দীঘিনালা প্রতিনিধি
খাগড়াছড়ির দীঘিনালার বোয়ালখালী বাজারে এক চায়ের দোকানে ইউপিডিএফের প্রশংসা এবং অন্যান্য আঞ্চলিক দলগুলোর সমালোচনা করায় মারধরের শিকার হয়েছেন চিক্কো মনি চাকমা (২০) নামে এক যুবক। অভিযোগ উঠেছে, জেএসএস (সংস্কার) দলের কর্মীরা তাকে প্রকাশ্যেই শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, গত ৮ জুন (রবিবার) রাত ৯টার দিকে চিক্কো মনি চাকমা ও তার এক বন্ধু বোয়ালখালী বাজারের একটি চায়ের দোকানে বসে নানা বিষয়ে আলাপ করছিলেন। আলাপচারিতার একপর্যায়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের চলমান সামাজিক-রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে তারা আলোচনা শুরু করেন। যেখানে ইউপিডিএফ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড— চাঁদাবাজি, অপহরণ, হত্যা ও গুম-খুনে জড়িত থাকলেও ইউপিডিএফ এর প্রশংসা করেন, এবং অন্যান্য আঞ্চলিক দলগুলোর তীব্র সমালোচনা করেন। এমনটা জানা গেছে স্থানীয় সূত্রে।
চিক্কো মনি চাকমা তার বন্ধুকে বলেন, “পার্বত্য চট্টগ্রামে যতগুলো দল রয়েছে, তাদের মধ্যে একমাত্র ইউপিডিএফ কোনো না কোনো ইস্যুতে প্রতিবাদ জানায়। বাকিরা প্রায় নীরব থাকে।”
এই কথাটিই যেন কাল হয়ে দাঁড়ায় তার জন্য। কারণ, একই দোকানে তখন বসে ছিলেন জেএসএস (সংস্কার) দলের পাঁচজন কর্মী, যাঁরা কথোপকথন শুনে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। একপর্যায়ে তারা উঠে এসে তাকে মারধর শুরু করেন।
চিক্কো মনি চাকমার ভাষ্য অনুযায়ী, “তারা আমার কথা কিছুতেই মেনে নিতে পারলো না। পরে আমাকে চড়, থাপ্পড় মেরে ঘিরে ধরে। এরপর আমাদের গ্রামের মুরব্বীদের ফোন করে বাজারে ডেকে আনে এবং আমার অভিভাবকের উপস্থিতিতে ৯ জুন ‘সংস্কার’ অফিসে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেয়।”
মারধরের শিকার চিক্কো মনি চাকমার বাড়ি দীঘিনালার মধ্যম বোয়ালখালীর ঝিমিত কার্বারিপাড়ায়। তার পিতা মৃত সুনীল চাকমা। তিনি ইউপিডিএফ প্রসীত সন্ত্রাসীদের সমর্থক বলে জানা গেছে।
এলাকায় এই ঘটনাকে ঘিরে চরম উদ্বেগ ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। সচেতন মহলের অভিমত, “রাজনৈতিক মত প্রকাশ করা একটি নাগরিক অধিকার। জনগণের টাকায় পরিচালিত এইসব দল যদি নিজেদের সমালোচনাও সহ্য না করতে পারে, তাহলে গণতন্ত্রের কী মূল্য আছে? শুধুমাত্র মতামতের ভিন্নতার কারণে সমর্থককে মারধর করা চরম বর্বরতা।”
তারা আরও বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত উপজাতীয় জনগোষ্ঠীর মধ্যে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হরণ করলে তা সমাজে ভয়ংকর প্রতিক্রিয়া ডেকে আনতে পারে। তবে অনেকেই মনে করেন, পার্টির সমর্থকদের এমন আচরণে গণতান্ত্রিক পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন তারা।
উল্লেখ্য, ইউপিডিএফ ও জেএসএস (সংস্কার) — উভয় দলই পার্বত্য চট্টগ্রামের সন্ত্রাসীগোষ্ঠী এবং তথাকথিত জাতির অধিকারে রাজনীতিতে সক্রিয়। তবে সাম্প্রতিক সময়ে চাঁদাবাজির ভাগবাটোয়ারা এবং আধিপত্য প্রশ্নে রাজনৈতিক সহনশীলতা কমে যাওয়ার কারণে দলগুলোর মধ্যে ক্ষুদ্র ঘটনায়ও সংঘর্ষ বাড়ছে বলে পর্যবেক্ষকদের মত।