মণিপুরে শান্তি প্রচেষ্টা: কুকি সংগঠনগুলোর সঙ্গে SoO চুক্তি নবায়ন।

0

আন্তর্জাতিক নিউজ ডেস্ক:

মণিপুরে দীর্ঘদিনের সংঘাত-উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে আজ গুরুত্বপূর্ণ এক পদক্ষেপ নেওয়া হলো। কেন্দ্রীয় সরকার, মণিপুর সরকার এবং কুকি সংগঠনসমূহ—কুকি ন্যাশনাল অর্গানাইজেশন (KNO) ও ইউনাইটেড পিপলস ফ্রন্ট (UPF)—এর মধ্যে Suspension of Operations (SoO) বা যুদ্ধবিরতি চুক্তি নবায়ন করা হয়েছে। ৪ সেপ্টেম্বর স্বাক্ষরিত এই নতুন চুক্তিটি সংশোধিত Agreed Ground Rules 2025 অনুযায়ী আগামী এক বছর কার্যকর থাকবে।

চুক্তির প্রধান শর্তাবলি:

  • KNO ও UPF সহ তাদের শাখা সংগঠনসমূহ সম্পূর্ণভাবে হিংসার পথ পরিত্যাগ করবে এবং ভারতীয় সংবিধান, দেশের আইন ও মণিপুরের ভৌগোলিক অখণ্ডতা মেনে চলবে।
  • তারা অপহরণ, চাঁদাবাজি, হামলা, এ্যাম্বুশ বা কোনো ধরনের সশস্ত্র কার্যক্রম থেকে বিরত থাকবে।
  • অপরদিকে, সেনাবাহিনী, অসম রাইফেলস, কেন্দ্রীয় আধাসামরিক বাহিনী এবং রাজ্য পুলিশ চুক্তি লঙ্ঘন না হলে তাদের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান চালাবে না।
  • একটি যৌথ পর্যবেক্ষণ কমিটি (Joint Monitoring Group – JMG) চুক্তি বাস্তবায়ন তদারকি করবে।
  • চুক্তির অংশ হিসেবে কুকি-জো কাউন্সিল ঘোষণা করেছে যে ন্যাশনাল হাইওয়ে-০২ (NH-2) পুনরায় চালু করা হবে। দীর্ঘদিন অবরোধের কারণে পরিবহন ও সরবরাহ ব্যবস্থায় যে সংকট তৈরি হয়েছিল, তা কাটাতে এই পদক্ষেপ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

মণিপুরে ২০২৩ সালের মে মাসে ভয়াবহ জাতিগত সংঘর্ষ শুরু হয়। এ পর্যন্ত ২৬০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন এবং প্রায় ৬০,০০০–৭০,০০০ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়ে শিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন। হাজারো মানুষ জীবিকা হারিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। সংঘাতপীড়িত রাজ্যে কার্যত দুটি সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভাজন তৈরি হয়েছে। ফেব্রুয়ারি ২০২৫ থেকে রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি রয়েছে।

এই চুক্তি শুধুমাত্র যুদ্ধবিরতি নয়, বরং ভবিষ্যতের রাজনৈতিক সমাধানেরও পথ খুলে দিল। কারণ, এর পরবর্তী ধাপে কেন্দ্রীয় সরকার, রাজ্য সরকার এবং কুকি সংগঠনগুলোর মধ্যে সংবিধানের আওতায় আলোচনার মাধ্যমে রাজনৈতিক সমাধান খোঁজার প্রক্রিয়া শুরু হবে।
তাছাড়া, চলতি মাসেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সম্ভাব্য মণিপুর সফরের আগে এই চুক্তি রাজনৈতিক দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। এটি হবে ২০২৩ সালের সংঘর্ষ শুরু হওয়ার পর তার প্রথম সফর।

SoO চুক্তির নবায়ন মণিপুরে শান্তি প্রতিষ্ঠার একটি বড় পদক্ষেপ। যদিও রাজনৈতিক সমাধানের রাস্তা এখনো অনিশ্চিত, তবু এই যুদ্ধবিরতি সাধারণ মানুষের জীবন-জীবিকা স্বাভাবিক করতে সহায়ক হবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।

 

আগের পোস্টশব্দ ও বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দের জরিমানা আদায় ও দেশব্যাপী অভিযান।
পরের পোস্টপাহাড়ে নিরাপত্তা বাহিনীর অপরিহার্য উপস্থিতি : সন্ত্রাসী আধিপত্য ও ভৌগোলিক সংকটের বাস্তবতা।

রিপ্লাই দিন

আপনার কমেন্ট লিখুন
আপনার নাম লিখুন