জাতিসংঘে প্রোপাগান্ডার নিসর্গে অগাস্টিনা চাকমার নির্মম বিকৃতি।

0
ছবি: সংগৃহীত অগাস্টিনা চাকমা (সন্তু লারমার নাতনী)

গত ১৫ জুলাই মঙ্গলবার, জেনেভায় জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলে EMRIP-এর ১৮তম অধিবেশনে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (পিসিজেএসএস) প্রতিনিধি অগাস্টিনা চাকমা যে বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন, তা ছিল একটি পুরনো, জীর্ণ, কিন্তু ভয়ংকরভাবে পরিকল্পিত মিথ্যাচার ও প্রপাগান্ডার পুনরাবৃত্তি। যে বক্তব্যে একবারের জন্যও তার ‘অধিকারকামী’ মুখোশের আড়ালে লুকানো সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, হত্যা, অপহরণ, এবং চুক্তি লঙ্ঘনের ভয়াবহতার কথা উচ্চারিত হয়নি।

অগাস্টিনা বলেন, “আমি পার্বত্য চট্টগ্রামে বেড়ে উঠি নাই।”
অথচ, পাহাড় তথা বাংলাদেশে জন্মানো ও বেড়ে ওঠা বাঙালি, যারা ৪ হাজার বছর থেকে এই ভূখণ্ডে বংশানুক্রমে বসবাস করছে, তাদের কথাকে তিনি পাহাড়ে রাষ্ট্রায়ত্ত দখল বা জনসংখ্যা স্থানান্তর বলে আখ্যায়িত করেন। পাহাড়ে না জন্মানো সত্ত্বেও, তার এই বেদনাময় নাট্যকাব্য রচনা পিসিজেএসএস-এর রাজনৈতিক প্রপাগান্ডা ও আন্তর্জাতিক অর্থায়ন প্রাপ্তির জন্য নতুন কোনো ফাঁদ নয় কি?

তিনি জাতিসংঘের কাছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ‘অপারেশন উত্তরণ’ প্রত্যাহারের দাবি জানান। অথচ সবাই জানে, ২০০১ সালে এই অপারেশন শুরু হওয়ার পর পার্বত্য চট্টগ্রামে আঞ্চলিক সশস্ত্র সংগঠনগুলোর গণহত্যা, চাঁদাবাজি, ধর্ষণ, অপহরণ, মুক্তিপণ ব্যবসা এবং বাঙালি-উপজাতি উভয় জনগোষ্ঠীর রক্তপাত অনেকাংশে হ্রাস পায়। পাহাড়ে সামরিক উপস্থিতি ছাড়া একদিনও শান্তি সম্ভব নয়, বরং উল্টো সেনা প্রত্যাহার মানে হবে গেরিলা রাজত্ব, রক্তপাত এবং সীমান্তবর্তী রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা হুমকি।

মানবাধিকার ব্যাজের কথা বললেও সন্ত্রাসী লাশের কথা বলেন না তিনি:

অগাস্টিনা চাকমা বলেন, “বিদেশে শান্তিরক্ষী বাহিনী নিজের দেশে শান্তি রক্ষা করে না।”
কিন্তু তিনি বলেন না যে, পাহাড়ে তার সমর্থিত গোষ্ঠী পিসিজেএসএস এবং ইউপিডিএফের আঞ্চলিক বাহিনী হাজার হাজার কোটি টাকার চাঁদা তুলে শিশু শিক্ষার পরিবর্তে অস্ত্র কেনে।
তিনি বলেন না, বাঙালি বেসামরিক ব্যবসায়ী ও দিনমজুরদের চোখের সামনে গুলি করে হত্যার ভয়াবহতা।
তিনি বলেন না, পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর মধ্যেই যারা ভিন্নমত পোষণ করে, তাদের লাশ পাওয়া যায় জঙ্গলের ঝোঁপে, বাঁশঝাড়ে।

শান্তিচুক্তি লঙ্ঘনের দায় কার?

১৯৯৭ সালের চুক্তির পর রাষ্ট্র তার পক্ষে সেনা কমিয়েছে, অস্ত্র সমর্পণের আহ্বান জানিয়েছে, জেলা পরিষদ উপজাতীয়করণ, আঞ্চলিক পরিষদসহ বহু প্রতিষ্ঠান দিয়েছে। অথচ সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা কখনোই আত্মসমর্পণ করেনি। বরং সাইনবোর্ডে রাজনৈতিক দল, ভিতরে AK-47 এবং M-16 রাইফেল। পাহাড়ের হাজার হাজার সাধারণ মানুষ দিনের পর দিন চাঁদা, ধর্ষণ ও অপহরণ আতঙ্কে নিঃশেষিত। চুক্তির চরম লঙ্ঘনকারীরা তারাই।

জাতিসংঘে কেন এই ভয়ংকর মিথ্যাচার?

এটি একটি স্পষ্ট কৌশল। আন্তর্জাতিক ফোরামে নির্যাতনের গল্প দেখিয়ে বিদেশি এনজিও অর্থায়ন, আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপ আহ্বান এবং বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ‘গণহত্যা’ প্রপাগান্ডা তৈরি করা।
এই নীলনকশা নতুন নয়। এটি হচ্ছে ‘গেরিলা ডিপ্লোম্যাসি’।
পিসিজেএসএস এর নেতৃত্ব জানে, পাহাড়ে সত্যিকারের শান্তি এলে তাদের অস্তিত্ব এবং আয়-রোজগার উভয়ই শেষ হবে। তাদের অস্তিত্ব নির্ভর করে পাহাড়ে ভয়, বিভাজন, রক্ত এবং বুলেটের উপর।

তিনি এই ফোরামে “আদিবাসী বিষয়ক ঘোষণাপত্র” নিয়ে আদিবাসী পরিচয়ে বক্তব্য প্রদান করেছেন, অথচ বাস্তবে তিনি আদিবাসী নন। তার এই পরিচয় গ্রহণ একটি ভয়ংকর বিভ্রান্তি ও প্রতারণা, যা আন্তর্জাতিক ফোরামে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় বাস্তবতা বিকৃত করার উদ্দেশ্যেই রচিত।

সম্প্রতি জানা গেছে, ইউপিডিএফ তাদের প্রতিনিধির মাধ্যমে জাতিসংঘের ফোরামে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস)-এর প্রতিনিধিদের প্রবেশ নিষিদ্ধের দাবি জানিয়েছে। ইউপিডিএফ-এর পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয় যে, জেএসএস পার্বত্য চট্টগ্রামে মানবাধিকার লঙ্ঘন, হত্যা, অপহরণসহ ভয়াবহ অপরাধমূলক কার্যকলাপে যুক্ত।

সচেতন মহল এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের বাসিন্দারা মনে করেন, পাহাড় রক্ষা করতে হলে অপারেশন উত্তরণ নয়, বরং তাদের অস্ত্র অপসারণ করতে হবে। অগাস্টিনা চাকমা পাহাড়ে শান্তির কথা বলেন, কিন্তু তাদের রাজনীতি, অস্ত্র, চাঁদাবাজি এবং বিভাজন বন্ধের কথা বলেন না। শান্তির জন্য সেনা নয়, সন্ত্রাসী বাহিনী প্রত্যাহার করতে হবে।
নইলে পাহাড়ে শান্তির কফিনেই শেষ পেরেক ঠুকে যাবে। এবং মনে রাখতে হবে, শান্তি কেবল আন্তর্জাতিক কনফারেন্সে বক্তৃতা দিয়ে আসে না, আসে মাটির মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে।

আগের পোস্টপাহাড়ে শান্তির পথে বড় বাধা জেএসএস– চুক্তির আড়ালে সন্ত্রাসের রাজনীতি।
পরের পোস্টউপজাতি থেকে ‘আদিবাসী’ – বাংলাদেশে এক ভয়ংকর ষড়যন্ত্রের আভাস।

রিপ্লাই দিন

আপনার কমেন্ট লিখুন
আপনার নাম লিখুন