরেকে জোরপূর্বক দখল করে সেখানে বিহার নির্মাণ ও পর্যটন স্পষ্ট করা হয়েছে। ভিক্ষু উ:উইচারা এই বিহারের পরিচালক এবং ধর্মীয় গুরু হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। বিতর্কিত পাহাড়গুলো লামা উপজেলার সাঙ্গু মৌজা ও আলীকদম উপজেলার তৈন মৌজার মাঝামাঝি ম্যারাইনতং পাহাড়ে অবস্থিত, যা দুই উপজেলার সীমারেখা হিসেবেও বিবেচিত।

গতকাল বুধবার (২১ মে) ২০২৫ খ্রি. বিকালে বৌদ্ধ মূর্তি ভাংচুরের ঘটনা ঘটে। বিহার পরিচালনা কমিটি দাবি করে যে, চংপাত ম্রো হেডম্যানের নেতৃত্বে তার সমর্থিত ম্রো’রা বৌদ্ধ মূর্তি ভাঙচুর করেছে। এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে চংপাত ম্রো ও ম্রো সম্প্রদায়, যারা দাবি করছেন—তাদের উপর অন্যায়ভাবে দোষ চাপানো হচ্ছে এবং প্রকৃত ঘটনার তদন্ত হওয়া উচিত।

বৌদ্ধ মূর্তি ভাঙার ঘটনাটি নিয়ে মারমা সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দ নিন্দা প্রকাশ করেছেন। যদিও অনেকের মতে, জমি সংক্রান্ত দীর্ঘদিনের বিরোধ ও জমির বাণিজ্যিক ব্যবহার থেকেই এই উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে। ভিক্ষু উ:উইচারা যে এলাকায় ধর্মীয় স্থাপনা নির্মাণ করেছেন, সেখানে কটেজ, পড হাউজসহ পর্যটন অবকাঠামো গড়ে তোলা হয়েছে, যা ধর্মীয় গাম্ভীর্যের পরিপন্থী বলে মনে করছেন ম্রো সম্প্রদায়।

সাঙ্গু মৌজার হেডম্যান চংপাত ম্রো জানান, “আমাদের পূর্বপুরুষদের চাষের জমি বৌদ্ধ বিহার নির্মাণের নামে দখল করে সেখানে ব্যবসায়িক পর্যটন কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। অথচ এই জমিগুলো আমাদের মৌজা ভুক্ত এবং জেলা পরিষদের কোন অনুমতি ছাড়াই এসব কার্যক্রম চলছে।”

তবে স্থানীয় জনগণ দ্রুত ও নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানিয়েছেন এবং অভিযোগ সত্য হলে দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানান।

এদিকে সচেতন মহল পাহাড়ি অঞ্চলজুড়ে সম্প্রদায়গত শান্তি-সম্প্রীতি বজায় রাখার জন্য সামাজিক ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের অনুরোধ জানানো হয়েছে। যাতে কেউ ঘোলাপানিতে মাছ শিকার করার মাধ্যমে রাজনৈতিক হীন উদ্দেশ্য আদায় করতে না পারে।

আগের পোস্টবান্দরবানে কি লুসাই–পাংখোয়া নেই, কী আছে সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে।
পরের পোস্টসাজেকে ইউপিডিএফ নেতা গ্রেপ্তারের দাবিতে বাঙালিদের বিক্ষোভ।

রিপ্লাই দিন

আপনার কমেন্ট লিখুন
আপনার নাম লিখুন