নিউজ ডেস্ক
ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) সৃষ্ট ‘নানিয়ারচর-লংগদু বন ও পরিবেশ রক্ষা কমিটি’ একটি বিক্ষোভ কর্মসূচি আয়োজন করে। এই কর্মসূচির মূল লক্ষ্য ছিল নানিয়ারচর থেকে লংগদু পর্যন্ত প্রস্তাবিত সড়ক নির্মাণ কাজ বন্ধ করা।
পাহাড়ি এলাকায় সড়ক অবকাঠামো উন্নয়নের এই প্রচেষ্টা দীর্ঘদিনের জনদাবির প্রতিফলন। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ) ইতোমধ্যে ২৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সড়কের সম্ভাব্যতা যাচাই-বাছাই শুরু করেছে। এই কর্মকাণ্ড ইউপিডিএফ-এর নজরে এলে তারা তা বন্ধে জোরালো বিরোধিতা শুরু করে।
আজ ২৬ মে সকাল ১১টায় ইউপিডিএফ সমর্থকরা পাতাছড়ি এলাকা থেকে মিছিল বের করে। মিছিলটি টিএন্টি বাজারে এসে সংহতি সমাবেশে রূপ নেয়। এ কর্মসূচিকে পেছন থেকে নেতৃত্ব দেন ইউপিডিএফ পরিচালক অতুল চাকমা ওরফে সুকৃতি চাকমা।
সামনের সারিতে নেতৃত্ব দেন নানিয়ারচর-লংগদু বন ও পরিবেশ রক্ষা কমিটির আহ্বায়ক জ্ঞান বিকাশ চাকমা। এছাড়া ইউপিডিএফ সমর্থিত জনপ্রতিনিধিরা কর্মসূচিতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারীরা দাবি তোলেন, সড়ক নির্মাণ হলে পরিবেশ ধ্বংস হবে। তাদের মতে, এই সড়ক বনজ সম্পদ ও বন্যপ্রাণীর জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াবে।
তবে স্থানীয় জনগণের অভিমত সম্পূর্ণ ভিন্ন। লংগদু ও বাঘাইছড়িতে বসবাসরত সাধারণ মানুষ বছরের পর বছর যোগাযোগ সমস্যায় জর্জরিত।
সড়ক না থাকায় তাদেরকে নদীপথে চলাচল করতে হয়, যা সময়সাপেক্ষ ও ব্যয়বহুল। বিশেষ করে রোগীদের চিকিৎসা, শিক্ষার্থীদের যাতায়াত এবং কৃষকদের পণ্য পরিবহণে প্রচণ্ড দুর্ভোগ পোহাতে হয়।
সড়কটি নির্মিত হলে রাঙামাটি শহরের সঙ্গে এই অঞ্চলের সরাসরি সংযোগ স্থাপিত হবে। এর ফলে সময় বাঁচবে, খরচ কমবে এবং জীবনযাত্রার মান উন্নত হবে।
স্থানীয় কৃষকরা জানিয়েছেন, সড়ক হলে তারা সহজে কৃষিপণ্য বাজারজাত করতে পারবেন। চট্টগ্রাম ও ঢাকার বাজারে পৌঁছানো সম্ভব হবে কৃষিজাত দ্রব্য।
এতে কৃষির উৎপাদন ও আয়ের উৎস বাড়বে, অর্থনীতি চাঙ্গা হবে। শ্রমজীবী মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।
তরুণদের জন্য নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলবে। মেয়েদের বিদ্যালয়গামী পথ হবে সহজ ও নিরাপদ। বিশেষজ্ঞদের মতে, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন হলে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি ও ব্যবসার বিকাশ ঘটে।
তবে ইউপিডিএফ এই উন্নয়নকে তাদের স্বার্থের পরিপন্থী মনে করে। তারা দীর্ঘদিন ধরে পাহাড়ে আধিপত্য বজায় রাখতে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ও জনদুর্ভোগকে হাতিয়ার করেছে। অতীতে বহুবার উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে বাধা দিয়েছে ইউপিডিএফ।
সচেতন মহলের মতে, এটি একটি পূর্বপরিকল্পিত ষড়যন্ত্র। তারা বলেন, উন্নয়ন বন্ধ হলে ইউপিডিএফ চাঁদাবাজি ও অস্ত্র ব্যবসা আরও বিস্তৃত করতে পারবে।
অন্যদিকে, সড়ক হলে রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্ব বৃদ্ধি পাবে এবং নিরাপত্তা জোরদার হবে। এতে তাদের অবৈধ কার্যক্রমে বাঁধা সৃষ্টি হবে। এ কারণেই তারা উন্নয়নবিরোধী মনোভাব গ্রহণ করে চলেছে।
স্থানীয় জনগণ এই অবস্থাকে উন্নয়নবিরোধী ও স্বার্থান্বেষী রাজনীতির অংশ হিসেবে দেখছে। একটি আধুনিক রাষ্ট্রে এমন কর্মকাণ্ড মেনে নেওয়া যায় না।
সড়কটি যদি বাস্তবায়িত হয়, তবে পাহাড়ের জনগণের ভোগান্তি অনেকাংশে লাঘব হবে। এই সড়ক শুধু নানিয়ারচর ও লংগদুকে নয়, বাঘাইছড়িকেও উপকৃত করবে। এই অঞ্চলে বসবাসরত প্রায় দুই লক্ষ মানুষ সরাসরি উপকারভোগী হবে।
বর্তমানে তাদেরকে নদীপথে যাতায়াতে দ্বিগুণ সময় ও অর্থ ব্যয় করতে হয়। বর্ষাকালে নদী উত্তাল হয়ে উঠলে যোগাযোগ প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। তখন শিক্ষার্থী, রোগী ও ব্যবসায়ীরা সর্বাধিক দুর্ভোগে পড়ে। সড়ক নির্মাণ হলে জরুরি চিকিৎসাসেবা দ্রুত পাওয়া যাবে।
নানিয়ারচর বড়পুল থেকে লংগদু পর্যন্ত সড়ক একটি জীবনরক্ষাকারী অবকাঠামো হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
এই প্রকল্প বাস্তবায়নে সওজের পাশাপাশি স্থানীয় প্রশাসনও সক্রিয়। তবে ইউপিডিএফ তাদের স্বার্থ রক্ষার্থে কর্মসূচির নামে হুমকি সৃষ্টি করছে।
এতে জনগণের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে।
একজন নারী বলেন, “আমরা শান্তিপূর্ণ উন্নয়ন চাই, মিছিল-সন্ত্রাস না।”
তরুণরা উন্নয়ন চান, কর্মসংস্থান চান।
বয়স্করা বলেন, “আর কষ্ট নয়, এবার উন্নয়নের ছোঁয়া দরকার।”
বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন এই কর্মসূচির নিন্দা জানিয়েছে। তারা সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছে, সড়ক নির্মাণ কাজ অবিলম্বে শুরু করতে হবে। তারা বলছেন, এ অঞ্চলের মানুষ উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত হতে পারে না। অতীতে যেভাবে এই ধরনের কার্যক্রম দমন করে উন্নয়ন এগিয়ে গেছে, এবারও তার ব্যতিক্রম হওয়া উচিত নয়।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ইউপিডিএফ জনসমর্থন হারিয়েছে। তাদের সন্ত্রাসনির্ভর রাজনীতি জনগণের কাছে আর গ্রহণযোগ্য নয়। উন্নয়নকামী জনগণ এখন সঠিক নেতৃত্ব চায়। তারা মুক্তি চায় দুর্ভোগ, ভয় আর চাঁদাবাজির নিপীড়ন থেকে।
এই আন্দোলনের মাধ্যমে ইউপিডিএফ জনস্বার্থ বিরোধিতার এক জঘন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। সরকারের উচিত, এই অঞ্চলে অবিলম্বে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা।
সশস্ত্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর হুমকি উপেক্ষা করে উন্নয়নের ধারা অটুট রাখা অপরিহার্য। বিশেষ করে পার্বত্য চট্টগ্রামের উন্নয়ন প্রক্রিয়া আর বিলম্বিত হওয়া চলবে না। বাঙালি ও উপজাতিদের অধিকার রক্ষার পাশাপাশি উন্নয়নও সমানভাবে জরুরি। সড়ক অবকাঠামো ছাড়া পাহাড়ে টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়।
এই সড়ক একটি প্রতীক—দুর্ভোগ থেকে মুক্তির, সম্ভাবনার, নিরাপত্তার। জনগণের দুর্ভোগ লাঘবে এর বাস্তবায়ন সময়ের দাবি।
রাষ্ট্রের উচিত, এই প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা। জনগণের মতামত বিবেচনায় রেখে সন্ত্রাসী হুমকিকে পরোয়া না করাই হবে রাষ্ট্রের দায়িত্বশীলতা।
একটি রাস্তা শুধু মাটি ও পাথরের সমাহার নয়, এটি উন্নয়নের মহাসড়ক। যেখানে থেমে আছে স্বপ্ন, সেখানে নির্মাণ হওয়া উচিত সাহসিকতার ভিত্তি। এই সাহসিকতা দেখাতে হবে প্রশাসনকে। জনগণ প্রস্তুত, এখন প্রয়োজন কার্যকর পদক্ষেপের।