নিউজ ডেস্ক
পার্বত্য খাগড়াছড়িতে ১৪ বছরের উপজাতি এক কিশোরীকে দলবদ্ধ কথিত ধর্ষণের অভিযোগে মামলা হয়েছে। গতকাল বুধবার রাত ১২টার দিকে ওই মেয়ের বাবা বাদী হয়ে ছয়জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন।
মামলা হওয়ার পরপরই অভিযুক্ত চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন সদর উপজেলার একটি ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি আরমান হোসেন (৩২), সদস্য ইমন হোসেন (২৫) ও এনায়েত হোসেন (৩৫) এবং শ্রমিক দলের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন (৩২)। মামলার বাকি দুই আসামি হলেন একটি ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. মুনির ইসলাম (২৯) ও ছাত্রদলের সহসাংগঠনিক সম্পাদক মো. সোহেল ইসলাম (২৩)। তাঁরা পলাতক বলে পুলিশ জানিয়েছে।
তবে অভিযুক্ত ব্যক্তিরা নিজেদের কর্মী নয় বলে দাবি করেন খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এম এন আবছার। তিনি বলেন, ‘এ ছয়জন আমাদের কোনো কর্মী বা নেতা নয়। অপরাধী যে দলের হোক না কেন, এর বিচার হওয়া উচিত। আমি এবং আমাদের জেলা বিএনপির পক্ষ থেকে এ ঘটনার সুষ্ঠু ও সঠিক বিচার চাই।’
কিন্তু স্থানীয়রা দাবি করছে, দলবদ্ধ ধর্ষণে অভিযুক্তরা বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত।
ভুক্তভোগী কিশোরী বর্তমানে খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, গত ২৭ জুন রথযাত্রার মেলায় অংশ নেওয়ার পর রাতে এক আত্মীয়ের বাড়িতে ছিল ওই কিশোরী। সেখানে গভীর রাতে ছয়জন ওই ছাত্রীকে ধর্ষণ করেন। এ সময় ছাত্রীর আত্মীয়কে বেঁধে রাখা হয়েছিল।
ভুক্তভোগী কিশোরীর পরিবারের সদস্যরা বলেন, সামাজিক লজ্জা ও ভয়ভীতির কারণে ওই ছাত্রী প্রথমে পরিবারকে কিছু জানায়নি। তবে এ ঘটনায় মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে গত শনিবার বিষ পান করে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিল মেয়েটি। পরে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর মেয়েটি পরিবারের লোকজনকে বিষয়টি জানায়।
জানতে চাইলে খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা রিপল বাপ্পি চাকমা বলেন, কিশোরী শিক্ষার্থীর অবস্থা গুরুতর। সে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। তাকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার আরোফিন জুয়েল বলেন, শিক্ষার্থীর বাবার মামলার পরপরই চার আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকি দুজনকেও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা যায়, ওদিন একটি বদ্ধ করে কিশোরকে স্বজাতি এক যুবকের সঙ্গে আপত্তিকর অবস্থায় পাওয়া যায়৷ অভিযুক্ত ৬ বাঙালি যুবক তাদের হাতেনাতে আটক করেন৷ কিশোরীর সঙ্গে উপজাতি যুবকের এই সংক্রান্ত জিজ্ঞাসাবাদের একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় পাওয়া যায়। সেখানে বাঙালি যুবকরা তাদের জেরা করেন। এখন পর্যন্ত স্পষ্ট নয়, বাঙালি ৬ যুবক কিশোরকে ধর্ষণ করেছে কিনা? নাকি স্বজাতি কর্তৃক আপত্তিকর ঘটনা ধামাচাপা দিতে বাঙালিদের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ সাজিয়েছে তাও অস্পষ্ট৷ স্থানীয়রা বলছেন এটির প্রকৃত ঘটনা জানতে গভীর তদন্তের প্রয়োজন।
কিশোরী গণধর্ষণের প্রতিবাদে উপজাতি সংগঠনগুলো তিন পার্বত্য জেলার পাশাপাশি ঢাকা-চট্টগ্রাম বিক্ষোভ সমাবেশ পালন করে যাচ্ছে৷ এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তা নিয়ে প্রতিবাদে সবর হয়েছে৷ কিন্তু আসামী গ্রেপ্তার হওয়ার পর এবং অভিযান চলমান থাকার পরও এই নিয়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করার চেষ্টা করার অভিযোগ উঠে সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে৷