ইউপিডিএফের উস্কানি, মসজিদ ও বাঙালিদের উপর হামলা: অতঃপর ১৪৪ ধারা জারি।

0

হিল নিউজ বিডি প্রতিবেদক

খাগড়াছড়ি জেলায় পার্বত্য চুক্তি বিরোধী ইউপিডিএফের অব্যাহত সহিংস কর্মকাণ্ড নতুন করে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। গত ২৪ সেপ্টেম্বর থেকে উস্কানিমূলক কর্মকাণ্ড, মিছিল, সমাবেশ এবং ২৭ সেপ্টেম্বর সকাল থেকে ইউপিডিএফ সমর্থিত অবরোধ চলাকালে খাগড়াছড়িতে জরুরি সেবার এম্বুলেন্স ও জনসাধারণের গাড়িতে হামলা, গুলিবর্ষণ এবং সড়ক অবরোধের মতো সন্ত্রাসী তৎপরতা চালানো হয়। এর ধারাবাহিকতায় খাগড়াছড়ি পৌরসভার বিভিন্ন এলাকায় বাঙালি জনগোষ্ঠীর উপর সাম্প্রদায়িক হামলা ও ভাঙচুরের পাশাপাশি সবুজবাগ এলাকার একটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদেও আক্রমণের ঘটনা ঘটে।

এর আগে, ২৬ সেপ্টেম্বর দুপুরে খাগড়াছড়ি শহরে সেনাবাহিনীর নিয়মিত টহল গাড়িতে হামলা চালায় ইউপিডিএফ সমর্থিত পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ ও গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম। সেনাসদস্যদের উপর এ ধরনের নগ্ন আক্রমণ শুধু রাষ্ট্রবিরোধী তৎপরতার বহিঃপ্রকাশ নয়, বরং প্রশাসন ও নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে প্রকাশ্যে চ্যালেঞ্জ জানানো।

প্রকাশ্য ঘোষণা দিয়ে মসজিদে হামলা করে

সংঘাতের সূত্রপাত ও ইউপিডিএফের দায়: এই সহিংস পরিস্থিতির মূল সূত্রপাত ঘটে খাগড়াছড়ির সিঙ্গিনালা এলাকায় সংঘটিত একটি ধর্ষণ ঘটনার পর। পুলিশ-সেনাবাহিনী অপরাধীকে গ্রেফতার করলেও, ঘটনাটিকে রাজনৈতিক হাতিয়ার বানিয়ে ইউপিডিএফ অপপ্রচার শুরু করে এবং সেনাবাহিনী ও বাঙালি জনগোষ্ঠীকে দায়ী করে আন্দোলন, অবরোধ ও নাশকতা সংগঠিত করে। মূল অপরাধী গ্রেফতার হওয়ার পরও বারবার অবরোধ ও সহিংসতা সংগঠনের মাধ্যমে ইউপিডিএফ প্রমাণ করেছে, তাদের উদ্দেশ্য বিচার প্রতিষ্ঠা নয়; বরং পাহাড়ে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি এবং সাম্প্রদায়িক বিভাজন গভীর করা। ইতোমধ্যে সূত্রে জানা গেছে, ধর্ষিত শিক্ষার্থীর মেডিকেল রিপোর্টে ধর্ষণের কোনো প্রমাণ মেলেনি।

প্রশাসনের নতজানু নীতি ও সহিংসতার প্রসার: খাগড়াছড়ির সাম্প্রতিক সময়ের একাধিক ঘটনায় দেখা গেছে, ইউপিডিএফ যখন মিথ্যা প্রচার, উস্কানি ও ভাঙচুর চালিয়েছে, প্রশাসন তখন কার্যত নতজানু অবস্থান গ্রহণ করেছে। কঠোর আইন প্রয়োগের পরিবর্তে নরম নীতি গ্রহণ করায় ইউপিডিএফ আরও উৎসাহিত হয়েছে। ফলে অবরোধ, মসজিদে হামলা, বাঙালিদের উপর আক্রমণ কিংবা সেনাবাহিনীর গাড়ি লক্ষ্য করে হামলার মতো ভয়ংকর তৎপরতা তারা নির্দ্বিধায় চালিয়ে যাচ্ছে।

খাগড়াছড়ি সেনা টহলে হামলা ছবি: ২৬ সেপ্টেম্বর

এদিকে ইউপিডিএফের সন্ত্রাসী কার্যক্রমের কারণে জেলার সব উপজেলার সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল এবং খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটি সাজেকে গমন করা বহু পর্যটক আটকা পড়েছিল, এতে চরম দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়। এ সময় ১৪৪ ধারা উপেক্ষা করে খাগড়াছড়ি জেলা সদরে ইউপিডিএফ গুলিবর্ষণ চালায়। এমন পরিস্থিতিতে স্থানীয় অধিবাসীরা তীব্র ক্ষোভ ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ১৪৪ ধারা: অবরোধ চলাকালে সহিংসতা ও সাম্প্রদায়িক হামলার জেরে পরিস্থিতি দ্রুত অবনতির দিকে যায়। উত্তেজনা যাতে ছড়িয়ে না পড়ে এবং বড় ধরনের সংঘর্ষ এড়ানো যায়, সেজন্য খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক এবি এম ইফতেখারুল ইসলাম খন্দকার ২৭ সেপ্টেম্বর বেলা ২টা থেকে খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা ও পৌরসভা এলাকায় অনির্দিষ্টকালের জন্য ১৪৪ ধারা জারি করেন। কিন্তু জেলা শহরজুড়ে তখনও গুলিবর্ষণ চলতে থাকে এবং ইউপিডিএফের ইন্ধনে অস্ত্র ও লাঠিসোঁটা হাতে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ ও গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম: কলেজগেট, পৌরসভা, স্বরনির্ভর, টেকনিক্যাল ও নারানখাইয়া এলাকায় অবস্থান নেয়। ইউপিডিএফের আক্রমণে সকালে এক টমটম চালক গুলিবিদ্ধ হন, আলুটিলা পুর্নবাসন কেন্দ্র এলাকায় একটি লাশবাহী এম্বুলেন্স ভাংচুর করে। এবং দুপুরের পর থেকে বিকাল পর্যন্ত খাগড়াছড়ি সদর উপজেলায় অন্তত ১৭ জন বাঙালি রক্তাক্ত হন। বাঙালিদের দোকানপাট লুটপাট এবং ভাংচুরের ঘটনা ঘটে৷ যা নিয়ে জেলা শহরের বাঙালিরা আতঙ্ক হয়ে পড়েন।

সমালোচনা ও প্রশ্ন: স্থানীয় সচেতন মহল বলছে, ইউপিডিএফের সহিংসতা ও সাম্প্রদায়িক হামলা রুখতে প্রশাসনের শুরু থেকেই কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া উচিত ছিল। কিন্তু বারবার নীরবতা ও নমনীয় অবস্থান নেওয়ার কারণে ইউপিডিএফের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ক্রমশ বেড়ে চলেছে। মসজিদে হামলা, সেনাবাহিনীর গাড়িতে গুলিবর্ষণ এবং বাঙালিদের উপর নগ্ন আক্রমণের পরও প্রশাসন কেবল পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ১৪৪ ধারার মতো সিদ্ধান্তে সীমাবদ্ধ থাকায় অনেকের কাছে প্রশ্ন উঠছে, কোথায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দৃঢ় অবস্থান?

আগের পোস্টখাগড়াছড়িতে ইউপিডিএফ সমর্থিত অবরোধে গুলিবর্ষণ ও অ্যাম্বুলেন্স ভাঙচুর।
পরের পোস্টইউপিডিএফ নিষিদ্ধকরণ ও চাকমা রানী ইয়ান ইয়ানকে গ্রেপ্তারের দাবি ঢাবি শিক্ষার্থীদের।

রিপ্লাই দিন

আপনার কমেন্ট লিখুন
আপনার নাম লিখুন