কাউখালীতে কথিত হামলা: ইউপিডিএফের প্রপাগান্ডা নাকি বাস্তব?

0
ছবি ষড়যন্ত্রের শিকার— ইমরান হোসেন, নাঈম ইসলাম হিমেল ও ফাহিম
ছবি ষড়যন্ত্রের শিকার— ইমরান হোসেন, নাঈম ইসলাম হিমেল ও ফাহিম

গত ১২ জুন ২০২৫, কথিত নারী অধিকার ইস্যুতে ঢাকার তিন বামপন্থী বক্তার ওপর কাউখালী থেকে ফেরার পথে বেতছড়ি নামকস্থানে ‘হামলার’ অভিযোগ ঘিরে মাঠে নেমেছে কুচক্রী মহল। তারা এর প্রতিবাদে ১৬ জুন কাউখালী বাজার বর্জনের ডাক দিয়েছে হিল উইমেন্স ফেডারেশন, গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম, পিসিপি এবং ছাত্র-জনতার সংগ্রাম পরিষদের স্থানীয় ইউনিট ব্যানারে। এবং ভবিষ্যতে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার হুমকি দিচ্ছে৷ বিভিন্নভাবে মিথ্যা তথ্যের উপর ভর করে কিংবা ইচ্ছেকৃত বা অনিচ্ছেকৃতভাবে নিম্নোক্ত ছাত্রনেতাদের সামাজিক, রাজনৈতিক মানহীন ও হয়রানি এবং ক্ষতিসাধন করাসহ নিজেদের হীন স্বার্থ উদ্ধারে মাঠে নেমেছে।

গত ১৩ জুন ডাবুয়া বাজারে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ সমাবেশে এবং মিডিয়া প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ইউপিডিএফ দাবি করেন, “ঢাকা ফেরার পথে শিক্ষক অলিউর সান, অধিকারকর্মী মারজিয়া প্রভা এবং ছাত্রনেত্রী নূজিয়া হাসিন রাশার ওপর কাউখালী কলেজ ছাত্রদলের স্থানীয় নেতৃবৃন্দ হামলা চালায়।”

কথিত হামলার শিকার ব্যক্তিরা যদিও আক্রমণকারীদের নাম ঘোষণা করেননি তখন, তবে ইউপিডিএফের প্রভাবাধীন সংগঠনগুলো সামাজিক মাধ্যমে নাম প্রচার করেন, যার মধ্যে রয়েছে মোঃ ইমরান হোসেন (ছাত্রদল সভাপতি) ও নাঈমুল ইসলাম হিমেল (সাধারণ সম্পাদক)। পরে একই বয়ান প্রচার করেন, হামলার শিকার ব্যক্তিরা! অথচ প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখনো পর্যন্ত এই অভিযোগের কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি বলে জানা গেছে।

প্রশ্নবিদ্ধ তথ্য ও রাজনৈতিক প্ররোচনা:

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ঘটনার স্থান বেতছড়ি থেকে কাউখালী থানার দূরত্ব ১-২ কিলোমিটার মাত্র। অভিযোগকারীরা থানায় লিখিত অভিযোগ দেননি, এমনকি চিকিৎসা সংক্রান্ত কোনো কাগজপত্রও উপস্থাপন করেননি। উপরন্তু, হামলার যেসব তথ্য সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়ানো হয়েছে, এবং বাজার বর্জন তার কোনোটিই যথাযথ নয় বা যাচাইযোগ্য নয়।

স্থানীয় বাঙালিরা মনে করেন, ইমরান ও হিমেলের যে বয়স, এবং অবস্থান এই বিবেচনায় তাদের পক্ষে এই এধরণের ঘৃণ্য ঘটনা সংঘটিত করা সম্ভব নয়। মূলত কল্পনা চাকমা অপহরণ ইস্যু নিয়ে “সেনা ও বাঙালি সরিয়ে নাও” এবং জড়িতদের বিচার দাবিতে যে সমাবেশ বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে, সেটাকে কেন্দ্র করে কাউখালীতে উত্তপ্ত পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। ওইদিন বর্ণিত ছাত্রনেতাদের একটি ছবি কৌশলগতভাবে ইউপিডিএফের দৃষ্টিতে আনা হয়। যেখানে হামলাকারী হিসেবে তাদের উপর একটি পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র করা হয়।

বিশ্লেষকদের মতে, “এই ঘটনাটি মূলত ইউপিডিএফের রাজনৈতিক অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য একটি পরিকল্পিত প্রচেষ্টা হতে পারে, যা কাউখালীর শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে এবং সেনাবাহিনী ও বাঙালিদের বিরুদ্ধে জনগণের মাঝে বিদ্বেষ সৃষ্টি করতে চায়। তাদের এই কাজে সহায়ক হচ্ছে কতিপয় বাঙালি।”

বিতর্কিত বক্তা এবং বামপন্থার গোপন ইশারা:

গত ১২ জুন কচুখালীতে ইউপিডিএফ সংগঠনের সমাবেশে অংশগ্রহণকারী তিন অতিথি – অলিউর সান, মারজিয়া প্রভা এবং নূজিয়া হাসিন – সকলেই বাম রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত, যা অতীতে বিভিন্ন সময় তাদের বিতর্কিত কর্মকাণ্ড, সোশ্যাল অ্যাক্টিভিটিস কারণে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে: পার্বত্য চট্টগ্রামের স্থানীয় জনগণের পক্ষে কথা বলার জন্য কেন ঢাকার এই তিন ব্যক্তি ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী’ গোষ্ঠীর মঞ্চে উপস্থিত হলেন? তাদের বক্তব্যে কী ধরনের বার্তা দেওয়া হয়েছিল, যা হামলার প্রেক্ষাপট তৈরি করল?

আরও প্রশ্ন থেকে যায়, কল্পনা চাকমার অপহরণ ইস্যু, যা ২৯ বছর পূর্বে রাজনৈতিক ও বিচারিকভাবে বন্ধ হয়েছে, সেটিকে পুনরায় উত্থাপন করে সেনাবাহিনী, বাঙালি ও রাষ্ট্রকে বিতর্কিত করার চেষ্টাই কি ইউপিডিএফের মূল উদ্দেশ্য?

প্রচারণা না কি মব জাস্টিস?

সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘হামলাকারী’ হিসেবে যাদের নাম ছড়ানো হয়েছে, তারা স্থানীয় শিক্ষার্থী, এইতো ক’দিন আগে কলেজ ছাত্রদলের পদে আসীন হয়েছেন৷ যেখানে তাদের প্রতিপক্ষ তৈরি হয়েছে, তাই তাদের নামটি এধরনের একটি ঘটনার সঙ্গে জড়িয়ে দেওয়া হতে পারে। এই দুই ছাত্রনেতা কেমন এই নিয়ে বিচার বিশ্লেষণ কম হয়নি। এমনকি তাদের কোনো প্রকার সহিংসতার পূর্ব-ইতিহাস নেই। তাদের বিরুদ্ধে ইউপিডিএফ-সমর্থিত মঞ্চে অভিযোগ আনার মাধ্যমে একটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত চরিত্র হননের চেষ্টা করা হচ্ছে বলে মনে করছেন বাঙালি ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

তাদের মতে, “এই ধরনের কর্মসূচির মাধ্যমে একটি বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী মূলত জনসচেতনতা নয়, বরং প্ররোচনার মাধ্যমে রাষ্ট্রবিরোধী আন্দোলনের ভিত্তি তৈরি করতে চাইছে।”

হিল উইমেন্স ফেডারেশনের বাঘাইছড়ি সাংগঠনিক সম্পাদিকা কল্পনা চাকমা ১৯৯৬ সালের ১২ জুন রাঙামাটি বাঘাইছড়ি নিউ লাইল্যাঘোনা থেকে নিজ সংগঠন জেএসএস এর অভ্যন্তরীণ কোন্দলে অপহরণের শিকার হয়। স্থানীয়রা মনে করেন, কল্পনা চাকমার কথিত অপহরণকে পূঁজি করে “সেনাবাহিনী ও বাঙালি সরিয়ে নাও” এধরণের ব্যানারে সমাবেশ কাউখালীতে কীভাবে ইউপিডিএফ এর মত রাষ্ট্র বিরোধী সংগঠন করলেন, তা বোধগম্য নয়।

এই পুরো ঘটনাপ্রবাহ বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, কথিত হামলার আড়ালে এক ধরনের রাজনৈতিক চাল রয়েছে। উদ্দেশ্য নিজের রাজনৈতিক এবং ব্যক্তি স্বার্থ আদায়ে কাউকে গর্তে ঢোকানো — পার্বত্য চট্টগ্রামে বিদ্যমান শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে ফাটল ধরানো, সেনাবাহিনীর উপস্থিতিকে প্রশ্নবিদ্ধ করা এবং রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে পার্বত্য অঞ্চলে একপ্রকার গণআন্দোলনের ক্ষেত্র প্রস্তুত করা।

জনগণের কাছে এখন প্রশ্ন— এই কর্মকাণ্ড কি সত্যিই সুবিচারের দাবি, নাকি একটি সুপরিকল্পিত রাষ্ট্রবিরোধী রাজনৈতিক প্রপাগান্ডার অংশ? প্রশাসনের উচিত নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত সত্য উদঘাটন করে সকল পক্ষকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা। অন্যথায়, এই ধরনের চক্রান্ত পাহাড়ের স্থিতিশীলতা ও জাতিগত সম্প্রীতির জন্য ভয়াবহ বিপর্যয়ের কারণ হতে পারে।

আগের পোস্টখাগড়াছড়ি জেলা পরিষদের বাজার ফান্ডে নিয়োগ বৈষম্য।
পরের পোস্টআরও ২ টেলিকমকর্মী অপহরণ, ১০ দিনেও মেলেনি সন্ধান।

রিপ্লাই দিন

আপনার কমেন্ট লিখুন
আপনার নাম লিখুন