বাঘাইছড়ি প্রতিনিধি
গত ৯ জুন ২০২৫, বিকাল ৪:০০ টায়, রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার ৩২ নং বাঘাইছড়ি ইউনিয়নের এ্যাতগাত্যে (মিলনপুর) গ্রামে, আর্য্যপুর-মাঝিপাড়া সীমান্ত সড়কে ঘটে যায় এক চাঞ্চল্যকর ঘটনা। অভিযোগ উঠেছে, বাঙালি তিন যুবক — মোঃ সজীব (২৫), মোঃ আল-আমিন (২৩) এবং মোঃ সাইদুল ইসলাম ওরফে শহিদুল্লাহ (২২), যারা সকলেই আমতলী ইউনিয়নের ৪ ও ৬ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা — তারা এক বাক-প্রতিবন্ধী পাহাড়ি কিশোরী (১৪) কে যৌন হয়রানি করেন। তারা সড়কে কিশোরীকে একা পেয়ে তার শরীরের স্পর্শকাতর স্থানে হাত দেয় কিন্তু এসময় স্থানীয় পাহাড়ি যুবকরা এগিয়ে আসলে তাদের ধর্ষণ চেষ্টা ব্যর্থ হয়। এবং পাহাড়ি যুবকরা স্থানীয় জনগণকে সমবেত করে।
ঘটনার পরপরই গ্রামীণ জনতা বাঙালি যুবকদের আটক করে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, উত্তেজিত জনতা তাদের গণধোলাই দিয়ে, পরবর্তীতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মধ্যস্থতায় শর্তসাপেক্ষে ছেড়ে দেয়। এমনই দাবি করে একটি আঞ্চলিক সংগঠন।
বিষয়টি স্থানীয়ভাবে মীমাংসা হলেও, ঘটনাটি ঘিরে ব্যাপক বিভ্রান্তি ও দোদুল্যমান বক্তব্য ছড়িয়ে পড়ে। জেএসএস ইতোমধ্যে ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়ে বাঙালিদের হেয়-প্রতিপন্ন করে, যা বাঙালিদের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করে।
এই প্রেক্ষিতে, অভিযুক্ত যুবকদের স্বজনরা এক ভিন্নতর তথ্য তুলে ধরেছেন। তাদের দাবি অনুযায়ী, অভিযুক্ত তিন যুবক ঈদের ছুটির দিনটি উপলক্ষে সীমান্ত সড়কে বেড়াতে গিয়েছিলেন। স্বজনদের ভাষ্যে উঠে এসেছে: “একদল উগ্র উপজাতি যুবক আমাদের ছেলেদের পথরোধ করে। তারা মোটরসাইকেল, মোবাইল ফোন ও নগদ অর্থ ছিনিয়ে নেয়, এরপর নির্দয়ভাবে মারধর করে। আমাদের ছেলেরা কোনো ধরনের অপরাধে জড়িত ছিল না।”
তাদের আরও দাবি—
“যৌন হয়রানির অভিযোগটি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও পূর্বপরিকল্পিত। এটি একটি ষড়যন্ত্রমূলক নাটক, যার উদ্দেশ্য হলো নিরপরাধ যুবকদের ফাঁসানো এবং বৃহত্তর কোনো গোপন এজেন্ডা বাস্তবায়ন করা।”
এই পাল্টাপাল্টি বক্তব্যে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠছে।
স্থানীয় বিশ্লেষক ও সূত্রমতে, দীর্ঘদিন ধরে জেএসএস ও অন্যান্য আঞ্চলিক দল সমূহ সীমান্ত সড়ক নির্মাণে বাধা দিয়ে আসছে। তাদের মতে, “এই ঘটনাটি সীমান্ত সড়ক নির্মাণ বন্ধের একটি কৌশল হতে পারে। সড়কের উন্নয়ন হলে সরকারের উপস্থিতি ও নিয়ন্ত্রণ বৃদ্ধি পাবে, যা আঞ্চলিক সশস্ত্র দলগুলোর জন্য হুমকি। তাই তারা গুজব বা নাটকীয় ঘটনার আশ্রয় নিয়ে জনমত প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে।”
এই ঘটনা পাহাড়ি-বাঙালি সম্প্রদায়ের পারস্পরিক সম্পর্কের সূক্ষ্ম ভারসাম্যকে আবারও প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। বাস্তবতা যাচাই ছাড়া ভিত্তিহীন প্রচারণা কিংবা গুজব পাহাড়ে স্থিতিশীলতাকে আরও নাজুক করে তুলতে পারে। তাই সত্য অনুসন্ধানমূলক তদন্ত এবং সামাজিক সহনশীলতা বজায় রাখা এখন সময়ের দাবি।