নিউজ ডেস্ক
পার্বত্য চট্টগ্রামে চুক্তি-পক্ষ জনসংহতি সমিতি (জেএসএস-সন্তু) ও চুক্তি-বিপক্ষ ইউপিডিএফ (প্রসীত) এর মধ্যে আধিপত্য বিস্তার ও চাঁদাবাজির দখলদারিত্ব নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে চরম বিরোধ বিরাজ করছে। এই বিরোধের অংশ হিসেবে ইউপিডিএফ তাদের স্বার্থ হাসিলের লক্ষ্যে ভারতের ত্রিপুরায় প্রভাব বিস্তার করে এবং পৃষ্ঠপোষকতা ও ইন্ধনের মাধ্যমে স্থানীয় জনজাতি সংগঠনকে ব্যবহার করে জেএসএস বিরোধী বিক্ষোভ আয়োজন করায়। স্থানীয় সূত্রমতে, ইউপিডিএফের চাপ ও প্ররোচনায় এই বিক্ষোভে অনেককে অংশগ্রহণে বাধ্য করা হয়।
বাংলাদেশ থেকে পিসিজেএসএস নেতা সন্তু লারমা ও অন্যান্য অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের বসবাস বন্ধের দাবিতে ভারতের ত্রিপুরায় বিক্ষোভ মিছিল, মানববন্ধন ও স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। ১২ আগস্ট ২০২৫, গোমতি জেলার অমরপুর উপজেলায় ‘Amarpur Sub-Division Conscious Citizens’ Forum’ ব্যানারে প্রায় এক হাজারের বেশি স্থানীয় জনজাতি এই কর্মসূচিতে অংশ নেয়। স্থানীয় পর্যবেক্ষকরা জানান, এই সংগঠনটি ইউপিডিএফের প্রত্যক্ষ আর্থিক ও সাংগঠনিক সহায়তায় এবং প্ররোচনায় এই কর্মসূচি পরিচালনা করে।
পরে তারা পিসিজেএসএস (সন্তু) গোষ্ঠীর ভারতের অভ্যন্তরে বসবাস ও সমস্ত অবৈধ ক্যাম্প বন্ধের দাবিতে মহকুমা শাসকের মাধ্যমে মুখ্যমন্ত্রীর নিকট স্মারকলিপি জমা দেয়। এর আগে পোস্টার-প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে শহরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
মহকুমার স্থানীয় জনজাতিদের নানাবিধ সমস্যা উপেক্ষা করে বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামের জঙ্গী গোষ্ঠীর কার্যকলাপ, বেআইনি অনুপ্রবেশ এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ নিয়ে সোচ্চার হওয়ার বিষয়টি গোমতি জেলা, অমরপুর শহর ও সমগ্র ত্রিপুরা রাজ্যে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। সংশ্লিষ্ট মহল বিষয়টিকে ইউপিডিএফের রাজনৈতিক কৌশল ও প্রভাব বিস্তারের অংশ বলে মনে করছেন।
তাঁদের মূল দাবিগুলো:
পিসিজেএসএস (সন্তু) এর অস্তিত্ব, ক্যাম্প ও অপরাধমূলক কার্যক্রম ভারত তথা ত্রিপুরা থেকে বন্ধ করা।
সীমান্ত রক্ষা, নেতাদের গ্রেপ্তার ও বিতাড়ন এবং ক্যাম্প ধ্বংস।
অনুপ্রবেশ, মাদক, অস্ত্র, জঙ্গি, গরু ও অন্যান্য পণ্যের চোরাচালান এবং আইএসআই ও বাংলাদেশ থেকে রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক সহায়তা বন্ধ করা।
পিসিজেএসএস নেতা-ক্যাডারদের উভয় দেশে স্থায়ী বসবাস বন্ধ এবং স্থানীয় কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ থেকে বিরত রাখা।
এছাড়াও অভিযোগ রয়েছে, এই গোষ্ঠীর ক্যাডাররা সীমান্তবর্তী এলাকায় কর (tax) আদায় করছে ও স্থানীয়দের হুমকি দিচ্ছে, ফলে তাঁদের স্বাভাবিক কাজকর্মে বিঘ্ন ঘটছে।
মিজোরাম ও ত্রিপুরার পুলিশ প্রশাসন জানায়, পিসিজেএসএস (সন্তু) গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে মাদক, অস্ত্র, যৌনপণ্য, গবাদিপশু ও চামড়া চোরাচালানসহ নানান অপরাধমূলক কার্যক্রমের অভিযোগ রয়েছে। মিজোরাম পুলিশ সতর্ক করে দিয়েছে—যদি এই গোষ্ঠী ভারতের অভ্যন্তরে বসবাস ও অপরাধ চালিয়ে যায়, তবে তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে ইউপিডিএফ ও জেএসএস—দুইটি সশস্ত্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর অব্যাহত চাঁদাবাজি, অস্ত্রের মহড়া ও সংঘর্ষে সাধারণ মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। অভিযোগ রয়েছে, উভয় গোষ্ঠীই ভারতের ভৌগোলিক ভূখণ্ডকে আশ্রয়স্থল ও কার্যক্রমের কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করে সন্ত্রাস চালায়। পার্বত্য চট্টগ্রামের বিস্তৃত সীমান্ত এলাকায় কাঁটাতারের বেড়া না থাকায়, ইউপিডিএফ ও জেএসএস সদস্যরা অবাধে ভারতের অভ্যন্তরে যাতায়াত করে প্রশিক্ষণ গ্রহণ, নিরাপদ আশ্রয় ও অস্ত্র সংগ্রহের সুযোগ পায়। একইসঙ্গে ভারতের বিরুদ্ধে বিচ্ছিন্নতাবাদকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়ার অভিযোগও বহুবার উঠেছে। ভারতের ত্রিপুরায় জেএসএস বিরোধী সাম্প্রতিক আন্দোলন সেই অভিযোগের বাস্তব প্রমাণ হিসেবে নতুন করে সামনে এসেছে। এছাড়া মিজোরাম ও ত্রিপুরার পুলিশ প্রশাসন জেএসএস ভারতের মাটিতে মাদক, অস্ত্র, যৌনপণ্য, গবাদিপশু ও চামড়া চোরাচালানসহ নানান অপরাধমূলক কার্যক্রমে সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেন।