রাঙামাটিতে শহীদ ইমাম ওমর ফারুক ত্রিপুরার স্মরণে দোয়া ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত।

0

রাঙামাটি প্রতিনিধি

পার্বত্য চট্টগ্রামে নির্মমভাবে হত্যাকাণ্ডের শিকার হওয়া নওমুসলিম ইমাম ওমর ফারুক ত্রিপুরার স্মরণে আজ রাঙামাটিতে এক হৃদয়স্পর্শী দোয়া ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বান্দরবানের রোয়াংছড়ি উপজেলার তুলাছড়ি এলাকার নিরীহ ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর এই ইমাম ২০২১ সালের ৬জুন রাতে এশার নামাজ পড়ে ঘরে বিশ্রাম নিলে এসময় জেএসএস এর একটি সশস্ত্র টিম তাকে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ এবং ইসলাম প্রচার করার কারণে তার স্ত্রীর সামনে গুলি করে হত্যা করে। এই মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে এবং নওমুসলিম শহীদের আত্মার মাগফিরাত কামনায় আজ ১৮ জুন ২০২৫, বুধবার সকাল ১০টায় রাঙামাটি বায়তুশ শরফ কমপ্লেক্স মিলনায়তনে এ সভার আয়োজন করে পার্বত্য চট্টগ্রাম সম-অধিকার আন্দোলন, রাঙামাটি জেলা শাখা।

অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম আজও একটি দগদগে ঘা হয়ে রয়েছে। নানা নামে, নানা ছদ্মবেশে পরিচালিত সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ও নিপীড়ন আজ জনজীবনকে বিপর্যস্ত করে তুলেছে। তারা অভিযোগ করেন, শান্তিচুক্তির নামে একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠীকে অতিরিক্ত ক্ষমতা দিয়ে পুরো পার্বত্য অঞ্চলকে একটি নিপীড়িত উপনিবেশে পরিণত করা হয়েছে। আঞ্চলিক পরিষদের ছত্রচ্ছায়ায় এ অঞ্চলের প্রশাসন আজ কার্যত সন্ত্রাসীদের নিয়ন্ত্রণে—এবং এর জ্বলন্ত প্রমাণ হলো ইমাম ওমর ফারুক ত্রিপুরার নির্মম হত্যাকাণ্ড।

সভায় সঞ্চালনার দায়িত্বে ছিলেন নুরুল আবছার। সভাপতিত্ব করেন সম-অধিকার আন্দোলনের প্রবীণ নেতা কাজী জালোয়া এবং প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বর্ষীয়ান রাজনীতিক ও বিশ্লেষক জাহাঙ্গীর কামাল। প্রধান আলোচক ছিলেন সমাজসেবক ও নাগরিক প্রতিনিধি কামাল হোসেন। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন আব্দুল কাদের (টিচার্স ট্রেনার), মাওলানা শামসুল ইসলাম এবং মোঃ সাখাওয়াত হোসেন, যিনি রাঙামাটি পার্বত্য জেলা যুব অধিকার পরিষদের সংগঠক।

ছাত্র প্রতিনিধিদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মোঃ লোকমান হাকিম, মোঃ ইমাম হোছাইন ইমু, শাহিরুল হক, আনিসুল ইসলাম ও জহিরুল ইসলাম প্রমুখ। তারা ওমর ফারুক ত্রিপুরার আত্মত্যাগকে একটি জাগরণ হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, এই শহীদদের রক্ত বৃথা যেতে দেওয়া যাবে না।

বক্তারা একবাক্যে বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে বিচারহীনতার সংস্কৃতি অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। সকল নাগরিকের জন্য সমান নিরাপত্তা ও সাংবিধানিক অধিকার নিশ্চিত করাই রাষ্ট্রের দায়িত্ব। বক্তারা সরকারের প্রতি আহ্বান জানান, যাতে পার্বত্য অঞ্চলের প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার নিশ্চিত হয় এবং নতুন করে আর কোনো নিরীহ ও প্রান্তিক জনগণের রক্ত না ঝরে।

শহীদ ইমাম ওমর ফারুক ত্রিপুরার আত্মত্যাগ শুধু একটি ব্যক্তিগত ঘটনা নয়—এটি পার্বত্য চট্টগ্রামে চলমান অবিচার, বৈষম্য ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে এক শক্তিশালী প্রতিচ্ছবি। এই স্মরণসভা ছিল একদিকে শোকাবহ, অন্যদিকে ছিল প্রতিবাদের ভাষা—যেখানে প্রত্যাশা ছিল, রাষ্ট্র জেগে উঠবে এবং এই শহীদের রক্তের ঋণ শোধে পদক্ষেপ নেবে।

 

আগের পোস্টরাঙামাটিতে ওমর ফারুক ত্রিপুরার স্মরণে পিসিসিপি’র শোক সভা ও দোয়া অনুষ্ঠিত
পরের পোস্টবাঘাইছড়িতে সেনা অভিযানে অস্ত্রসহ ইউপিডিএফ দুই সদস্য আটক।

রিপ্লাই দিন

আপনার কমেন্ট লিখুন
আপনার নাম লিখুন