অপহৃত ৪ টেলিকম কর্মীকে দ্রুত ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি: প্রশাসনের বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগ।

0

পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে এপ্রিল মাস থেকে ধারাবাহিকভাবে অপহৃত হওয়া মোবাইল টাওয়ার রক্ষণাবেক্ষণে নিয়োজিত চার টেলিকম কর্মীর এখনো খোঁজ মেলেনি। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে দ্রুত তাদের পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ প্রাইভেট টেলিকমিনিউকেশন কর্মচারী ইউনিয়ন।

সোমবার (২৮ জুলাই) রাজধানীর সেগুনবাগিচায় রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে অপহৃতদের দ্রুত পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানায় বাংলাদেশ প্রাইভেট টেলিকমিনিউকেশন কর্মচারী ইউনিয়ন।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, অপহরণের প্রথম ঘটনা ঘটে গত ১৯ এপ্রিল, খাগড়াছড়ি জেলার মানিকছড়ি উপজেলায়। সেদিন সকাল ১১টার দিকে মোবাইল কোম্পানি রবি আজিয়াটা লিমিটেডের টাওয়ার সচল রাখার দায়িত্বে নিয়োজিত ইডটকো বাংলাদেশ লিমিটেড এবং সার্বস কমিউনিকেশন লিমিটেডের অধীনে কাজ করা দুই টেলিকম কর্মী মো. ইসমাইল মিয়া ও আবে মারমাকে সন্ত্রাসীরা ময়ুরখালী এলাকার একটি রবি টাওয়ার থেকে অপহরণ করে। বিকেলে অপহরণকারীরা একটি মোবাইল নম্বর (০১৬১৩১৯৫৮৬৩) থেকে ইসমাইলের বাবার ফোনে যোগাযোগ করে অপহরণের বিষয়টি জানিয়ে রবি ও ইডটকো অফিসের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলে। এরপর থেকেই নিখোঁজ রয়েছেন ওই দুই শ্রমিক।

পরবর্তীতে ৫ জুন, চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি থানার লেলাং ইউনিয়নের কর্ণফুলী বাজার এলাকায় রবি টাওয়ারে কাজ করার সময় একইভাবে অপহৃত হন আরও দুই টেলিকম কর্মী—মোহাম্মদ সুমন ইসলাম (৩২) ও আব্দুর রহিম (৩৬)। সেদিন সন্ধ্যা ৭টার দিকে সার্বস কমিউনিকেশনের চট্টগ্রাম অঞ্চলের ম্যানেজার সোহেব সুমনের বাবাকে ফোন করে জানান, তার ছেলেকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এ ঘটনায় চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হলেও, তারপর থেকে তারা নিখোঁজ রয়েছেন।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত টেলিকম ইউনিয়নের সভাপতি মো. মাকসুদুর রহমান রাকিব বলেন, রবি আজিয়াটা, ইডটকো এবং সার্বস কমিউনিকেশন লিমিটেড বারবার মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে সময়ক্ষেপণ করছে। অপহরণ বিষয়ে থানা ও প্রশাসনকে জানানো হলেও তারা কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। এর ফলে চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন দেশের মোবাইল নেটওয়ার্ক সেবায় নিয়োজিত সহস্রাধিক টেলিকম কর্মী।

সংগঠনের পক্ষ থেকে আরও বলা হয়, সন্ত্রাসীরা সরাসরি কর্মরত শ্রমিকদের অপহরণ করে মুক্তিপণ দাবি করছে, যা শুধু ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নয়, বরং জাতীয় টেলিযোগাযোগ অবকাঠামোর ওপর বড় হুমকি। গত দুই মাসে খাগড়াছড়ি ও চট্টগ্রামে চারজন কর্মী অপহৃত হয়েছেন, তাদের কেউই আজ পর্যন্ত উদ্ধার হয় নি। পরিবারগুলো প্রতিনিয়ত কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ করলেও আশ্বাস ছাড়া আর কিছু মেলেনি।

সংবাদ সম্মেলনে দাবি করা হয়েছে, ইসমাইল মিয়া ও আবে মারমার অপহরণ বিষয়ে খাগড়াছড়ি জেলার মানিকছড়ি থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে। (জিডি নম্বর: ৭৯০, তারিখ: ২০ এপ্রিল ২০২৫, ট্র্যাকিং নম্বর: 16YVBSK)। অপরদিকে, সুমন ও রহিমের বিষয়ে ফটিকছড়ি থানায় করা জিডির নম্বর ২৬৫, তারিখ: ৬ জুন ২০২৫, ট্র্যাকিং নম্বর: N3JPSB। তবে দুই ক্ষেত্রেই থানার ভূমিকা এখন পর্যন্ত নিষ্ক্রীয় বলে অভিযোগ উঠেছে।

সংগঠনের ভাষ্য অনুযায়ী, পাহাড়ি অঞ্চলে টাওয়ার স্থাপন ও রক্ষণাবেক্ষণে স্থানীয় কিছু গোষ্ঠীর সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে টানাপোড়েন চলে আসছে। পূর্বেও এমন অপহরণের ঘটনা ঘটেছে, যা স্থানীয়ভাবে মীমাংসা হয়েছে। তবে এবার কোম্পানিগুলো একদিকে অপহরণকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলছে, অন্যদিকে নিজেরাই দায়িত্ব এড়াতে ব্যস্ত। এমন অবস্থায় পরিবার ও সহকর্মীরা দ্বিধা-উৎকণ্ঠার মধ্যে রয়েছেন।

সংবাদ সম্মেলনে পাঁচ দফা দাবি তুলে ধরা হয়:

এগুলো হলো- অপহৃত চারজন টেলিকম কর্মীকে অবিলম্বে জীবিত ও সুস্থ অবস্থায় উদ্ধারের জন্য রাষ্ট্রীয় পদক্ষেপ, অপহরণকারীদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা, পার্বত্য এলাকায় কর্মরত টেলিকম শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, টাওয়ার পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর জবাবদিহিতা ও নজরদারি বৃদ্ধি করা এবং প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দ্রুত ও আন্তরিক পদক্ষেপ নিশ্চিত করা।

এ বিষয়ে মানিকছড়ি থানার এসআই এসএম সাদ্দাম হোসেন ঢাকা মেইলকে বলেন, এটা দুর্গম পাহাড়ি এলাকা। আমরা অভিযান চালাচ্ছি। উদ্ধারে চেষ্টা করছি।

আগের পোস্টরাঙামাটিতে ইউপিডিএফ আস্তানায় সেনা অভিযান, গোলাগুলি, সরঞ্জামাদি ও অস্ত্র উদ্ধার।
পরের পোস্টপাহাড়ে ৪ হাজার সন্ত্রাসীর হাতে ভারী আগ্নেয়াস্ত্র।

রিপ্লাই দিন

আপনার কমেন্ট লিখুন
আপনার নাম লিখুন