উপজাতি থেকে ‘আদিবাসী’ – বাংলাদেশে এক ভয়ংকর ষড়যন্ত্রের আভাস।

0
ছবি সংগৃহীত: মনিরা ত্রিপুরা (বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম) প্রতিনিধি

মনিরা ত্রিপুরা সম্প্রতি সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় জাতিসংঘের এমরিপ (EMRIP)-এর ফোরামে বাংলাদেশের উপজাতিদের ‘আদিবাসী’ হিসেবে স্বীকৃতির জন্য জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে সম্পৃক্ত করার আহ্বান জানিয়েছেন। ১৫ জুলাই এজেন্ডা “আইটেম ৮: ঘোষণাপত্রের চূড়ান্ত লক্ষ্য অর্জনের ক্ষেত্রে জাতীয় ও আঞ্চলিক মানবাধিকার প্রতিষ্ঠানসমূহের ভূমিকা বিষয়ে প্যানেল আলোচনা” বিষয়ে মনিরা ত্রিপুরা তার বক্তব্য উপস্থাপন করেন। ১৮ তম অধিবেশন ১৪ জুলাই থেকে শুরু হয়ে ১৮ জুলাই পর্যন্ত চলবে৷ বাংলাদেশ “আদিবাসী যুব ফোরাম” এর মনিরা ত্রিপুরা ও টনি চরান এবং জেএসএস প্রতিনিধি অগাস্টিনা চাকমা এমরিপের এই ১৮তম অধিবেশনে অংশগ্রহণ করছেন। জাতিসংঘে উপজাতিদের দাবিগুলো শুনলে মনে হবে বঞ্চিত কোনো গোষ্ঠীর ন্যায়সংগত দাবি। কিন্তু বাস্তব ইতিহাস ভয়াবহ ও ভিন্নতর।

পাঠকমহলের জ্ঞাতার্থে উপজাতিরা আদিবাসী দাবির পেছনের কারণগুলো জানতে ইতিহাস, আন্তর্জাতিক আইন ও দেশের সংবিধান নিয়ে ব্লগে আলোচনা করছি—

১. উপজাতি কে এবং কোথা থেকে এলো?

বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম, বিশেষত রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবানের উপজাতিগোষ্ঠীসমূহ কখনোই এ ভূখণ্ডের আদি অধিবাসী নয়। ব্রিটিশ প্রশাসনের রেকর্ড, বেঙ্গল গেজেটিয়ার, পার্বত্য জেলা ম্যানুয়াল, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির নথি এবং ১৯০০ সালের পার্বত্য চট্টগ্রাম ম্যানুয়াল স্পষ্ট করে বলেছে: এই অঞ্চলের প্রাচীন অধিবাসী ছিলেন আর্য-মঙ্গোল সংকর বাঙালি জনগোষ্ঠী। চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, ম্রো প্রভৃতি সম্প্রদায়ের উল্লেখ পাওয়া যায় ১৭০০ সালের পর থেকে, যখন বার্মা ও ত্রিপুরা রাজ্য থেকে তারা এ অঞ্চলে অভিবাসন শুরু করে।

ব্রিটিশরা ১৮৬০ সালের পার্বত্য জেলা আইনে তাদের ‘ইমিগ্র্যান্ট ট্রাইবস’ অর্থাৎ অভিবাসী উপজাতি হিসেবে অভিহিত করে, স্থানীয় জনগোষ্ঠী নয়। সূত্র (পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসনবিধি ৫২)

২. পার্বত্য চুক্তি – উপজাতি স্বীকৃতি, আদিবাসী নয়:

১৯৯৭ সালের পার্বত্য চুক্তি ও পরবর্তী সংবিধান সংশোধনে তাদেরকে উপজাতি/ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী/জাতিসত্তা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। ‘আদিবাসী’ স্বীকৃতি নেই। কারণ, ইতিহাস অনুযায়ী এ ভূখণ্ডে একটি মাত্র আদি জনগোষ্ঠী – বাঙালি।

ভারত ও পাকিস্তান সৃষ্টির সময়ও তাদের ‘উপজাতি’ পরিচয়ই সংবিধানিকভাবে সংরক্ষিত ছিল।

৩. আইএলও কনভেনশন ও ইউএনডিআরআইপি এর অপব্যাখ্যা:

এনজিও এবং আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলোর প্ররোচনায় উপজাতিরা ‘আদিবাসী’ পরিচয়কে অধিকার আদায়ের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। অথচ, আইএলও কনভেনশন ১০৭ ও ১৬৯ ধারা বলছে, যে কোনো রাষ্ট্র স্বতন্ত্রভাবে নির্ধারণ করবে কারা আদিবাসী হিসেবে স্বীকৃত হবে।

বাংলাদেশ সরকার এই কনভেনশনে স্বাক্ষর করেনি। তাছাড়া UNDRIP-এর (United Nations Declaration on the Rights of Indigenous Peoples) Article 33 বলছে, রাষ্ট্রের নিজস্ব সংবিধানই সর্বোচ্চ।

৪. ভয়ংকর আন্তর্জাতিক এজেন্ডা—

‘আদিবাসী’ স্বীকৃতির পিছনে রয়েছে সুদূরপ্রসারী ষড়যন্ত্র:

১. আন্তর্জাতিক আইনে ‘আদিবাসী’ স্বীকৃতি পেলে তাদেরকে ভূমি ও খনিজ সম্পদের সার্বভৌম অধিকার দাবি করার সুযোগ তৈরি হয়। বাংলাদেশের সংবিধান ও প্রশাসনের হাত দুর্বল হয়ে পড়ে।

২. ভারত, পশ্চিমের NGO ও চার্চ মিশনারি সমর্থিত লবি দীর্ঘদিন ধরে পার্বত্য চট্টগ্রামকে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের বাইরে বিশেষ অঞ্চল কিংবা আলাদা রূপান্তরের স্বপ্ন লালন করছে।

৫. উপজাতিদের ‘বাঙালি নয়’ দাবির মূলে বিভাজনের রাজনীতি:

মনিরা ত্রিপুরা বলেছেন, “উপজাতিরা বাঙালি নয়, তাদের স্বতন্ত্র জাতিসত্তা আছে।” অথচ, বাংলাদেশের সংবিধান, উপজাতি ও বাঙালি তথা জাতীয়তা ভিত্তিতে সকলকে বাংলাদেশী হিসেবে সংজ্ঞায়িত করেছে। যেমন, আমেরিকান নাগরিকদের মধ্যে আফ্রো-আমেরিকান, হিসপানিক, এশিয়ান আছে, তবুও সবাই আমেরিকান।

এ দাবি আসলে বাঙালি রাষ্ট্রবিরোধী স্লোগান, যা ভারত ও পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলির ‘ভূমি-সংকট তত্ত্ব’ বাস্তবায়নের অংশ।

৬. সাংবিধানিক, রাজনৈতিক ও কৌশলগত বিপদ:

পার্বত্য চট্টগ্রামে ভারত-চীন-যুক্তরাষ্ট্রের ভূরাজনৈতিক সংঘাত ও বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর কার্যকলাপের পটভূমিতে, উপজাতিদের আদিবাসী স্বীকৃতি বাংলাদেশের অখণ্ডতা ও নিরাপত্তার জন্য হুমকি।

‘আদিবাসী’ দাবির আড়ালে লুকানো সত্য—‘আদিবাসী স্বীকৃতি’ হলো: বাংলাদেশের ভূখণ্ডকে দ্বিখণ্ডিত করার কৌশল, আন্তর্জাতিক আইনে আত্মনিয়ন্ত্রণ, ভূমি-সম্পদ ও স্বশাসন দাবি করার সুযোগ, বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সংবিধান ও ইতিহাসের বিরুদ্ধে ভয়ংকর আঘাত।

তাদের দাবি উপজাতি হিসেবে নয়, আদি অধিবাসী হিসেবে – যা প্রমাণিত ইতিহাসকে সম্পূর্ণ অস্বীকার করে।

 

আগের পোস্টজাতিসংঘে প্রোপাগান্ডার নিসর্গে অগাস্টিনা চাকমার নির্মম বিকৃতি।
পরের পোস্টমানিকছড়িতে অপহরণের ১২ দিন পর বাঙালি কিশোরের অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার।

রিপ্লাই দিন

আপনার কমেন্ট লিখুন
আপনার নাম লিখুন