অনন্ত অসীম | রাঙামাটি
মঙ্গলবার, (১ জুলাই ২০২৫), পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (পিসিজেএসএস) কর্তৃক প্রকাশিত অর্ধ-বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ৬ মাসে পার্বত্য চট্টগ্রামে ১০৩টি ঘটনায় ৩১৫ জন জুম্ম মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার হয়েছেন। এই রিপোর্ট অসত্য, বিভ্রান্তিমূলক এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। প্রকৃতপক্ষে, এটি একটি রাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিক অপপ্রচার কৌশলের অংশ, যা পার্বত্য চট্টগ্রামের শান্তি, সংহতি ও বাস্তব উন্নয়ন চিত্রকে কালিমালিপ্ত করার ষড়যন্ত্র হিসেবে মনে করছে স্থানীয় বাসিন্দা এবং সচেতন মহল।
১. প্রতিবেদনের বিভ্রান্তিমূলক উপস্থাপনা:
প্রতিবেদনে দাবি: সেনাবাহিনী ‘অপারেশন উত্তরণ’-এর মাধ্যমে ফ্যাসিবাদী কায়দায় অঞ্চল শাসন করছে।
বাস্তবতা: অপারেশন উত্তরণ কোনো সামরিক দমন অভিযান নয়। বরং, পার্বত্য শান্তি চুক্তি বাস্তবায়নের প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করতে এবং সশস্ত্র সংঘাতমুক্ত রাখতে নিরাপত্তা তৎপরতার একটি অংশ। পাহাড়ি ও বাঙালি নির্বিশেষে নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই এর উদ্দেশ্য। সেনাবাহিনীর উপস্থিতিই খুন, অপহরণ, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাস নিয়ন্ত্রণে রাখছে, যা পিসিজেএসএস বা ইউপিডিএফের সশস্ত্র গ্রুপের ভয়ভীতি হ্রাস করছে।
২. চুক্তি বাস্তবায়ন প্রশ্নে একপাক্ষিক অভিযোগ:
প্রতিবেদনে দাবি: চুক্তির দুই-তৃতীয়াংশ বাস্তবায়ন হয়নি।
বাস্তবতা: বাস্তবে, পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ, জেলা পরিষদ, ভূমি কমিশন, উন্নয়ন বোর্ড, এবং নির্দিষ্ট ধারা অনুযায়ী প্রশাসনিক ক্ষমতা হস্তান্তর ইতোমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে। কিছু বিষয় রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক জটিলতায় ধাপে ধাপে বাস্তবায়িত হচ্ছে। কিন্তু পিসিজেএসএস চুক্তির মূল দর্শন – সহাবস্থান ও শান্তি প্রতিষ্ঠা – বরং নিজেরাই ভঙ্গ করেছে; নিজেদের সশস্ত্র শাখা ও চাঁদাবাজি অব্যাহত রেখে।
৩. মানবাধিকার লঙ্ঘনের মিথ্যা পরিসংখ্যান:
প্রতিবেদনে দাবি: ৩১৫ জন মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার।
বাস্তবতা: এই পরিসংখ্যানের কোনো নিরপেক্ষ উৎস নেই। পিসিজেএসএস ‘ধর্মান্তর’, ‘ভূমি বেদখল’, ‘সেনা অভিযান’ – সবকিছুকেই মানবাধিকার লঙ্ঘন হিসেবে দেখায়। অথচ, ধর্মান্তর: ম্রো শিশুদের ধর্মান্তরের অভিযোগ সরাসরি ভিত্তিহীন। স্থানীয় প্রশাসন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা এমন কোনো ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেনি। বরং খ্রিস্ট ধর্মে শিক্ষা-দীক্ষা ও সহায়তার নামে ধর্মান্তর হচ্ছে, যা নিয়ে রহস্যজনকভাবে নিশ্চুপ।
ভূমি বেদখল: প্রকৃতপক্ষে উন্নয়ন প্রকল্প, অবৈধ দখল উচ্ছেদ, এবং জায়গা-জমি বিরোধের বৈধ নিষ্পত্তিকে ‘ভূমি বেদখল’ হিসেবে চালানো হচ্ছে।
সেনা অভিযান: প্রতিটি অভিযান অস্ত্র উদ্ধার, অপহৃতদের উদ্ধার এবং চাঁদাবাজি দমনের জন্য বৈধ ও ন্যায়সঙ্গত।
৪. রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ও বিদ্বেষমূলক প্রচারণা:
পিসিজেএসএস এর মূল লক্ষ্য এখন আর পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর কল্যাণ নয়, বরং একটি ‘আদিবাসী রাষ্ট্র’ গঠন এবং বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বকে চ্যালেঞ্জ করা।
এ ধরনের ‘মানবাধিকার রিপোর্ট’ আন্তর্জাতিক মহলে সহানুভূতি আদায়ের জন্য একটি প্রচার কৌশল, যাতে উন্নয়ন প্রকল্প বন্ধ হয়, নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে জনমত গড়ে ওঠে, এবং তারা নিজেরা রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে পারে।
৫. বাস্তব চিত্র: শান্তি ও উন্নয়ন:
গত ৬ মাসে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী গ্রুপের তৎপরতা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অবকাঠামো ও বিদ্যুৎ খাতে অগ্রগতি হয়েছে।সেনাবাহিনী মাদক, অবৈধ অস্ত্র ব্যবসা ও চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়েছে, যা স্থানীয় জনগণকে স্বস্তি দিয়েছে। ম্রো, চাক, খিয়াং, বমসহ ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর মৌলিক অধিকার ও নিরাপত্তা সংরক্ষণে সরকার কাজ করে চলেছে।
৬. প্রতিবাদ ও আহ্বান:
পিসিজেএসএস’র এই বিভ্রান্তিমূলক রিপোর্ট পার্বত্য চট্টগ্রামের স্থিতিশীলতা ও সম্প্রীতি নষ্ট করার প্রচেষ্টা বলে মনে করেন, স্থানীয় পাহাড়ি ও বাঙালি বাসিন্দারা।
এদিকে সচেতন মহল, পিসিজেএসএস’র অসত্য তথ্য ছড়ানো বন্ধের আহ্বান জানায়। জনগণ ও সরকারের মধ্যে বিদ্বেষ সৃষ্টি না করে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের পথে আসার অনুরোধ জানায়। সশস্ত্র রাজনীতি ও চাঁদাবাজির অবসান ঘটিয়ে প্রকৃত গণতান্ত্রিক ধারায় ফিরে আসতে আহ্বান জানায়।
মানবাধিকার কর্মীরা মনে করেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম বাংলাদেশের অবিচ্ছেদ্য অংশ। এখানে সকল নাগরিকের সমান অধিকার আছে। উন্নয়ন, শান্তি ও নিরাপত্তার এ অগ্রযাত্রায় কোনো অপপ্রচার, কোনো মিথ্যাচার আর বিভ্রান্তি বাংলাদেশের অগ্রগতি রুখতে পারবে না।