এক সম্প্রদায়ের নেতৃত্ব তুলে নাও নিতে হবে, জাতিগত বৈষম্য চলবে না, চলবে না।

0

এম কে আনোয়ার, খাগড়াছড়ি

পার্বত্য চট্টগ্রামের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে মারমা জাতিগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার দাবিতে খাগড়াছড়িতে মানববন্ধন এবং স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে। আজ রবিবার (২৬ জানুয়ারি) সকালে খাগড়াছড়ি প্রেস ক্লাবের সামনে জাগ্রত মারমা সমাজের উদ্যোগে আয়োজিত এই মানববন্ধনে পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্তরের মারমা জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন।

বাংলাদেশ মারমা যুব ঐক্য পরিষদ খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার ক্যরী মগের সঞ্চালনায় এবং কংচাইরী মাষ্টারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে বক্তারা পার্বত্য অঞ্চলের উন্নয়ন, ন্যায়বিচার এবং সুষম অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার আহ্বান জানান।

বক্তারা অভিযোগ করেন, মারমা জনগোষ্ঠী পার্বত্য চট্টগ্রামের দ্বিতীয় বৃহত্তম জাতিগোষ্ঠী হলেও তাদের প্রতিনিধিত্ব বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে উপেক্ষিত হচ্ছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক বোর্ড, তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ, টাস্কফোর্সসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পদে মারমা প্রতিনিধিদের অনুপস্থিতি বৈষম্য এবং বঞ্চনার প্রমাণ বলে তারা মন্তব্য করেন।

তারা আরও জানান, সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর পাহাড়ে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে মূলত চাকমা জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিরাই প্রাধান্য পেয়েছেন। পার্বত্য চট্টগ্রাম মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা, রাঙামাটি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে চাকমা সম্প্রদায়ের ব্যক্তিদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। অথচ মারমা সম্প্রদায়ের যোগ্য ব্যক্তিরা এইসব গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।

বক্তারা বলেন, মারমা জনগোষ্ঠী শিক্ষা, সংস্কৃতি, এবং সামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে আসছে। মুক্তিযুদ্ধের সময়ও তাদের অবদান অনস্বীকার্য। তবে, যথাযথ প্রতিনিধিত্ব না থাকার কারণে পার্বত্য চট্টগ্রামের উন্নয়ন কার্যক্রমে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে।

তারা আরও উল্লেখ করেন, এই বৈষম্যমূলক পরিস্থিতি দূর করতে হলে সরকারকে অবিলম্বে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানসমূহে মারমা প্রতিনিধিদের অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করতে হবে, যা পার্বত্য অঞ্চলে সামাজিক ভারসাম্য এবং আস্থার পরিবেশ তৈরি করবে।

মারমা সম্প্রদায়ের নারী-পুরুষ ব্যানার ফেস্টুন হাতে নিয়ে মানববন্ধনে অংশ গ্রহণ করে। এসময় ফেস্টুনে লেখা ছিল, “এক সম্প্রদায়ের নেতৃত্ব তুলে নাও নিতে হবে, জাতিগত বৈষম্য চলবে না, চলবে না।”

চাকমা নেতৃত্বের প্রতি ইঙ্গিত করে এমন স্লোগান ও দাবিদাওয়া ব্যানার ও ফেস্টুনে যুক্ত করা হয়েছে।

মানববন্ধন শেষে একটি প্রতিনিধি দল জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে সরকারের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করে। স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়, পার্বত্য চট্টগ্রামের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে মারমা জাতিগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা হলে বৈষম্য দূর হয়ে সামাজিক সম্প্রীতি আরও দৃঢ় হবে।

মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের বিভিন্ন মারমা নেতা এবং মারমা মহিলা ঐক্য পরিষদের প্রতিনিধিরা। মানববন্ধনে বক্তারা সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, এই বৈষম্যের অবসান ঘটিয়ে সকল জনগোষ্ঠীর সমান প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে হবে।

এ ধরনের উদ্যোগ পার্বত্য চট্টগ্রামের শান্তি ও উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে তারা আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

 

আগের পোস্টপালের গোদা রাখাল রাহা।
পরের পোস্টবিচ্ছিন্নতাবাদ রোধে ভূমিকা ও সংকটময় পরিস্থিতি: সার্বভৌমত্ব সুরক্ষা পরিষদ।

রিপ্লাই দিন

আপনার কমেন্ট লিখুন
আপনার নাম লিখুন