পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ পুনর্গঠনের দাবিতে মানববন্ধন।

ইউপিডিএফ চুক্তি মানে না কিন্তু চুক্তির সুবিধা ভোগ করতে মরিয়া: জেএসএস

0

পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ ২৭ মে ১৯৯৯ সালে গঠিত একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান। এই পরিষদের প্রথম চেয়ারম্যান পার্বত্য চট্টগ্রাম জন সংহতি সমিতি (জেএসএস) সভাপতি জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা। যিনি উপমন্ত্রী পদমর্যাদা ভোগকারী। ১৯৯৯ সাল থেকে টানা ২৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে পদটি কৌশলে আখড়ে আছেন।

পারভেজ মারুফ, রাঙামাটি হিল নিউজ বিডি: তিন জেলা সমন্বয়ে ২২ সদস্যবিশিষ্ট আঞ্চলিক পরিষদকে পার্বত্য চট্টগ্রামে বৈষম্য, অনিয়ম সৃষ্টির আঁতুড়ঘর হিসেবে আখ্যায়িত করে আসছে স্থানীয় বাঙালি জনগোষ্ঠীরা। তবে আঞ্চলিক পরিষদের কার্যক্রম নিয়ে অসন্তুষ্ট উপজাতি জনগোষ্ঠীর মানুষেরাও।

দেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনে দেশে সংস্কার চলছে৷ সাম্প্রতিক সময়ে তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ পুনর্গঠন হয়েছে৷ সে সূত্র থেকে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ ( HRC) পুনর্গঠনের দাবি তুলছে জেএসএস প্রতিপক্ষ চুক্তি বিরোধী ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) প্রসিত গ্রুপ।

অদ্য ১৬ নভেম্বর (২০২৪ খ্রিস্টাব্দ) শনিবার সকাল ১১ টা সময় রাঙামাটি শহরের রিজার্ভ বাজার মসজিদ মার্কেটের সামনে ইউপিডিএফ প্রসিত সহযোগী অঙ্গসংগঠন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি), হিল উইমেন্স ফেডারেশন, গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম ‘ছাত্র-জনতার সংগ্রাম পরিষদ’-এর ব্যানার নাম দিয়ে এই মানববন্ধন করা হয়।

মানববন্ধনে ইউপিডিএফ সহযোগী অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা

“ফ্যাসিস্ট শাসন মুক্ত পার্বত্য চট্টগ্রাম চাই’ শ্লোগানে আধা ঘন্টা ব্যাপি চলা মানববন্ধনে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান ছাত্র-জনতার সংগ্রাম পরিষদের সদস্য শ্রদ্ধা চাকমা।
লিখিত বক্তব্যে শ্রদ্ধা চাকমা বলেন, সেই সময় এই পরিষদে যাদের নিয়োগ দেয়া হয়েছিল তারা এখনও একনাগাড়ে ক্ষমতায় রয়েছে। গত ২৫-২৬ বছরে কোন সরকার আঞ্চলিক পরিষদের নির্বাচন বা পুনর্গঠন করেনি; এমনকি পুনঃনিয়োগও দেয়নি। অথচ পরিষদের মেয়াদ হলো ৫ বছর। সুতরাং বর্তমানে যারা আঞ্চলিক পরিষদে রয়েছে, তারা বৈধভাবে আছে কীনা দেখা দরকার?

ইউপিডিএফ সহযোগী অঙ্গসংগঠনের হাতে রিজিওনাল কাউন্সিল পুনর্গঠন দাবির প্লেকার্ড

আঞ্চলিক পরিষদ কী কাজ করে, তার জবাবদিহিতা কোথায়, তার তহবিলের হিসাব কী এসব বিষয়ে আমরা সাধারণ জনগণ কিছুই জানি না। জনগণের উন্নয়নের জন্য আঞ্চলিক পরিষদ গঠন করা হলেও, জনগণের সাথে তার কোন সম্পর্ক নেই, জনগণের কাছে তার কোন দায়বদ্ধতা ও জবাবদিহিতা নেই।

লিখিত বক্তব্যে তারা সরকারের কাছে জোর দাবি জানিয়ে বলেন, অবিলম্বে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ পুনর্গঠন করতে হবে, নির্দলীয়, সৎ ও যোগ্য ব্যক্তিদের নিয়োগ দিতে হবে এবং এরপর এই সরকারের আমলে তিন জেলা পরিষদ ও আঞ্চলিক পরিষদের নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে।

জেএসএস নেতারা বলছেন, ইউপিডিএফ পার্বত্য চুক্তি মানে না। তারা স্বায়ত্তশাসন দাবি রেখে ১৯৯৮ সালের ২৬ ডিসেম্বর ১৯৯৭ সালের ২-রা ডিসেম্বরের চুক্তির বিরোধিতা করে ঢাকায় এক কনফারেন্সের মাধ্যমে আত্মপ্রকাশ করে। ইউপিডিএফ চুক্তি মানে না কিন্তু চুক্তির সুবিধা ভোগ করতে মরিয়া৷ চুক্তির সুফল ভোগ করার জন্য এখন আঞ্চলিক পরিষদ দখলে নেমেছে। অথচ এরা চুক্তির বিপক্ষে দাঁড়িয়ে চাঁদাবাজি, হত্যা, অপহরণ এবং চুক্তি বাস্তবায়নে বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে, এমনকি বেছে বেছে চুক্তির পক্ষের লোকজনকে হত্যা করছে।

বাঙালি নেতারা বলছেন, আঞ্চলিক পরিষদ চেয়ারম্যানের পদটি উপজাতিদের জন্য সংরক্ষিত। এই ক্ষেত্রেও ভোটের মাধ্যমে নির্বাচন বা চেয়ারম্যানের সমপরিমাণ ক্ষমতা দিয়ে একজন বাঙালিকে ভাইস চেয়ারম্যান/মনোনয়ন দেওয়ার হোক।

সচেতন মহল বলছেন, আঞ্চলিক পরিষদ পুনর্গঠন জনসংখ্যা অনুপাতে করা হোক। এতে বৈষম্য ও অনিয়মের অবসান হবে।

তবে স্থানীয় বাঙালি জনগোষ্ঠী বলছেন, পার্বত্য চুক্তির ধারা ও শাসনবিধি মোতাবেক পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ গঠিত হয়েছে। এই আইনে চেয়ারম্যান ও সদস্য বাঙালি বৃদ্ধি করার সুযোগ নেই। আর কোনভাবে করেও লাভ হবে না। এর আইন, ক্ষমতা সংস্কার ও সংশোধন প্রয়োজন। তারপর পরিষদ পুনর্গঠন হলে এই নিয়ে কোনো পক্ষের আপত্তি থাকবে না।

উল্লেখ যে, বাংলাদেশ সরকার ও পার্বত্য অঞ্চলের উপজাতি সম্প্রদায়ের তথাকথিত প্রতিনিধিত্বকারী দল পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস) সাথে দীর্ঘদিন সংঘর্ষ ছিল। যে সংঘর্ষে পাহাড়ে হাজার হাজার বাঙালি, পাহাড়ি, জেএসএস ও সরকারি বাহিনী হতাহত হয়। ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর বাংলাদেশ সরকার পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির মধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম সংঘাত নিরসনের জন্য একটি চুক্তিতে স্বাক্ষর করে। চুক্তির অংশ হিসেবে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ ২৭ মে ১৯৯৯ সালে ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ আইন ১৯৯৮’ অনুসারে প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০১০ সালে বাংলাদেশ উচ্চ আদালত একটি রায়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদকে অবৈধ ও অসাংবিধানিক হিসাবে ঘোষণা দেয়। ২০০০ সালে এম. বদিউজ্জামান ও ২০০৭ সালে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আইনজীবী তাজুল ইসলামের দায়ের করা দুইটি মামলায় এই রায় দেওয়া হয়। ৩ মার্চ ২০১১ সালে আপিল বিভাগ হাইকোর্টের রায়টি বহাল রাখে। বাংলাদেশ সরকার ও পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান সন্তু লারমা এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেছিলেন। ৯ জানুয়ারি ২০১৮ সালে বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট উচ্চ আদালতের রায়টি স্থগিত করে। পক্ষ বিপক্ষ আপিলের পর আইনটি বহাল ও স্থগিত থাকে দীর্ঘদিন। তবে শাসনবিধির ২৭টি বিষয় সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হওয়ার কারণেই তা সংশোধন নিয়ে ২০১৮ সালে সুপ্রীম কোর্টে রিভিউ করেছেন বাঙ্গালীদের পক্ষে খাগড়াছড়ি জেলার বাসিন্দা আব্দুল আজিজ আখন্দ ও আব্দুল মালেক। যার শুনানি চলমান।

আগের পোস্টপার্বত্য চট্টগ্রাম সংশ্লিষ্ট ৯টি গ্রন্থের পাঠ বিবেচনা।
পরের পোস্টস্বচ্ছ ও নিরপেক্ষতার জন্য উন্নয়ন বোর্ডের দায়িত্ব সেনাবাহিনীর হাতে হস্তান্তর করা জরুরী।

রিপ্লাই দিন

আপনার কমেন্ট লিখুন
আপনার নাম লিখুন