রাঙামাটি প্রতিনিধি:
পার্বত্য চট্টগ্রামের ট্যুরিজম খাত আবারও সন্ত্রাসী চাঁদাবাজির শিকার হলো। দীর্ঘদিন ধরে বাঙালি ব্যবসায়ী কিংবা বাইরের উদ্যোক্তারা রাঙামাটিতে ট্যুরিজম খাতে বড় কোনো বিনিয়োগ করতে পারছেন না। এবার হুমকির মুখে পড়লেন স্থানীয় তথাকথিত রাজপরিবারের সদস্য ও রাঙামাটির প্রবীণ আইনজীবী পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট প্রতীম রায় পাম্পু।
খবর পাওয়া গেছে, কাপ্তাই লেকঘেরা পাহাড়ি এলাকায় তার উদ্যোগে নির্মিতব্য একটি রিসোর্টকে কেন্দ্র করে একদল প্রভাবশালী ব্যক্তি চাপ সৃষ্টি করছে। সম্প্রতি অমর কুমার চাকমা নামে এক ব্যক্তি ওই রিসোর্টের প্রায় ৩০ শতক জমি দখল করে নেন। এরই ধারাবাহিকতায় ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) নাম ব্যবহার করে ০১৮৮৩৬০৪২৭৬ নম্বর থেকে অ্যাডভোকেট প্রতীম রায় পাম্পুকে একাধিকবার চাঁদার জন্য ভয়ভীতি ও হুমকি দেওয়া হয়।
প্রতীম রায় পাম্পু জানান, প্রথমে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান। কিন্তু পরে তার রাঙামাটি শহরের নিজ বাড়িতেই মুখোমুখি হুমকি দেওয়া হয়। তাকে জানানো হয়, রিসোর্ট ব্যবসায় কোনোভাবেই বাঙালি সম্প্রদায়ের কাউকে অংশীদার করা যাবে না, করলে ‘খারাপ পরিণতি’ ভোগ করতে হবে।
তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে স্থানীয় সংবাদকর্মী আলমগীর মানিককে বলেন, “নিজস্ব পারিবারিক জমিতে আমি কাকে নিয়ে ব্যবসা করব, সেটা আমার মৌলিক অধিকার। অথচ সেটিই এখন জোর করে কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা চলছে। বিষয়টি আমি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানিয়েছি, দেখি তারা কী ব্যবস্থা নেয়।”
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে সাংবাদিকদের জানান, ঘটনাটি তাদের নজরে এসেছে এবং প্রাথমিক তদন্ত শুরু হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সাম্প্রতিক সময়ে আঞ্চলিক সন্ত্রাসী সংগঠনগুলো চাঁদাবাজির মাত্রা কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে শহরের দোয়েল চত্বর বিদেশী অর্থায়েনে নির্মিত উন্নয়ন কাজে চাঁদার জন্য হুমকির অভিযোগে উঠে। দোকানপাট থেকে শুরু করে বড় ঠিকাদারি কাজ, এমনকি ছোটখাটো পর্যটন উদ্যোগও তাদের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না। নির্ধারিত চাঁদা না দিলে হামলা, অপহরণ কিংবা ব্যবসা বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হচ্ছে নিয়মিত।
এক ব্যবসায়ী অভিযোগ করে বলেন, “গত বছরের তুলনায় এবার প্রায় পাঁচগুণ বেশি চাঁদা দাবি করা হচ্ছে। কেউ রাজি না হলে সরাসরি ভয় দেখানো হচ্ছে।”
চাঁদাবাজির এই দৌরাত্ম্য এতদিন সাধারণ ব্যবসায়ী বা ঠিকাদারদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও এবার চাকমা রাজ পরিবারের সদস্যকে হুমকি দেওয়ার ঘটনা রাঙামাটিতে ব্যাপক চাঞ্চল্যের জন্ম দিয়েছে। স্থানীয়রা বলছেন, এ ঘটনা প্রমাণ করে যে পরিস্থিতি দিন দিন আরও ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে, যেখানে নিরাপত্তা ও বিনিয়োগ—দুটিই বড় সংকটে পড়েছে।