বাঘাইছড়িতে ইউপিডিএফ সেকশন কমান্ডার নিহত ও শিশু গুলিবিদ্ধ।

0
ছবি সংগৃহীত: ইউপিডিএফ সেকশন কমান্ডার নিহত ও আহত শিশু প্রজ্ঞা চাকমা (৫), এবং অস্ত্র ও মনিটরিং ড্রোন ক্যামেরা উদ্ধার

হিলনিউজবিডি | বাঘাইছড়ি প্রতিনিধি

রাঙামাটি পার্বত্য জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলার বঙ্গলতুলি ইউনিয়নের বঙ্গলতুলি এলাকায় চুক্তিবিরোধী সংগঠন ইউপিডিএফ (প্রসীত গ্রুপ) ও পার্বত্য চুক্তি-সমর্থিত জেএসএস (সন্তু লারমা গ্রুপ) এর মধ্যে ভয়াবহ বন্দুকযুদ্ধে ইউপিডিএফ এর সেকশন কমান্ডার রিপেল চাকমা নিহত হয়েছেন। এ সংঘর্ষে অন্তত পাঁচজন আহত হন, যার মধ্যে শিশু প্রজ্ঞা চাকমা (৫) গুরুতরভাবে পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে।

শুক্রবার ৬ জুন সকালবেলা ইউপিডিএফ এর একটি সশস্ত্র ঘাঁটিতে জেএসএস এর পক্ষ থেকে অ্যাম্বুশ চালানো হয়। জেএসএস সূত্রের দাবি, রিপেল চাকমা ইউনিফর্ম পরিহিত অবস্থায় ঘটনাস্থলে নিহত হন। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, এই গোলাগুলির সময় জেএসএস এর এলোপাতাড়ি গুলিতে উত্তর বঙ্গলতুলি শুভরঞ্জন কার্বারী পাড়ার শিশু প্রজ্ঞা চাকমা গুরুতরভাবে আহত হয়।

স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, সংঘর্ষের সময় জেএসএস-ইউপিডিএফ গুলিবর্ষণ শুরু করলে অসংখ্য শিশু, নারী ও সাধারণ মানুষ প্রাণ বাঁচাতে পালাতে বাধ্য হন।

জেএসএস সূত্র দাবি করেছে, এ অভিযানে ইউপিডিএফ এর আরও দুই সদস্য নিহত ও পাঁচজন আহত হয় এবং তিনজন পালিয়ে যান। যে বাড়িটি ইউপিডিএফ ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করেছিল সেখানে তল্লাশি চালিয়ে একটি ড্রোন ক্যামেরা এবং একে-৪৭ রাইফেল উদ্ধার করার কথাও দাবি করা হয়েছে।

ছবি: ড্রোন ক্যামেরা

বিশ্লেষকরা বলছেন, খাগড়াছড়ির পানছড়ি এবং দুধকছড়া এলাকায় গত কয়েক সপ্তাহ ধরে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ইউপিডিএফ ও জেএসএস এর মধ্যে টানাপোড়েন বেড়েই চলেছে। পানছড়িতে ইউপিডিএফ এর গুলিতে জেএসএস এর বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির পর ভারতের সীমান্ত এলাকায় চিকিৎসা নিতে গিয়ে জেএসএস ১৩ সদস্য ভারতীয় পুলিশের হাতে আটক হয়েছিলেন। ভারতীয় গণমাধ্যমে বিষয়টি প্রকাশিত হলে জেএসএস এর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়। ধারণা করা হচ্ছে, সেই ঘটনার প্রতিশোধ হিসেবেই আজকের এই হামলা সংঘটিত হয়।

পার্বত্য চট্টগ্রামে এমন সহিংসতা নতুন নয়। এর আগেও খাগড়াছড়ির বিভিন্ন স্থানে ইউপিডিএফ কর্তৃক জেএসএস-সমর্থিত পাঁচ শিক্ষার্থী অপহরণ এবং পরে নিরাপত্তা বাহিনীর চাপে তাদের মুক্তি দেওয়ার ঘটনা ঘটে। পানছড়ির রুপসেনপাড়া ও দুধকছড়ায় একাধিকবার উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ ও অপহরণের ঘটনাও ঘটেছে। সেসব হামলায় নারী, শিশু ও নিরীহ গ্রামবাসীর হতাহতের ঘটনা ঘটে।

স্মরণযোগ্য যে, ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে গণ্ডারামছড়া এলাকার ৭ বছর বয়সী রোমিও ত্রিপুরা গুলিবিদ্ধ হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় প্রাণ হারান। তাঁর মৃত্যুও পার্বত্য অঞ্চলের সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করে।

সচেতন মহল মনে করেন, শিশু প্রজ্ঞা চাকমার গুলিবিদ্ধ হওয়া নতুন করে প্রমাণ করে, এই সশস্ত্র সহিংসতার বলি কেবল সন্ত্রাসী সংগঠনের সদস্যরা নয় – বরং সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সাধারণ পাহাড়ি জনগণ। নারী ও শিশুরা ঘরে-বাইরে আজ নিরাপত্তাহীনতার বৃত্তে আটকে পড়েছে।

ছবি: শিশু প্রজ্ঞা চাকমা (৫)

ইতোমধ্যে প্রজ্ঞা চাকমা আহতের প্রতিবাদে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আঞ্চলিক সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর প্রতি তীব্র সমালোচনার ঝড় বইছে। পাহাড়িরা এই নিয়ে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে।

নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা মনে করেন, প্রতিনিয়ত পাহাড়ে রক্ত ঝরছে, শিশুদের চোখে আতঙ্ক ও ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। রাজনৈতিক ও কথিত অধিকার স্বার্থে পরিচালিত এই সশস্ত্র সংঘাত বন্ধে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কার্যকর পদক্ষেপ এখন সময়ের দাবি। পাহাড়ের সাধারণ মানুষ শান্তি চায় – অস্ত্র নয়।

এলাকাটি দুর্গম হওয়াই সংঘর্ষের খবর পেলেও ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে পারেনি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।

ইউপিডিএফ সেকশন কমান্ডার নিহতের বিষয়ে প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ইউপিডিএফ থেকে আনুষ্ঠানিক বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

আগের পোস্ট১৩ মাস পর পর্যটন খুললো বান্দরবান — পর্যটনে ফিরছে প্রাণচাঞ্চল্য।
পরের পোস্টবান্দরবানে ধর্ষণের শিকার শিশু, নীরব জাতিগত পক্ষপাতের নির্মম প্রতিচ্ছবি।

রিপ্লাই দিন

আপনার কমেন্ট লিখুন
আপনার নাম লিখুন