পাহাড়ে ঘুরছে জেএসএসের নারী গুপ্তচর, সিমলা চাকমার দ্বৈত নাগরিকত্বের রহস্য।

0

পার্বত্য চট্টগ্রাম বরাবরই নানা জটিলতা, ষড়যন্ত্র ও বহিঃশক্তির আগ্রাসী রাজনীতির শিকার। এর ভেতরে ক্রমেই উন্মোচিত হচ্ছে নতুন নতুন তথ্য, যা রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ। সম্প্রতি আলোচনায় উঠে এসেছে সিমলা চাকমা নামের এক নারীর দ্বৈত নাগরিকত্ব ও তার সাথে পার্বত্য চুক্তি পক্ষ পার্বত্য চট্টগ্রাম জন সংহতি সমিতি (জেএসএস সন্তু লারমা গ্রুপ)-এর গুপ্তচর কার্যক্রমে সম্পৃক্ততার অভিযোগ। নথিপত্র, ব্যক্তিগত জীবন ও রাজনৈতিক সংযোগ, সব মিলিয়ে এই নারীর কর্মকাণ্ড এখন সর্ব অঙ্গনে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু।

সিমলা চাকমার পিতা ধন্ডরাজ চাকমা এবং মাতা রবি মালা চাকমা। বাংলাদেশের ঠিকানা রাঙামাটির জুরাছড়ি উপজেলার বনযোগিছড়া ইউনিয়নের দোকানঘাট এলাকা হলেও, তার ভারতের একটি স্থায়ী ঠিকানাও রয়েছে, ত্রিপুরা রাজ্যের গন্ডাছড়া এলাকার মোগপাড়া গ্রামে। ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরগুলোও একাধিক, যা তার বহুমুখী যোগাযোগ কার্যক্রমের ইঙ্গিত দেয়।

ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে তার নাগরিকত্বের বেশ কিছু সরকারি নথি পাওয়া গেছে—

Survival Certificate (নং: SURC/2023/03617), যেখানে তাকে জীবন চাকমার স্ত্রী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

Permanent Resident Certificate (নং: F.1(12)/SDM/GNC/PRC/2006/115/10) থেকে জানা যায়, তিনি ত্রিপুরার স্থায়ী বাসিন্দা।

ড্রাইভিং লাইসেন্স (নং: TRTBD022008000990), ইস্যুকৃত ধলাই জেলার লাইসেন্স কর্তৃপক্ষ থেকে।

আধার কার্ড (UID: 8833 7243 9256), যা ভারতীয় পরিচয় হিসেবে বহুল স্বীকৃত।

এইসব নথি স্পষ্ট করে যে তিনি ভারতীয় নাগরিক হিসেবে বৈধ পরিচয় বহন করছেন।

বাংলাদেশের দলিল ও তথ্য: অন্যদিকে বাংলাদেশেও তিনি নিজেকে নাগরিক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তার বিবাহ হয়েছে হিরো চাকমা (জন্ম ১৪/০৪/১৯৮৪, NID: ৮৪১২৫৫৭৫২৬৯১৯, পিতা- জিতেন্দ্র লাল চাকমা, মাতা- ঝর্ণা খীসা চাকমা, সাং- চৌধুরী ছড়া, ঘাগড়া মৌজা, কাউখালী, রাঙামাটি এক ব্যক্তির সাথে, যার জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর ও পূর্ণাঙ্গ পারিবারিক পরিচয় বিদ্যমান। ২০১৬ সালে খাগড়াছড়িতে নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে বিবাহ বিচ্ছেদের হলফনামা তৈরি হয়, যেখানে তার জন্ম তারিখ ২৪/০১/১৯৯১ দেখানো হয়। নং: ৭৭/১৬, তারিখ: ২১/০৪/২০১৬
নোটারি পাবলিক: কল্যাণমিত্র চৌধুরী (খাগড়াছড়ি) তবে তার এই বিয়েতে ঠিকানা দেখানো হয় মিলনপুর, গোলাবাড়ী মৌজা, খাগড়াছড়ি সদর। অর্থাৎ, বাংলাদেশের নথিতে তিনি এক পরিচয়ে দুই ঠিকানায়, আর ভারতের নথিতে অন্য পরিচয়ে নিবন্ধিত।

দুই দেশের নথি মিলিয়ে দেখা যায়:
জন্ম তারিখ দুই দেশে আলাদা (১৯৯১ বনাম ১৯৯৬)। স্বামীর পরিচয় ভিন্ন (ভারতে জীবন চাকমা, বাংলাদেশে হিরো চাকমা) এবং আরো কয়েকজন স্বামী থাকার তথ্য পাওয়া যায়। ঠিকানাও তিনভাবে প্রদর্শিত। এই বৈপরীত্যই ইঙ্গিত দেয় যে, সচেতনভাবে দ্বৈত পরিচয় ব্যবহার করে তিনি সুবিধা নিচ্ছেন।

পারিবারিক ও রাজনৈতিক যোগসূত্র: বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, সিমলার মেঝো ভাই সক্রিয়ভাবে জেএসএস (সশস্ত্র শাখা)-তে কাজ করছে। তার ব্যক্তিগত জীবনও বিতর্কিত—চারবার বিয়ে ও একাধিক সম্পর্কের তথ্য পাওয়া গেছে। এছাড়া জানা যায়, পরিকল্পিতভাবে তার সন্তান জন্মদানের ক্ষমতা নষ্ট করে তাকে নির্দিষ্ট ধরনের গোয়েন্দা কর্মকাণ্ডে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম জুড়ে তার বিচরণ। সূত্র বলছে, সে অনেক গোপন তথ্য জেএসএস এর নিকট সরবরাহ করছে এবং ভারতে প্রায় সীমান্ত এলাকা দিয়ে আসা যাওয়া করছে। তার জুরাছড়ি পিতা-মাতার সামাজিক ও আর্থিক অবস্থান অত্যন্ত নাজুক। এই পরিস্থিতিতে তার বিলাসবহুল জীবন এবং ভারতের নাগরিকত্ব গ্রহণ এবং বিভিন্ন সরকারি নথিপত্র সংগ্রহ তাকে সাধারণ থেকে অসাধারণে পরিণত করেছে, যা তার পরিচয় এবং সে যে গুপ্তচর হিসেবে কাজ করছে তার বিষয়ে স্পষ্ট যুক্তি উপস্থাপন করছে।

সবচেয়ে উদ্বেগজনক তথ্য হলো, সিমলা চাকমা সরাসরি জেএসএস নেতা সন্তু লারমার সাথে যোগাযোগ রাখছে এবং তার হয়ে পাহাড়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করছে এবং বিশেষ কাজে থাকে ভারতে পাঠানো হয়।

বর্তমান অবস্থান: বর্তমানে তিনি রাঙামাটির কলেজগেট মৈত্রীপাড়ায় অবস্থান করছেন এবং জবনিকা চাকমা ও দীপ্তিময় চাকমার বাসায় থাকছেন। এ অবস্থান থেকেই তার যোগাযোগ ও তৎপরতা পরিচালিত হচ্ছে বলে ধারণা।

  • নিরাপত্তা বিশ্লেষণে উল্লিখিত তথ্য থেকে অনুমেয়:
    ১. সিমলা চাকমার কাছে একাধিক বৈধ সরকারি নথি রয়েছে, যা তাকে সহজে সীমান্ত অতিক্রম ও পরিচয় বদলানোর সুযোগ দিচ্ছে।
    ২. জন্ম তারিখ ও বৈবাহিক তথ্যের অসঙ্গতি তার কার্যক্রমের গোপনীয়তা বজায় রাখার কৌশল হতে পারে।
    ৩. পারিবারিকভাবে জেএসএস সশস্ত্র শাখার সাথে সম্পৃক্ত হওয়ায় তার নিরাপত্তা ঝুঁকি বহুগুণে বেড়ে যায়।
    ৪. তাকে বিশেষভাবে নারী গুপ্তচর হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে বলে সূত্রের ধারণা।

পার্বত্য চট্টগ্রামের অস্থির রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে দ্বৈত নাগরিকত্বধারী নারী গুপ্তচরের উপস্থিতি নিঃসন্দেহে গুরুতর নিরাপত্তা হুমকি। সিমলা চাকমার বহুমুখী পরিচয়, অসঙ্গত নথি, পারিবারিক সম্পর্ক ও জেএসএস-এর সাথে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ প্রমাণ করে যে, তাকে পরিকল্পিতভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষের  জরুরি নজরদারি ছাড়া এ ধরনের কার্যক্রম দীর্ঘমেয়াদে ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনতে পারে।

আগের পোস্ট১৪ লাখ টাকা মুক্তিপণে মুক্তি পেলেন বান্দরবানে অপহৃত দুই শ্রমিক।

রিপ্লাই দিন

আপনার কমেন্ট লিখুন
আপনার নাম লিখুন