কাউখালীর বাঙালি আন্দোলনের পুরোধা ‘জয়নাল মুন্সীর’ বিদায়।

0
ছবি: জয়নাল আবেদিন মুন্সী বাঙালি নেতা

কাউখালী প্রতিনিধি

পার্বত্য রাঙামাটি জেলার কাউখালী উপজেলা তথা পার্বত্য চট্টগ্রাম বাঙালি পুনর্বাসিতদের অধিকার আন্দোলনের অন্যতম রূপকার জয়নাল আবেদিন মুন্সী আর নেই। আজ রবিবার (২৭ এপ্রিল ২০২৫) ভোর ৪ টায় বেতছড়ির নিজ বাড়িতে ৮৮ বছর বয়সে তিনি শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন। তিনি বেতছড়ি মসজিদের খতিব মাওলানা ইসহাক সাহেবের পিতা, এবং বেতছড়ি ছিদ্দিকি-ই-আকবর (রা.) মাদ্রাসার সুপার আব্দুর রাজ্জাক হোসেন তালুকদারের শ্বশুর।

১৯৭৯ সালে সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙালিদের পুনর্বাসন শুরু করলে কাউখালীতে বসতি গড়ে ওঠে। জয়নাল মুন্সী এই বাঙালিদের অধিকার ও কল্যাণে নিরলসভাবে কাজ করে গেছেন। তিনি কাউখালী চা প্রকল্পের সভাপতি হিসেবে বাঙালিদের কর্মসংস্থানের জন্য ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে এবং একটি গ্রুপ তৈরি করে ৭২ লাখ টাকার চা চারা রোপণ করেন। কিন্তু দুঃখজনকভাবে উপজাতি সন্ত্রাসীরা এই চারা কেটে নষ্ট করে দেয়।

স্থানীয়রা জানান, জয়নাল মুন্সী নিজের অর্থ ব্যয় করে বাঙালিদের জন্য কাজ করতেন। তার মতো নিবেদিত নেতা আর পাওয়া যাবে না। তার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন চা প্রকল্পের সাধারণ সম্পাদক ও বাঙালি পুনর্বাসন দলের নেতা বশির উদ্দিন লিডার। তিনি বলেন, “জয়নাল মুন্সী ও হাতিমারার আব্দুস সামাদের পর এখন আমি একা। কাউখালীতে বাঙালিদের পক্ষে কথা বলার কেউ নেই। সরকার কি পুনর্বাসিত বাঙালিদের প্রতিশ্রুত সুবিধা দিয়েছে?”

বশির উদ্দিন আরও জানান, সরকার বাঙালিদের ৩ থেকে ৫ একর জমি বন্দোবস্ত দিলেও শান্তিবাহিনী ও ইউপিডিএফের আক্রমণে তারা তা ভোগ করতে পারেনি। ১৯৮৮ সালে এরশাদ সরকার বাঙালিদের ‘গুচ্ছগ্রামে’ আটকে রাখে, যা এখনো চলমান। উপজাতিরা পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসনবিধি দেখিয়ে বাঙালি ভূমি দখল করছে। বাঙালিদের অনেক জায়গা বেদখল। ঘাগড়া ইউনিয়নের শামুকছড়িতে চা প্রকল্পের ৭২ লাখ টাকার ক্ষতি এবং ব্যাংক ঋণের বোঝা বাঙালিদের ক্লান্ত করেছে। উপজাতিদের জন্য ব্যাংক ঋণে সুদ কম ও ব্যবসার লাইসেন্স ফ্রি হলেও বাঙালিদের জন্য তা বেশি।

দীর্ঘদিনের আন্দোলনকারী মানবাধিকার কর্মী মো. সোহেল রিগ্যান বলেন, “জয়নাল মুন্সীর অবদান অপরিসীম। তিনি বাঙালিদের জন্য রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে দাবি উত্থাপন করেছেন, কিন্তু অবহেলিত বাঙালি হিসেবে তিনি উপেক্ষিত ছিলেন। তার পরামর্শে আমরা শামুকছড়ির সরকার বন্দোবস্ত জমি উদ্ধার ও চা বোর্ডের ক্ষতিপূরণের জন্য লড়েছি, কিন্তু কে শোনে আমাদের কথা? তিনি কখনো তার শ্রমের বিনিময় পাননি। তার মৃত্যুতে কাউখালীতে বাঙালির অধিকার আন্দোলন ছায়াহীন হয়ে পড়ল। পাহাড়ের প্রকৃত ইতিহাস জানা প্রবীণ মানুষরা যখন আমাদের ছেড়ে বিদায় গ্রহণ করে তখন জাতির হাল ধরার আর কেউ থাকে না। ”

জয়নাল মুন্সীর মৃত্যুতে কাউখালীর বাঙালি সমাজে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। তার অপূরণীয় অবদান এবং দেশপ্রেম পাহাড়ের ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।

আগের পোস্টইসকন প্রচার কেন্দ্র পুনঃনির্মাণের উদ্যোগ, স্থানীয়দের অভিযোগে কাজ স্থগিত।
পরের পোস্টরাঙামাটিতে বিজিবির দুঃসাহসিক অভিযান : বিপুল পরিমাণ অবৈধ কাঠ উদ্ধার।

রিপ্লাই দিন

আপনার কমেন্ট লিখুন
আপনার নাম লিখুন