শান্তি বিনাশী মনোগীত জুম্ম–ধর্মপতিত বিভাজনপ্রীতি ও তথ্যসন্ত্রাসের নৃশংস মহাকাব্য

0
ছবি সংগৃহীত: মনোগীত জুম্ম প্রকাশ করুনালংকার ভিক্ষু

পর্বতচূড়ার অপার শ্যামলিমা ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি পার্বত্য চট্টগ্রাম, যেখানে যুগযুগ ধরে বাস করছে নানা উপজাতি ও বাঙালি সম্প্রদায়। এই স্বর্গীয় অঞ্চলে শান্তি ও সহাবস্থানের যে চিরন্তন আহ্বান, তা আজ ভূলুণ্ঠিত এক ‘ভিক্ষু’র বিষবাষ্পে। যিনি নামধারী বৌদ্ধ ভিক্ষু হলেও, কার্যত তাঁর হৃদয় পরিপূর্ণ বিভাজন, হিংসা, ঘৃণা ও সাম্প্রদায়িক উন্মত্ততায়। তিনি মনোগীত জুম্ম নামে পরিচিত হলেও প্রকৃতপক্ষে তার আসল নাম ভাগ্য চাকমা ওরফে করুনালংকার ভিক্ষু। জন্মসূত্রে তিনি খাগড়াছড়ি জেলার দীঘিনালা উপজেলার ৩নং কবাখালী ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা। পরবর্তীতে তিনি ভারতের নাগরিকত্ব গ্রহণ করে নয়াদিল্লির রাজকোটে বসবাস শুরু করেন। তাঁর পিতার নাম চন্দ্রবাহন চাকমা ওরফে তিবচ্ছ্যা এবং মাতার নাম মৃত: মায়াদেবী চাকমা। জানা যায়, ভারতীয় পাসপোর্টে তিনি ড্যানিয়েল চাকমা নাম ব্যবহার করেন। এছাড়াও, তিনি নিজেকে পিএইচডি উপাধিধারী এবং একজন কূটনীতিক হিসেবে দাবি করে থাকেন। যদিও এই দাবির কারণে বরাবরই সমালোচিত হচ্ছেন।

ছবি সংগৃহীত: মনোগীত জুম্ম প্রকাশ করুনালংকার বিদেশী মদ সেবনে মগ্ন

করুনালংকার ভিক্ষুর প্রতিদিনের রুটিন ওয়ার্ক – মিথ্যাচার, উস্কানি ও তথ্য সন্ত্রাস:

সমাজে বৌদ্ধ ভিক্ষুরা যেখানে আত্মশুদ্ধি, সমতা, অহিংসা ও করুণার বাণী ছড়িয়ে দেন, সেখানে মনোগীত জুম্মর রুটিন ওয়ার্কই হলো মিথ্যাচার, উস্কানি, অপপ্রচার এবং তথ্য সন্ত্রাস। তাঁর ফেসবুক আইডি ও পেইজে নিয়মিতভাবে দেখা যায় পার্বত্য বাঙালি মুসলিমদের বিরুদ্ধে কুৎসিত গালাগালি, সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে অশ্লীল অপবাদ, জেএসএস বিরোধী ইউপিডিএফ ও অন্যান্য সংগঠনের বিরুদ্ধে বানোয়াট ও বিভ্রান্তিকর তথ্য। তিনি নিজেকে কখনো জেএসএস সন্তু গ্রুপের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি, কখনো কল্পিত জুমল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে জাহির করে জনমনে বিভ্রান্তি ছড়ান।

ছবি সংগৃহীত: জেএসএস সহ-সভাপতি ও রাঙামাটির সাবেক এমপি উষাতন তালুকদার এবং মনোগীত জুম্ম প্রকাশ করুনালংকার ভারত সীমান্ত এলাকায় আলাপকালে

ভিক্ষু হয়ে হিংসার পূজারি:

‘ফরুসা ভাষিতা না ভবন্তি’ – রূঢ় বাক্য বলা উচিত নয়। বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থ অঙ্গুত্তর নিকায়ের এই বাণীই প্রমাণ যে বৌদ্ধধর্ম রূঢ়তা ও হিংসাকে সম্পূর্ণরূপে পরিত্যাগ করেছে। কিন্তু মনোগীত জুম্ম এই শিক্ষাকে পদদলিত করে নিজের ফেসবুক পোস্টে প্রতিনিয়ত হিংসা, ঘৃণা, সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ও ধর্মীয় অবমাননাকে উস্কে দিচ্ছে। তিনি সমাজে শান্তির পরিবর্তে উগ্র সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, সংঘাত এবং বিদ্বেষের আগুনে ঘি ঢালছেন। এই প্রবণতা বৌদ্ধ সমাজ ও ধর্মীয় ভাবমূর্তিকেই কলুষিত করছে।

ছবি সংগৃহীত: মনোগীত জুম্ম প্রকাশ করুনালংকার ভারতের ত্রিপুরা গন্ডাছড়া সীমান্তবর্তী গ্রামে জেএসএস প্রতিনিধির সঙ্গে। কথিত আছে এই পথে তিনি জেএসএস প্রতিনিধির মাধ্যমে বাংলাদেশে অস্ত্র পারাপার করে থাকেন৷ 

পার্বত্য চট্টগ্রামে অশান্তির স্থপতি:

তার কর্মকাণ্ড পার্বত্য চট্টগ্রামে যেমন বাঙালি বনাম উপজাতি দ্বন্দ্বকে উসকে দিচ্ছে, তেমনি উপজাতি সম্প্রদায়ের মধ্যেই বিভক্তি সৃষ্টি করছে। ইউপিডিএফ বরাবরই তাকে জেএসএস সন্তু গ্রুপের অস্ত্র সরবরাহকারী হিসেবে আখ্যা দিয়ে আসছে। ভারত থেকে জেএসএস এর কাছে অস্ত্র সরবরাহে তার জড়িত থাকার অভিযোগও বারবার উঠেছে। অথচ জেএসএস এরই একাধিক সূত্র জানিয়েছে, এ ব্যক্তি মূলত একজন বিকারগ্রস্ত ও মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন। ১০ বছর আগে সন্তু লারমার বিরুদ্ধেই অকথ্য ভাষায় গালাগালি করেছে, আর এখন নিজেকে জেএসএস এর প্রতিনিধি বলছে। এমন দ্বিচারিতা ও মিথ্যাচারই তার চরিত্রের মূল অঙ্গ।

ছবি সংগৃহীত: মনোগীত জুম্ম প্রকাশ করুনালংকার নয়াদিল্লিতে প্রতারণার মাধ্যমে প্রাপ্ত বাসায় তথ্য সন্ত্রাস ছড়িয়ে দেওয়ার সাইবার সেলে পত্রিকা পড়ছেন

পাহাড়িদের চোখে মনোগীত জুম্ম:

পার্বত্য চট্টগ্রামের সাধারণ পাহাড়িরা এই ভিক্ষুকে মানসিকভাবে অসুস্থ, উগ্র, বিকৃত এবং ‘জানোয়ার’ বলেই আখ্যা দেয়। তার Monogeet Jumma ফেসবুক একাউন্টের পোস্টগুলিতে এমন সব কুরুচিপূর্ণ, বিকৃত, মিথ্যা ও অসত্য তথ্য থাকে যা সমাজে সহিংসতা, অবিশ্বাস ও ঘৃণা সঞ্চার করে। বৌদ্ধধর্মে যেখানে বলা হয় ‘অহিংসা পরম ধর্ম’, সেখানে এই মনোগীত জুম্মর মতন তথাকথিত ভিক্ষুদের হিংসাত্মক কর্মকাণ্ড বৌদ্ধ সমাজকেই লজ্জিত করছে।

ধর্মের নামে ধ্বংসের স্লোগান:

বৌদ্ধ ভিক্ষুদের উদ্দেশ্য হলো মানুষের চিত্তকে কলুষমুক্ত করে শান্তি ও ধর্মের সুশীতল ছায়ায় আশ্রয় দেওয়া। কিন্তু মনোগীত জুম্মর ক্ষেত্রে চিত্র সম্পূর্ণ উল্টো। তিনি লাল বসন ধারণ করলেও মনন পরিশুদ্ধির পরিবর্তে তিনি বিভাজন ও হিংসার বীজ বপন করে চলেছেন। পার্বত্য চট্টগ্রামের বৌদ্ধ সমাজ তার এই কার্যকলাপে চরমভাবে ক্ষুব্ধ। ইউপিডিএফ-এর সহযোগী নারী সংগঠনের চট্টগ্রাম মহানগর নেত্রী পিংকি চাকমা সম্প্রতি বিতর্কিত মন্তব্যের প্রতিবাদে সরাসরি ফেসবুক লাইভে তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। লাইভে তিনি বলেন, “করুনালংকার ঠাকুজ্জ্যা রঙিন কাপড় পরে অস্ত্র ব্যবসা করছে, চিকিৎসার নামে মানুষের অর্থ আত্মসাৎ করছে। আমি তাকে ঠাকুজ্জ্যা বলবো না, কুকুর বলবো। তার লজ্জা-শরম নেই, তার পুরুষত্ব নেই, তাই রঙিন কাপড় পড়েছে। তার বৌদ্ধ ধর্মের জ্ঞান নেই। বুদ্ধ অর্থ জ্ঞান, সেই জ্ঞানও তার নেই। সে নারীদের নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করে। তাকে তার পিতা-মাতা কোনো পারিবারিক শিক্ষা দেয়নি। সে ধর্মের নীতির মধ্যেও নেই। বিদেশী মদের বোতল খায়, তার জ্ঞানও নষ্ট। এজন্য তার আত্মীয়স্বজন তার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেছে, জাতিরও তার সঙ্গে কোনো যোগাযোগ নেই। প্রকৃতপক্ষে একজন পুরুষ নারীদের সুন্দর দেখেন, কিন্তু সে সমকামী। তাকে আমি বার্তা দিতে চাই – এখনো সময় আছে, যতগুলো অপকর্ম করেছো, ক্ষমা চাইলেই জাতি তোমাকে ক্ষমা করবে।”

একটি ভয়ঙ্কর পরিকল্পনা – জুমল্যান্ড রাষ্ট্রের কল্পনা:

মনোগীত জুম্ম নিজেকে পার্বত্য চট্টগ্রামের কল্পিত জুমল্যান্ড রাষ্ট্রের স্বঘোষিত পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে পরিচয় দিয়ে থাকে। বাস্তবে তিনি একজন বিকারগ্রস্ত স্বপ্নচারী। এই কল্পিত রাষ্ট্র গঠনের পেছনে রয়েছে উগ্র জাতীয়তাবাদ, সশস্ত্র সংগ্রামের উস্কানি এবং বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বকে চ্যালেঞ্জ করার মত গভীর ষড়যন্ত্র। অথচ তার এসব উগ্র বক্তৃতা এবং ফেসবুক পোস্ট পাহাড়ি সমাজে কোনও গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। বরং পাহাড়িরা তাকে একটি ‘অসুস্থ, বেকার, ভণ্ড পাগল’ হিসেবেই জানে।

মনোগীত জুম্মর তথ্য সন্ত্রাস – রাষ্ট্রের জন্য হুমকি:

তার মিথ্যা প্রচার, ধর্মের অপব্যাখ্যা, সাম্প্রদায়িক উস্কানি এবং অস্ত্রযোগানের অভিযোগ প্রমাণ করে যে তিনি এককভাবে পার্বত্য চট্টগ্রামে সহিংসতা ও বিভাজনের চাকা ঘুরিয়ে চলেছেন। বৌদ্ধধর্মের ইতিহাসে এমন কলঙ্কময় চরিত্র বিরল। রাষ্ট্র, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী, প্রশাসন, এবং বৌদ্ধ ধর্মীয় মহলকে এই ভিক্ষুর মুখোশ উন্মোচন করে দ্রুত আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানাচ্ছে শান্তিকামী জনগণ।

মনোগীত জুম্মর চরিত্র ও কর্মকাণ্ডই প্রমাণ করে – ধর্মীয় পোশাক ও পরিচয় সবসময় সত্যের পরিচয় নয়। ভিক্ষুর লাল বসনে আবৃত এই ব্যক্তি সমাজে শান্তি নয়, বরং অগ্নিসংযোগ, হিংসা, বিভাজন এবং সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার অন্ধকার ডেকে আনছে। তার মিথ্যাচার, তথ্য সন্ত্রাস এবং সহিংসতার বীজ পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষের কাছে আজীবন ঘৃণার পাত্র হয়ে থাকবে।

মুক্তমত লেখক: রাঙামাটি থেকে মানবাধিকার কর্মী ২৯/০৬/২০২৫

আগের পোস্টসেনাবাহিনীর প্রচেষ্টায় পার্বত্য চট্টগ্রামে বম জনগোষ্ঠীর প্রত্যাবর্তন: শান্তির পথে দৃঢ় পদক্ষেপ
পরের পোস্টদুই উপদেষ্টার বক্তব্যের বিরুদ্ধে বান্দরবানে সংবাদ সন্মেলন।

রিপ্লাই দিন

আপনার কমেন্ট লিখুন
আপনার নাম লিখুন