আদিল আহামেদ চৌধুরী | বান্দরবান
বান্দরবান এর লামায় বমু রিজার্ভের সেগুন কাঠ পাচারের সময় নোয়াখলী (ট) ১১-০০২৫ গাড়িটি লামা বনবিভাগ আটক করেছেন। সরেজমিনে গিয়ে জানা যায় বমু রিজার্ভের চোরাই সেগুন কাঠ লামা জোত মালিক সমিতির সভাপতি সেলিম লামার টিটিএন্ডসির বিভিন্ন অবৈধ ডিপোতে স্টক রাখতেন। লামা পৌরসভা ৮নং ওয়ার্ডের মাসুদ রানা ও মনির হোসেন জানান, গত ০২/০৬/২৫ খ্রি. রাত ৮ টার দিকে অবৈধ ডিপো থেকে রাতের আধারে সেগুনকাঠ পাচার হচ্ছে দেখে তারা স্থানীয় লোকজনসহ গাড়ি টি ধাওয়া করেন। গাড়ি টি লামা বন চৌকি স্টেশন কর্মকর্তা (স্পেশাল লামা হেডকোয়ার্টার) আলতাফ হোসেনের বন চৌকি স্টেশন অতিক্রম করে।
লামা বনবিভাগের সামনে দিয়ে লাইনঝিরি মসজিদ মার্কেটের সামনে গেলে আমরা স্থানীয় লোকজনসহ গাড়িটি আটক করেন বলে জানিয়েছেন। সেগুন কাঠ-বোঝাই গাড়িটি আটকের খবর পেয়ে লামা বনবিভাগের সদর রেঞ্জার আতা এলাহী ঘটনাস্থলে আসেন। গাড়িটি।রিজার্ভ খেকো সেলিম ও বাবুল এর বলে সত্যতা প্রকাশ পায়। প্রথমে গাড়ি টি জব্দ না করে কৌশলে রিজার্ভ থেকো ব্যবসায়ীদের হাতে তুলে দিতে চেষ্টা করেন। পরবর্তীতে স্থানীয় লোকজনের তোপের মুখে পড়ে গাড়িটি লামা বনবিভাগে নিয়ে আসেন। জানা যায় দীর্ঘদিন ধরে লামা বনবিভাগের সাঙ্গু রেঞ্জের টিপি দিয়ে লামা সদর রেঞ্জে আওতায় কাঠ পাচার হয়ে আসছিল। বিশেষ করে রিজার্ভ ও জোতবিহীন সেগুন কাঠগুলো সাঙ্গুর টিপি দিয়ে লামা সদর রেঞ্জের আওতায় এই অভিনব কায়দায় পাচার হয় বলে জানা গেছে।
অনুসন্ধানে জানা যায় রিজার্ভের এসব সেগুন কাঠ লামা সদর রেঞ্জের টিপি পারমিটে পাচার করলে (আন্ডার-টেবিল মানির) খরচ ১লক্ষ চল্লিশ হাজার টাকার মত খরচ হয়। সাঙ্গু রেঞ্জের টিপির কাগজ লামা সদর রেঞ্জে দেখিয়ে কাঠ পাচার করলে খরচ কমে আসে বলে জানা গেছে।
লামার পরিচ্ছন্ন এক কাঠ ব্যবসায়ী (নাম জানাতে অনিচ্ছুক) তিনি জানান। এসব রিজার্ভ খেকো অসাধু কাঠ ব্যবসায়ীদের জন্য লামা আলীকদমের কাঠশিল্প আজ হুমকির মুখে। অসাধু কাঠ ব্যবসায়ীদের জন্য আমরা প্রকৃত নিয়ম অনুসরণ কারী কাঠ ব্যবসায়ীর ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বলেন জানিয়েছেন। এমন লাগামহীন বেপরোয়া কাঠ পাচার-রোধে বন বিভাগের কোন ভূমিকা নেই। বরঞ্চ লামা বনবিভাগের অসাধু কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় অবৈধ সেগুন কাঠ টিপির মাধ্যমে বৈধতা পায় বলে মন্তব্য করেন।
জানা যায় এভাবেই প্রতিদিন বৈধ-অবৈধ সেগুন কাঠ অনৈতিক ভাবে টিপি দেওয়ার মাধ্যমে লামা বনবিভাগ কামিয়ে নিচ্ছেন লক্ষ লক্ষ টাকা।
লামা বনবিভাগের সদর রেঞ্জ কর্মকর্তা আতা এলাহীর সহযোগিতায় বমু-রিজার্ভ ও তৈন রিজার্ভের কাঠ পাচার হয়। ২০২৩ খ্রি. লামা বনবিভাগে যোগদান করেন এই রেঞ্জ কর্মকর্তা। ১বছরের অধিক সময়ের বেশি একটি ডিভিশনে চাকুরী করার নিয়ম নেই বলো জানা গেছে। বর্তমানে রেঞ্জ কর্মকর্তা আতা এলাহী ২বছরের বেশি সময় লামা বনবিভাগে দাপটের সাথে কাজ করছেন।
জানা গেছে লামা বনবিভাগের ডিএফও মোস্তাফিজুর রহমান ও তার কথার বাহিরে যেতে পারেনা না।
অনুসন্ধান করে জানা যায় বন-সংরক্ষক চট্টগ্রাম অঞ্চল ড. রেজাউল করিম মোল্যার সাথে তার বেশ সখ্যতার কথা। সিএফের ঘনিষ্ঠ ও আস্থাভাজন হওয়াতে তার ক্ষমতার ব্যবহার সিনিয়র কর্মকর্তাদের উপর প্রয়োগ করেন বলে জানা গেছে।
গত ২৪/০৫/২৫ খ্রি. তারিখে চট্টগ্রাম থেকে আগত তদন্ত কমিটি। লামা বনবি-ভাগের ডিএফও ও সদর রেঞ্জার আতা এলাহীর কথামত মনগড়া তদন্ত প্রতিবেদন করেছেন। বমু রিজার্ভের চিহ্নিত স্পট শনাক্ত সহযোগিতাকারী ব্যাক্তিকে, বিভিন্ন বন-মামলার ভয়ভীতি দেখিয়েছে। মানসিক ও শারিরীক নির্যাতনের মাধ্যমে তার কাছ থেকে জোরপূর্বক মুছলেখা আদায় করেন আতা এলাহী ও আলতাফ হোসেন।
লামা বনবিভাগের উপ- বন-সংরক্ষক (ডিএফও) মোস্তাফিজুর রহমানের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করে জানতে চাওয়া হয়। জব্দ করা সেগুন কাঠ গুলো কি টিপি (ট্রান্সপোর্ট পারমিট) ছিলো কিনা কাঠগুলোর মালিক কে। ওনি বলেন জব্দ করা সেগুন কাঠের গাড়িটির কোন পারমিট ছিলনা। লামা বন চৌকি স্টেশন ও লামা বনবিভাগের সামনে দিয়ে কিভাবে গেলো বন-বিভাগের চোখ ফাকি দিয়ে। ওনি এসব বিষয়ে তেমন কিছু জানেনা না বলে কোশলে উত্তর এড়িয়ে যান।
সোস্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিও ক্লিপে দেখা যাচ্ছে। বমু-বিট কর্মকর্তা (লামা হেডকোয়ার্টার স্পেশাল) আলতাফ হোসেন স্থানীয় লোকজনদের জানাচ্ছেন। এই অবৈধ কাঠের গাড়ির মালিক জোত-মালিক সমিতির সভাপতি সেলিম। তার নামে লামা বনবিভাগে বন-মামলা দায়ের করা হবে।
এইবিষয়ে লামা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জনাব মোঃ মঈন উদ্দিন বলেন, কয়েকজন সাংবাদিকের গোপন তথ্যের ভিত্তিতে লামার মিরিঞ্জা এলাকায় গাড়িটি আটক কারার জন্য অবস্থান করছিলেন। তার আগে লামার লাইনঝিরি মসজিদ মার্কেটের সামনে সেগুন কাঠ বোঝাই গাড়িটি স্থানীয় লোকজন আটক করেছেন বলে জানিয়েছেন ট্রাক বোঝাই সেগুন কাঠের মালিক সেলিম বলে প্রাথমিক ভাবে তথ্য পাওয়া গেছে। এবং তিনি লামা বন-বিভাগকে বলেছেন, সঠিকভাবে এর সাথে কারা জড়িত তদন্ত করে জানাতে।