দুই উপদেষ্টার বক্তব্যের বিরুদ্ধে বান্দরবানে সংবাদ সন্মেলন।

0

মোহাম্মদ আজিজ উল্লাহ | বান্দরবান

পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমার সাম্প্রতিক বক্তব্য এবং সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মোস্তফা সরওয়ার ফারুকীর বক্তব‍্য ও সংশ্লিষ্ট কার্যক্রমের বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে সংবাদ সন্মেলন করেছে পার্বত‍্য চট্রগ্রাম নাগরিক পরিষদ (পিসিএনপি) ও সহযোগী সংগঠণ পার্বত‍্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদ(পিসিসিপি)।

২৯ জুন (রবি বার) সকাল সাড়ে দশটায় বান্দরবান সদরের ইসলামপুর পিসিএনপি মিলনায়তনে জেলা পিসিসিপি সভাপতি আসিফ ইকবালের সভাপতিত্বে পার্বত‍্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ ও পার্বত‍্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদের যৌথ উদ‍্যোগে সংবাদ সন্মেলনটি অনুষ্ঠিত হয়।এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পিসিএনপি চেয়ারম্যান কাজী মোঃ মজিবর রহমান।

সন্মেলনে পিসিসিপি সভাপতি আসিফ ইকবাল সাংবাদিকদের সামনে একটি লিখিত বক্তব‍্য পাঠ করেন। লিখিত বক্তব‍্যে তিনি বলেন, গত ২৩ জুন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এক আন্তঃ মন্ত্রণালয় সভায় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান আইন ২০১০ সংশোধন পূর্বক নৃ-বৈচিত্র/জাতি বৈচিত্র্য সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান অধ্যাদেশ ২০২৫ (প্রস্তাবিত) প্রনয়ন সংক্রান্ত সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সভায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মোস্তফা সরোয়ার ফারুকী বলেন- ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর নাম ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সাংস্কৃতিক ইনিস্টিটিউট পরিবর্তন করে জাতি বৈচিত্র্য ইনিস্টিটিউট করার সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়।
এ ছাড়াও উক্ত আইনের ৭(ঘ)’তে উল্লেখিত “সরকার কর্তৃক মনোনীত শিল্প, সাহিত্য এবং সংস্কৃতির উন্নয়নে অবদান রাখিতে পারিবেন এমন উৎসাহী স্থানীয় ৬ জন প্রতিনিধি তন্মধ্যে কমপক্ষে ৪ জন স্থানীয় নৃ-গোষ্ঠী ভুক্ত হইবে” বলে যে ধারা রয়েছে তা পরিবর্তন করে ৬ জনই ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীভুক্ত হবে বলে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।আমরা মনে করি, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের এ সিদ্ধান্ত সংবিধান পরিপন্থি এবং দূরভিসন্ধিমূলক। এর মাধ্যমে সংবিধানে উল্লেখিত ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর পরিচয়কে আড়াল করা হচ্ছে।

সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের ঐ সভায় সুপ্রদীপ চাকমা তার বক্তব‍্যে ‘আদিবাসী’ পরিচয়ের পক্ষে বলেন, “আমরা আদিবাসী শব্দটি চাচ্ছি শুধু আমাদের আইডেন্টিফিকেশনের জন্য। আমরা পাহাড়ি-বাঙালি একসাথে থাকতে চাই। কারন বাঙালিরা না থাকলে আমাদের উন্নয়ন সম্ভব নয়।”

এ বক্তব্যকে সংবিধানবিরোধী ও বিভাজনমূলক দাবি করে সংগঠণটি জানিয়েছে, একজন দায়িত্বশীল পদে থেকে এমন বক্তব্য প্রদান অনাহূত এবং রাষ্ট্রের একক জাতিসত্তার ধারণার পরিপন্থী। সংগঠনটির দাবি, বাংলাদেশের সংবিধানের ৬(২) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী “রাষ্ট্রের জাতি হিসেবে বাঙালি এবং নাগরিক হিসেবে বাংলাদেশের নাগরিক”-এই নীতির বাইরে গিয়ে আদিবাসী পরিচয়ের দাবিকে উসকে দেওয়া ও রাষ্ট্রীয় স্বার্থের পরিপন্থী।

বক্তব‍্যে পিসিসিপি সভাপতি আরও আশঙ্কা প্রকাশ করে জানিয়েছে, সভায় ৭ (ঘ) ধারা সংশোধনের মাধ্যমে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব বৃদ্ধির প্রস্তাব একপাক্ষিকতা তৈরি করতে পারে, যা পার্বত্য অঞ্চলে বাঙালিদের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক প্রতিনিধিত্ব সংকুচিত করার ঝুঁকি তৈরি করবে।

এছাড়া, উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমার অতীত কর্মকাণ্ড নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সংগঠনটি। পিসিএনপির দাবি, বিভিন্ন বরাদ্দে অনিয়ম ও সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে তিনি ইতোমধ্যেই বিতর্কিত হয়ে উঠেছেন। ভবিষ্যতে তিনি যেন রাষ্ট্রবিরোধী কোনো সিদ্ধান্ত না নেন, সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে আহ্বান জানানো হয়।

প্রসঙ্গত, পিসিএনপি জানিয়েছে-দেশের স্বার্থ বিরোধী কোনো উদ্যোগ বা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হলে তারা ছাত্র ও জনতাকে সঙ্গে নিয়ে যেকোন সময় দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলবে।

এসময় অন‍্যান‍্যদের মধ‍্যে উপস্থিত ছিলেন, বান্দরবান প্রেসক্লাব সভাপতি আমিনুল ইসলাম বাচ্চু, সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি এইচ এম সম্রাট,পিসিএনপি নেতা মোঃ আবুল কালাম আজাদ, মোঃ আলম,আব্দুস শুক্কুর,রুহুল আমিন,আব্দুল আলীম মনু,শাহ জালাল,আফসার,কামাল হোসেন,পিসিএনপির অন‍্যান‍্য নেতাকর্মীসহ জেলার বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রিক মিডিয়ার প্রতিনিধিগণ।

আগের পোস্টশান্তি বিনাশী মনোগীত জুম্ম–ধর্মপতিত বিভাজনপ্রীতি ও তথ্যসন্ত্রাসের নৃশংস মহাকাব্য
পরের পোস্টবরাদ্দ বৈষম্যে উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমার অপসারণ দাবিতে ত্রিপুরা-মারমা জনগোষ্ঠীর বিক্ষোভ।

রিপ্লাই দিন

আপনার কমেন্ট লিখুন
আপনার নাম লিখুন