খাগড়াছড়িতে জেএসএস-ইউপিডিএফ বন্দুকযুদ্ধ: চলছে নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযান।

0
ছবি: সংগৃহীত

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি

পার্বত্য খাগড়াছড়ি জেলায় চুক্তি-পক্ষ জনসংহতি সমিতি (জেএসএস) এবং চুক্তি-বিরোধী ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)-এর মধ্যে ফের ভয়াবহ বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটেছে। সোমবার (২৫ আগস্ট) ভোর থেকে দীঘিনালা উপজেলার নাড়াইছড়ি-দুলুছড়ি এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ শুরু হয়, যা সকাল ১০টা পর্যন্ত স্থায়ী ছিল। এসময় গোলাগুলিতে ইউপিডিএফের এক সদস্য নিহত এবং অপর এক সদস্য আহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়।

জেএসএস সমর্থিত সাইবার গ্রুপগুলো দাবি করেছে, তাদের আক্রমণে ইউপিডিএফের সদস্য নিহত হওয়ার পাশাপাশি ঘটনাস্থল থেকে ১টি ৮১-অস্ত্র, ১৪৪ রাউন্ড গুলি ও বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়েছে। তবে দীঘিনালা থানা পুলিশ নিহতের বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক তথ্য নিশ্চিত করতে পারেনি। ইউপিডিএফও সদস্য নিহত হওয়ার কথা স্বীকার করেনি। বরং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পক্ষ-বিপক্ষ একে অপরের বিরুদ্ধে হতাহতের অভিযোগ তুলে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে, যা অনেকেই প্রোপাগান্ডা হিসেবে আখ্যা দিচ্ছেন।

ঘটনার স্থল এলাকা দুর্গম হওয়ায় সেখানে খবরাখবর সংগ্রহ করা অত্যন্ত কঠিন। তবে নিরাপত্তা বাহিনী বাবুছড়া, ধনপাদা ও নাড়াইছড়ি এলাকায় টহল জোরদার করেছে এবং সেখানে সেনা অভিযান চলছে বলে জানা গেছে। এছাড়া পানছড়ি লোগাং, তারাবন ও রামগড় উপজেলার বেলছড়ি এলাকায়ও সেনা ও বিজিবির টহল কার্যক্রম বাড়ানো হয়েছে।

স্থানীয় সূত্র জানায়, দীঘিনালা নাড়াইছড়ি ও পানছড়ির লোগাং-দুদকছড়া এলাকা দীর্ঘদিন ধরে জেএসএস ও ইউপিডিএফের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের কেন্দ্রবিন্দু। ভারত সীমান্ত ঘেঁষা এসব অঞ্চলে অস্ত্র চোরাচালান নিয়ন্ত্রণ ও রুট দখল নিয়ে নিয়মিত গোলাগুলির ঘটনা ঘটছে। ফলে নিরীহ জনগোষ্ঠী প্রায়ই হতাহতের শিকার হচ্ছে এবং স্থানীয় জনজীবন চরমভাবে প্রভাবিত হচ্ছে।

পার্বত্য শান্তি চুক্তির পরও জেএসএস সশস্ত্র কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে কেন—এ নিয়ে সচেতন মহল প্রশ্ন তুলেছে। তাদের মতে, এটি নিঃসন্দেহে চুক্তি লঙ্ঘন। পাশাপাশি ইউপিডিএফের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডও ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা সাধারণ মানুষের নিরাপত্তার জন্য গুরুতর হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্থানীয় পর্যবেক্ষকদের দাবি, বিচ্ছিন্নতাবাদ দমনে জেএসএস ও ইউপিডিএফ—উভয় সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে আরও কঠোর অভিযান চালানো প্রয়োজন।

উল্লেখ্য, গত কয়েক বছরে দীঘিনালা, পানছড়ি ও বাঘাইছড়ি সীমান্তবর্তী অঞ্চলে ইউপিডিএফ-জেএসএসের সংঘর্ষে বহু হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। ভারত থেকে আসা অস্ত্র চালান নিয়ন্ত্রণ ও চোরাই রুট দখলকেই এসব সংঘর্ষের প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

পাহাড়ে এই বন্দুকযুদ্ধ ও পরিস্থিতি স্পষ্ট করে যে পার্বত্য চট্টগ্রামে দুই সশস্ত্র গোষ্ঠীর আধিপত্য বিস্তারের লড়াই অব্যাহত রয়েছে। নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানের মাধ্যমে সন্ত্রাসী দমন কার্যক্রম তীব্র করার দাবি উঠছে, জনগণের জানমালের স্থায়ী সুরক্ষায় আরও সমন্বিত ও কঠোর পদক্ষেপ জরুরি হয়ে পড়েছে বলে মনে করেন এখানকার বাসিন্দারা।

আগের পোস্টরাঙামাটি পর্যটন শহরে চাঁদাবাজি, জনমতে আতঙ্ক।
পরের পোস্টখাগড়াছড়ি আসনে ওয়াদুদ ভূঁইয়ার নেতৃত্বে শান্তি-সম্প্রীতি ও উন্নয়নের প্রত্যাশা।

রিপ্লাই দিন

আপনার কমেন্ট লিখুন
আপনার নাম লিখুন