রাঙামাটিতে বাঙালি শিক্ষকের উপর পরিকল্পিত মব-আক্রমণ: পিসিপি’র ষড়যন্ত্র ফাঁস।

0

অনন্ত অসীম 

রাঙামাটি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (টিটিসি)-এর খণ্ডকালীন বাঙালি শিক্ষক ইফতেখারের বিরুদ্ধে তথাকথিত ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগ তুলে পরিকল্পিতভাবে মব-আক্রমণ সংগঠিত করেছে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি)।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত ১৭ সেপ্টেম্বর রাত ৭:৫০ এর দিকে জাপানিজ ভাষার কোর্স পরিচালনাকারী শিক্ষক ইফতেখারকে তার রুমে অবরুদ্ধ করে রাখে পার্বত্য চট্টগ্রাম জন সংহতি সমিতি (জেএসএস)-এর সহযোগী সংগঠন পিসিপি। উল্লেখ্য, এ কোর্সে উপজাতি ও বাঙালি উভয় শিক্ষার্থীই অধ্যয়ন করছিল। অভিযোগ রয়েছে, প্রতিষ্ঠান থেকে বাঙালি শিক্ষককে বিতাড়িত করে উপজাতি শিক্ষকের মাধ্যমে কোর্স নিয়ন্ত্রণ করাই ছিল এ হামলার মূল উদ্দেশ্য। বর্তমানে রাঙামাটিতে উপজাতিদের পরিচালনায় আরো কিছু জাপানিজ ভাষার কোর্স চালু রয়েছে।

সূত্র বলছে, আসলে কোনো ধর্ষণচেষ্টা হয়নি। সেদিন বিকাল ৪টায় ইফতেখারের রুমে শুধুমাত্র অভিযুক্ত অতিথি চাকমা শিক্ষার্থী ছিলেন না, বরং সেখানে মোট তিনজন শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিল। কিন্তু পরিকল্পিতভাবে অতিথি চাকমাকে বলির পাঁঠা বানিয়ে পিসিপি ইফতেখারের বিরুদ্ধে অপপ্রচার ছড়ায়। এরপর প্রথমে কয়েকজন পিসিপি সন্ত্রাসী তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে এবং পরবর্তীতে ৫০-৬০ জনকে ডেকে এনে ঘেরাও ও অবরুদ্ধ করে। সন্ধ্যা গড়িয়ে গেলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত করে তুলতে ইচ্ছাকৃতভাবে মব সৃষ্টি করে তাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়।

বাঙালি শিক্ষকের উপর পরিকল্পিত মব

সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, পিসিপি সন্ত্রাসীরা ইফতেখারকে বেধড়ক মারধর করছে। এর আগে খাগড়াছড়ি টেকনিক্যাল কলেজের শিক্ষক মো. সোহেলকে ধর্ষণের মিথ্যা অভিযোগ তুলে একই কায়দায় মব-হামলার মাধ্যমে হত্যা করা হয়েছিল। ঠিক তেমনি এবারও হত্যাচেষ্টা চালানো হয়।

খবর পেয়ে সেনাবাহিনী ও পুলিশের যৌথ টহলদল ঘটনাস্থলে পৌঁছে ইফতেখারকে উদ্ধার করে। জানা যায়, তাকে ফাঁসানোর জন্য তার মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিয়ে ভিকটিম শিক্ষার্থীর Whatsapp-এ দু’টি বার্তা পাঠানো হয়েছিল, যা পরবর্তীতে প্রমাণ হিসেবে ব্যবহার করার চেষ্টা চলে।

অভিযোগ রয়েছে, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীকে একসঙ্গে বসিয়ে ছবি তোলে পিসিপি’র সন্ত্রাসীরা। এই ছবি পরবর্তীতে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশ করে শিক্ষক ইফতেখার ও শিক্ষার্থী অতিথি চাকমার সামাজিক মর্যাদা হানি এবং বাঙালির ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করা হয়।

স্থানীয় সূত্র আরও জানিয়েছে, অতিথি চাকমা শিক্ষার্থী ও তার অভিভাবকদের জেএসএস ও পিসিপি চাপ প্রয়োগ করে ইফতেখারের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিতে বাধ্য করছে। ইতোমধ্যে ভুক্তভোগী শিক্ষক ইফতেখার রাঙামাটি কোতোয়ালী থানায় মামলা দায়ের করেছেন। তবে তিনি নিরাপত্তাহীনতায় থাকায় গণমাধ্যমে বিস্তারিত কিছু বলতে অপারগতা প্রকাশ করেছেন।

বাঙালি ও উপজাতি উভয় সম্প্রদায়ের প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষার্থীরা একবাক্যে জানিয়েছেন, এটি ছিল পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র। শিক্ষক ইফতেখারকে ফাঁসানো হয়েছে এবং সহজ-সরল অতিথি চাকমাকে ব্যবহার করা হয়েছে। ঘটনাস্থলে পিসিপি কর্মীরা আরও দুজনকে বেধড়ক মারধর করে, যা আইনের শাসনের সম্পূর্ণ পরিপন্থী। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, কোনো শিক্ষক দোষী হলে আইন অনুযায়ী বিচার হওয়া উচিত, কিন্তু আইনকে উপেক্ষা করে মব সৃষ্টি করা পাহাড়ে সাম্প্রদায়িক বিভাজন উসকে দেওয়ার নোংরা খেলা ছাড়া আর কিছুই নয়।

স্থানীয় বাঙালি সম্প্রদায় বলছে, সাম্প্রতিক সময়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে আঞ্চলিক সন্ত্রাসী সংগঠনগুলো সুপরিকল্পিতভাবে বাঙালিদের টার্গেট করছে। কখনো মিথ্যা ধর্ষণের অভিযোগ, কখনো যৌন হয়রানির অভিযোগ তুলে বাঙালি শিক্ষক, ব্যবসায়ী ও পেশাজীবীদের বিরুদ্ধে মব-আক্রমণ সংগঠিত করা হচ্ছে। খাগড়াছড়ির গুইমারায় শিক্ষককে যৌন হয়রানির মিথ্যা অভিযোগ, মাটিরাঙায় বাঙালি কলা ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে মব সৃষ্টি, সবই প্রমাণ করে উপজাতি সংগঠনগুলো ইচ্ছাকৃতভাবে পাহাড়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে।

আগের পোস্টচাকসু নির্বাচনকে সামনে রেখে পার্বত্য চট্টগ্রাম শিক্ষার্থীদের সাথে পিসিসিপি নেতৃবৃন্দের মতবিনিময়

রিপ্লাই দিন

আপনার কমেন্ট লিখুন
আপনার নাম লিখুন