নিরস্ত্রদের সহজসরল বলতে দ্বিধা নেই কিন্তু অস্ত্রধারী বলতে যথার্থ আপত্তি আছে।

0

এতদিন ধরে প্রান্তিক হিসেবে অধিকার ও সুযোগ সুবিধা বঞ্চিত জনগোষ্ঠীর তকমা পাওয়া বান্দরবান রোয়াংছড়ি, রুমা, থানচির কথিত প্রতিনিধিত্বকারী গোষ্ঠী ‘কেএনএফ’ এর একটি গোপন আস্তানা থেকে বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) সেনাবাহিনী অভিযান চালিয়ে একে-৪৭ অস্ত্র, বিপুল পরিমাণ গোলাবারুদ ও বিভিন্ন সরঞ্জামাদি উদ্ধার করেছে৷ আমার প্রশ্ন যাদের কাছে একে-৪৭ অস্ত্র, ওয়াকিটকি ও সরঞ্জামাদি থাকে তারা কী করে সহজসরল হয়? এটা আমার মাথায় আসেনা। জানিনা দায়িত্বশীলদের বোধগম্যতা।

সমতল ভূমির একজন ভিক্ষুক বা দিনমজুরের কাছে থেকেই যদি একে-৪৭ অস্ত্র আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী উদ্ধার করে তখন কী আমাদের বুদ্ধিজীবি মহল, সুশীল সমাজ, প্রগতিশীল ও কথিত বিশিষ্টজনরা বলবেন, তারা অস্ত্র অধিকার আদায়ে ধরেছে? যদি জঙ্গি নামক নাটক না করে থাকেন তাহলে পাহাড়ের কথিত প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্বকারী কেএনএফ এর অস্ত্র ধরা নিয়ে আমার কোন আপত্তি বা দ্বিধা নেই।

ছবিতে সংযুক্ত উদ্ধারকৃত অস্ত্র, গোলাবারুদ, ওয়াকিটকি ও সরঞ্জামাদি পাহাড়ের বিপরীত সমতল থেকে উদ্ধার হলে আমাদের বুদ্ধিজীবি মহল আর মিডিয়ার ভূমিকা কি হতো?

অবৈধভাবে মারণাস্ত্র হাতে নেওয়া একটি জনগোষ্ঠীর সকল লোকদের কীভাবে সহজসরল তকমা দেয় আমার বোধগম্য নয়। আপনার অধিকার বা নানা দাবিদাওয়া থাকতে পারে তারজন্য রাজনৈতিক পথ অবশ্যই খোলা রয়েছে। কখনো রাজনৈতিকভাবে না এসে সরাসরি অস্ত্র ধরে স্বায়ত্তশাসন বা রাজ্য দাবি কতটুকু যৌক্তিক? রাস্ট্র যদি প্রাপ্য অধিকার না দেয় তখন অস্ত্র ধরা শ্রেয় কিন্তু অস্ত্র ধরে চাঁদাবাজির জন্য অপহরণ, খুন-গুম, অশান্ত সৃষ্টি এবং পৃথক রাস্ট্র গঠন দাবির ষড়যন্ত্র কতটুকু গ্রহণ যোগ্য?

পার্বত্য চট্টগ্রামে একটি অপসংস্কৃতি চালু হয়েছে কোন অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীকে সেনাবাহিনী আটক করলে তাকে নিরীহ বা সহজসরল তকমা দিয়ে তার অপকর্ম দামাচাপা দেয়া হয়। পাহাড়ে সন্ত্রাসী গ্রুপ গুলোর হাতে যেসব ভারী অস্ত্র আছে আমাদের দেশের রাস্ট্রীয় বাহিনীগুলোর হাতেও এমন ভারী অস্ত্র নেই বলছে নিরাপত্তা বিশ্লেষকেরা।

আমাদের বাঙালিদের আবেগ বেশি। আমরা অন্যান্য জাতিগোষ্ঠী, ধর্ম বর্ণের মানুষের প্রতি উদার আর সহনশীল। স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশের অবিচ্ছেদ্য অংশ পার্বত্য চট্টগ্রাম অবৈধ ভারী অস্ত্র ভরে গেছে। এটা নিয়ে আমাদের কান্ডজ্ঞানহীন ভূমিকায় ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। পাহাড়ে কয়েকটি উপজাতি সংগঠন অস্ত্র হাতে নিয়েছে! এটাকে আমরা বিদ্রোহ বা অধিকারের সঙ্গে তুলনা করে তাদের অস্ত্র নেওয়াকে যৌক্তিক বলে মনে করি! অনেকেরই ধারণা পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতিরা সবাই সহজসরল আর উদারমনা! আসলে কী তাই?

আজকে পার্বত্য চট্টগ্রামের শিক্ষা, চাকরি, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সর্বক্ষেত্রেই উপজাতীয়দের আধিপত্য। এটা পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির সুফল। উপজাতিরা যদি সহজসরল হতো তাহলে কী ১৯৯৭ সালের চুক্তির মাধ্যমে পাহাড়ে তাদের একক আধিপত্য প্রতিষ্ঠা হতো? আমার ধারণা দেশের ৯৯% মানুষ পার্বত্য চুক্তিতে সংবিধান পরিপন্থী কী কী আছে তা সম্পর্কে অবগত নয়। চুক্তিতে কীভাবে পার্বত্য চট্টগ্রামে রাস্ট্রীয় ক্ষমতা খর্ব হয়েছে তা যদি জানতো তাহলে হয়তো উপজাতিদের সহজসরল তকমা দেয়া হতো না। চুক্তিতে যেভাবেই উপজাতিদের অধিকার নিশ্চিত হয়েছে পৃথিবীর অন্য কোন দেশেই এমন অধিকার নিশ্চিত করেছে কিনা তা নিয়ে আমার প্রশ্ন আছে।

কেএনএফ সামরিক পোশাক

চুক্তির মাধ্যমে উপজাতীয়দের অধিকার নিশ্চিত হয়েছে, সুতরাং তাদের আর অস্ত্র ধরা উচিত নয়। যদি চুক্তির অধিকার থেকে কোন জনগোষ্ঠী বাদ পড়ে থাকে সেটা চুক্তি স্বাক্ষরকারী পক্ষ বিপক্ষের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে আদায় করা যেতে পারে। এতে সমাধান না হলে রাজনৈতিক উপায়ে দাবিদাওয়া পেশ করতে পারে৷ এর বাহিরে যারাই অস্ত্র নিয়ে দাবিদাওয়া পেশ করে তাদেরকে সহজসরল তকমা দেওয়া এটা তাদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডকে বৈধতা দেওয়ার শামিল। পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতি সংগঠনগুলো অধিকার দাবিতে প্রতিষ্ঠিত হলেও তাদের মূল লক্ষ্য উদ্দেশ্য চাঁদাবাজি, অস্ত্রবাজি ও দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র। গত কয়েক দশকে তাদের অপতৎপরতা থেকে এটাই স্পষ্টভাবেই প্রতীয়মান হয়েছে।

কেএনএফ থেকে উদ্ধারকৃত ওয়াকিটকি

লেখক: জিহান মোবারক, লেখক, ব্লগার ও পার্বত্য চট্টগ্রাম গবেষক এবং সংবাদকর্মী হিল নিউজ বিডি।

আগের পোস্টপার্বত্য চট্টগ্রামকে ভারতের অঙ্গরাজ্য বা স্বাধীনে নয়াদিল্লির হস্তক্ষেপ কামনা কথিত জেএসএস নেতার!
পরের পোস্টপার্বত্য চট্টগ্রাম সংশ্লিষ্ট ৯টি গ্রন্থের পাঠ বিবেচনা।

রিপ্লাই দিন

আপনার কমেন্ট লিখুন
আপনার নাম লিখুন