পার্বত্য প্রেক্ষাপটে ইয়েন ইয়েন রাখাইন বিতর্কিত রাজনৈতিক দূরভিসন্ধি: রাষ্ট্রবিরোধী প্রপঞ্চের অনুসন্ধান

0

বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব সীমান্তবর্তী পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে যে একটি সুপরিকল্পিত, সুদূরপ্রসারী, এবং দুরভিসন্ধিমূলক রাষ্ট্রবিরোধী চক্রান্ত দৃশ্যমান, তা আজ আর নিছক অনুমাননির্ভর নয়, বরং তা এক কঠিন বাস্তবতা। আর এই বাস্তবতাকে প্রবলভাবে উসকে দিচ্ছেন এক বিতর্কিত নারীর নাম—ইয়েন ইয়েন রাখাইন। চাকমা সার্কেলের আনুষ্ঠানিক প্রধান ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায়ের তথাকথিত দ্বিতীয় স্ত্রী হিসেবে পরিচিত ইয়েন ইয়েন বর্তমানে এক সুনিপুণ রাষ্ট্রবিরোধী প্রচারযজ্ঞের কান্ডারী।

২ জুলাই, ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সম্মুখে অনুষ্ঠিত তথাকথিত “দ্রোহযাত্রা” নামে এক বামঘেঁষা সমাবেশ ছিল তার এই ষড়যন্ত্রের সাম্প্রতিকতম অনুশীলনভূমি। উক্ত যাত্রায় তিনি ব্যানার, ফেস্টুন, পোস্টার এবং স্লোগানে সেনাবাহিনীবিরোধী ও বাঙালি জনগোষ্ঠীবিরোধী অপপ্রচার চালান। তার সাথে সমতলের তথাকথিত সুশীল সমাজ ও মানবাধিকার কর্মীদের একাংশও মিথ্যা তথ্যের বিস্তার ঘটিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের বাস্তবতা বিকৃত করতে উদ্যত হয়।

চাকমা জাতির রীতিনীতি, গোষ্ঠীগত সাংস্কৃতিক ধারাবাহিকতা এবং পারিবারিক ঐতিহ্যের আলোকে দেখা যায়—চাকমা সার্কেল চিফের দ্বিতীয় বিয়ে সামাজিকভাবে গৃহীত হয়নি। ইয়েন ইয়েন, একজন রাখাইন বংশোদ্ভূত নারী, যার পূর্বপুরুষ বার্মিজ জনগোষ্ঠীর অন্তর্গত বলে বহুবার আলোচনা ও সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এসেছেন। এই বিয়েকে ঘিরে দেবাশীষ রায়ের প্রথম স্ত্রী তাতু রায়ের সন্তানদের মধ্যে বিরোধ, পারিবারিক বিভাজন এবং সামাজিক অস্বস্তি এতটাই প্রকট যে, একে একধরনের সাংস্কৃতিক বিঘ্ন ও সামাজিক বহিরাগত আগ্রাসন বললেও অত্যুক্তি হবে না। ইয়েন মনে করেন, তার পুত্র এই সার্কেলে দায়িত্ব পাবে না প্রথম স্ত্রীদের পুত্রের কারণে।

ইয়েন ইয়েনের কুটচাল মার্কা রাজনৈতিক প্রপঞ্চের সূচনাও এই অস্বীকৃত পারিবারিক পরিচয়ের প্রেক্ষাপটে হয়েছে বলেই বিশ্লেষকরা মনে করেন। পারিবারিক ও সামাজিক বৈধতা না পাওয়ার ক্ষোভকে পুঁজি করে তিনি বর্তমানে এক শ্রেণির উপজাতি উগ্রপন্থীর আস্থাভাজন হতে মরিয়া।

নিরীহ জনগণ নয়, সেনাবাহিনী তার টার্গেট:

পার্বত্য চট্টগ্রামে দীর্ঘকাল যাবৎ সক্রিয় বিচ্ছিন্নতাবাদী ও সশস্ত্র উপজাতি গোষ্ঠীগুলো নানা সময় অপহরণ, খুন, ধর্ষণ এবং সশস্ত্র হামলার মাধ্যমে আঞ্চলিক অস্থিরতা সৃষ্টির অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এদের নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনী ও অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনী আইনানুগ অভিযান পরিচালনা করে আসছে। কিন্তু ইয়েন ইয়েন রাখাইন কোনো অজ্ঞাত কারণে এই সশস্ত্র অপশক্তিকে আড়াল করে বরং নিরাপত্তা বাহিনীকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেছেন।

বান্দরবানে সশস্ত্র গোষ্ঠী কেএনএফ কর্তৃক জঙ্গি গোষ্ঠীকে প্রশিক্ষণ ও ব্যাংক ডাকাতি, ম্যানেজার অপহরণ এবং অস্ত্র লুণ্ঠনের ঘটনার পর নিরাপত্তা বাহিনী অভিযানে নামে। এই অভিযানে আটকের ঘটনা ঘটে৷ জেলবন্দি কিছু আটক ব্যক্তির মৃত্যু হলেও তা নিয়ে সুষ্ঠু তদন্ত কিংবা মেডিকেল রিপোর্ট আসার আগেই ইয়েন ইয়েন আন্তর্জাতিক মহলে অপপ্রচারে নেমে যান—যেন এই মৃত্যুগুলো পূর্বপরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। কিন্তু একই সময়ে যখন পাহাড়ি নারীরা নিজেদের স্বজাতি কর্তৃক ধর্ষণের শিকার হন, বা স্থানীয় উপজাতি সন্ত্রাসীরা পাহাড়ি ও বাঙালিকে গুলি করে হত্যা করে, তখন ইয়েন ইয়েন নির্বাক থাকেন—এ এক নির্লজ্জ পক্ষপাতিত্ব।

মানবাধিকার নয়, প্রকৃত উদ্দেশ্য চাকমা ল্যান্ড প্রতিষ্ঠা?

ইয়েন ইয়েনের মূল লক্ষ্য হলো একটি কল্পিত “চাকমা ল্যান্ড” প্রতিষ্ঠা করা—যা জাতীয় ঐক্য, সংবিধান ও ভূখণ্ডগত অখণ্ডতার প্রতি এক সরাসরি চ্যালেঞ্জ। তার ব্যানারে, বক্তব্যে, পোস্টারে এই ভূ-রাজনৈতিক অভিসন্ধির ছায়া সুস্পষ্ট। তিনি যখন নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে কণ্ঠ তুলে ধরেন, তখন তার বক্তব্যে “জাতিসংঘ”, “আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়”, “অধিকার” ইত্যাদি শব্দগুচ্ছ উঠে আসে; কিন্তু তার ভাষণে “বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব”, “রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা”, “আইনানুগতা”—এই জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াবলির কোনো স্থান নেই।

ইয়েন ইয়েন রাখানের এজেন্ডা সেই পশ্চিমা এনজিও সমর্থিত উপজাতি রাজনীতির অংশ, যাদের উদ্দেশ্য পাহাড়ে বিচ্ছিন্নতা জিইয়ে রাখা এবং রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্ব দুর্বল করে সেনাবাহিনীর হাত গুটিয়ে নেওয়া।

জনগণের ট্যাক্সে রাজকীয়তা, অথচ প্রতিদান শত্রুতায়:

চাকমা সার্কেল চিফের ক্ষমতা আসলে একটি তথাকথিত ঐতিহাসিক ধারা থেকে রূপান্তরিত প্রশাসনিক অবস্থান, যার মাধ্যমে সার্কেল চিফ সরকারকে সহযোগিতার ভিত্তিতে রাজস্ব আদায় করে থাকেন। এই ক্ষমতা রাষ্ট্রের অনুগ্রহে টিকে আছে। অথচ এই সুযোগকে ব্যবহার করে দেবাশীষ রায় ও ইয়েন ইয়েন নিজেদের এলিট বৃত্ত রক্ষা ও উপজাতি উগ্রপন্থীদের প্রশ্রয় দিতে ব্যস্ত। পার্বত্য চট্টগ্রামের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গিয়ে যে সেনাবাহিনী রক্তাক্ত হয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে প্রোপাগান্ডা চালানো যেন ইয়েন ইয়েনের নিত্যকার কর্মসূচিতে পরিণত হয়েছে।

এই পরিপ্রেক্ষিতে বহু বাঙালি অধিবাসী এবং শান্তিকামী পাহাড়ি নাগরিক দাবী তুলেছেন—চাকমা সার্কেল চিফের বিশেষ ক্ষমতা বাতিল করতে হবে। ইয়েন ইয়েনের রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডে যে ধরনের নৈরাজ্য দেখা যাচ্ছে, তা নিয়ন্ত্রণে আনতে না পারলে এই অঞ্চল এক নতুন সংকটের মুখোমুখি হবে।

রাষ্ট্রের ভূমিকা কী হবে?

একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রে রাষ্ট্রবিরোধী প্রচারণা, সেনাবাহিনীবিরোধী অপপ্রচার এবং পার্বত্য বিভাজন সৃষ্টিকারী প্রচেষ্টাকে কোনোভাবেই সহনীয় মনে করা যায় না। ইয়েন ইয়েন রাখাইনের কার্যকলাপ ইতোমধ্যে রাষ্ট্রের সংহতি, শান্তি ও নিরাপত্তাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। তাই এই মুহূর্তে রাষ্ট্রের উচিত—একটি নিরপেক্ষ, কঠোর ও সুসংহত নীতিমালার মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামে রাজনৈতিক, সামাজিক এবং কূটনৈতিক তৎপরতার ওপর সুস্পষ্ট নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা।

ইয়েন ইয়েন রাখান ও তার অনুসারীদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ, জাতিগত বিদ্বেষ ছড়ানো, নিরাপত্তা বাহিনীর কার্যক্রমে বাধা এবং বিদেশি সংস্থার সহায়তায় রাষ্ট্রবিরোধী প্রপাগান্ডার অভিযোগ এনে তদন্ত ও বিচারের আওতায় আনা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে হবে।

পার্বত্য চট্টগ্রাম আজ আর নিছক প্রাকৃতিক সম্পদের ভাণ্ডার নয়, এটি এখন বাংলাদেশের ভূরাজনৈতিক নিরাপত্তা ও জাতীয় অখণ্ডতার সীমানা রক্ষার কেন্দ্রবিন্দু। এই অঞ্চলে কোনো একক ব্যক্তি, যিনি বংশগতভাবে বার্মিজ, সাংস্কৃতিকভাবে বহিরাগত এবং রাজনৈতিকভাবে দুরভিসন্ধিপূর্ণ—তিনি রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে এতদূর আগাতে পারেন, তা বিস্ময়করই বটে।

ইয়েন ইয়েন রাখাইন যে কৌশলে সেনাবাহিনী ও বাঙালি জনগণের বিরুদ্ধে ঘৃণা ও বিদ্বেষ ছড়াচ্ছেন, তা একটি জাতিরাষ্ট্রের জন্য সর্বনাশা বার্তা। রাষ্ট্রের উচিত এখনই জাগ্রত হওয়া—তাকে আইনের আওতায় এনে পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি, সহাবস্থান এবং রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্ব পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা। কারণ, রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে পরিচালিত প্রতিটি ষড়যন্ত্র, প্রতিটি অপপ্রচার কেবলই একটি দেশ নয়—একটি জাতির অস্তিত্বকে আঘাত করে।

আগের পোস্টবাজার ফান্ডভুক্ত জমির ৯৯ বছরের লিজসহ ৬ দফা দাবিতে বান্দরবানে স্মারকলিপি প্রদান।
পরের পোস্টবরকলে আঞ্চলিক দলের চাঁদার কবলে নেটওয়ার্ক সংযোগ বিচ্ছিন্ন।

রিপ্লাই দিন

আপনার কমেন্ট লিখুন
আপনার নাম লিখুন