খাগড়াছড়িতে ইউপিডিএফ-এর সমাবেশে গুলিবর্ষণ, নারী আহত: আতঙ্কে শহর।

0
ছবি: আহত বৃদ্ধা নারী এবং নিচে লালবৃত্তে গুলি করার দৃশ্য

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি

খাগড়াছড়ি, ৫ আগস্ট ২০২৫ (মঙ্গলবার), পার্বত্য চট্টগ্রামে রাজনৈতিক সহিংসতার শিকার হলো আবারও সাধারণ পাহাড়ি জনগণ। ইউপিডিএফ (প্রসীত) ডাকা বিক্ষোভ সমাবেশে সশস্ত্র হামলা চালিয়েছে প্রতিপক্ষ সন্ত্রাসী গ্রুপ। খাগড়াছড়ি শহরের কেন্দ্রস্থল চেঙ্গী স্কয়ারে এই হামলায় এক নারী গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। এছাড়া আরও কয়েকজন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

ভিডিও…

আজ সকালে “ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতন দিবস” উপলক্ষে ইউপিডিএফ চেঙ্গী স্কয়ারে সমাবেশের আয়োজন করে। সশস্ত্র সংগঠনটি অবিলম্বে পার্বত্য চট্টগ্রামে পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের দাবি মেনে সংকটের স্থায়ী সমাধানের উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানায়। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা মাঠ থেকে মিছিল নিয়ে চেঙ্গী স্কয়ারে পৌঁছালে হঠাৎ করেই হামলার ঘটনা ঘটে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সমাবেশস্থলে আগে থেকে ওঁত পেতে থাকা সন্ত্রাসীরা প্রথমে গুলতি দিয়ে আক্রমণ চালায়, পরে আগ্নেয়াস্ত্র থেকে গুলি ছোঁড়ে। গুলিতে এক নারী গুরুতরভাবে আহত হন। হামলার সময় মুহূর্তেই পুরো শহরজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে, মিছিলকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ে। পথচারী থেকে সাধারণ জনসাধারণ দিকদিগন্তে ছুটতে থাকে।

ইউপিডিএফ (প্রসীত) অভিযোগ করে জানায়, তাদের এই শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি বানচাল করতে দীঘিনালা থেকে সমাবেশে যোগ দিতে আসা কর্মীদের পথিমধ্যে বাধা দেয় প্রতিপক্ষ জেএসএস (সংস্কার) এবং ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক)। দীঘিনালা, খাগড়াছড়ি সদরের জিরো মাইল ও ভাইবোনছড়ার দেওয়ানপাড়ায় সশস্ত্র ব্যক্তিরা ইউপিডিএফ সমর্থকদের বহনকারী গাড়িগুলোকে ঘিরে রাখে এবং অনেক গাড়ি জোরপূর্বক ফিরিয়ে দেয়।

ইউপিডিএফ বলেন, “আজকের হামলা ছিল পূর্বপরিকল্পিত। পাহাড়ে ফ্যাসিবাদবিরোধী গণআন্দোলনকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে ও আমাদের সাংগঠনিক উত্থান দমনে সংস্কার ও গণতান্ত্রিক নামধারী বিভাজন সৃষ্টিকারী চক্র এই হামলার মাধ্যমে প্রমাণ করেছে, তারা পাহাড়ে ঐক্য ও জনগণের নিরাপত্তার পক্ষে নয়।”

অন্যদিকে, নিজেদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করেছে জেএসএস (সংস্কার) ও ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক)। তারা দাবি করে, “এই ঘটনার সঙ্গে আমাদের কোনও সম্পৃক্ততা নেই। বরং ইউপিডিএফ (প্রসীত) ভেতরকার অভ্যন্তরীণ কোন্দল থেকেই হয়তো এই সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়েছে।”

সমাবেশে অংশ নিতে আসা অনেক সাধারণ মানুষ চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভোগার কথা জানান। একজন অংশগ্রহণকারী বলেন, “সমাবেশে আসলেও সমস্যা, না এলেও সমস্যা। ইউপিডিএফ জোর করে আমাদের নিয়ে এসেছে। এখন গুলি খাচ্ছি আমরা! আমরা সাধারণ পাহাড়িরা কোথায় যাব?”

উল্লেখ্য, সম্প্রতি পার্বত্য চট্টগ্রামে বিভিন্ন উপজাতি আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলের আধিপত্য বিস্তার ও চাঁদাবাজির ভাগবাটোয়ারা নিয়ে দ্বন্দ্ব, কোন্দল ও সহিংসতা আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে।

স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখনো আনুষ্ঠানিক কোনো বিবৃতি দেওয়া হয়নি। তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে অতিরিক্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।

ঘটনার পর পুলিশী নিরাপত্তা

এ ঘটনায় পাহাড়ি জনপদে রাজনৈতিক সহিংসতার নতুন চক্র আবারও উদ্বেগ তৈরি করলো—যেখানে অস্ত্রের মুখে জনগণের কণ্ঠরোধই যেন হয়ে উঠছে পাহাড়ি রাজনীতির অনিবার্য নিয়তি।

হামলার ঘটনার প্রতিবাদে জেলার দীঘিনালা উপজেলায় বিক্ষোভ মিছিল করেছে ইউপিডিএফ সমর্থিত পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ, হিল উইমেন্স ফেডারেশন ও গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম। এছাড়া জেলার অন্যান্য উপজেলায় বিক্ষোভ সমাবেশ করার প্রস্তুতি নিচ্ছে এবং রাঙামাটি জেলার কয়েকটি জায়গা বিক্ষোভ করবে বলে জানান ইউপিডিএফ সূত্র।

আগের পোস্টবরকলে আঞ্চলিক দলের চাঁদার কবলে নেটওয়ার্ক সংযোগ বিচ্ছিন্ন।
পরের পোস্টগায়ের চামড়া তুলে হত্যা, ১৯ বছর পর জেএসএসের বিরুদ্ধে রায়।

রিপ্লাই দিন

আপনার কমেন্ট লিখুন
আপনার নাম লিখুন