সন্তু লারমা
বাংলাদেশি চাকমা রাজনীতিবিদ
- সন্তু লারমা পার্বত্য চট্টগ্রামের একটি পরিচিতি নাম
- সন্তু লারমা পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির দ্বিতীয় পক্ষ
- সন্তু লারমা সশস্ত্র জীবন অবসান করে সরকারের সঙ্গে চুক্তি পূর্বক পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান ( প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদা)
[১] জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা (সন্তু লারমা)(ফেব্রুয়ারি ১৪, ১৯৪৪) বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামঅঞ্চলের উপজাতীদের একাংশের নেতা। তার পুরো নাম জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা, তবে সন্তু লারমানামেই তিনি অধিক পরিচিত। তিনি বাংলাদেশের উপজাতি সম্প্রদায়ের মধ্যে অন্যতম লারমাসম্প্রদায়ের সদস্য।
চাকমা গোষ্ঠীর নেতা সন্তু লারমা |
|
---|---|
প্রেসিডেন্ট পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি | |
পূর্বসূরী | মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা |
দায়িত্বাধীন | |
অধিকৃত কার্যালয় জানুয়ারী ১৯৮৪ |
|
ব্যক্তিগত বিবরণ | |
জন্ম | ১৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৪৪(বয়স ৭৬) রাঙ্গামাটি, ব্রিটিশ ভারত |
জাতীয়তা | বাংলাদেশ |
রাজনৈতিক দল | পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি |
পিতামাতা | চিত্তকিশোর চাকমা (বাবা)সুভাষিণী দেওয়ান (মা) |
আত্মীয়স্বজন | মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা(ভাই) |
প্রাক্তন শিক্ষার্থী | ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজস্যার আশুতোষ সরকারি কলেজ |
পেশা | রাজনীতি, ব্যাবসা |
আরও জানুনএই জীবিত ব্যক্তির জীবনীমূলক নিবন্ধে তথ্য যাচাইয়ের জন্য কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র থেকে উদ্ধৃতিদান করা হয়নি। |
জন্মসম্পাদনা
সন্তু লারমার জন্ম ১৯৪৪ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারিরাঙামাটি জেলার মহাপুরম এলাকায়। তার পিতার নাম চিত্তকিশোর চাকমা, মাতা সুভাষিণী দেওয়ান।
শিক্ষাসম্পাদনা
তিনি অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত মহাপুরম জুনিয়র হাই স্কুলে পড়েন। ১৯৫৯ সালে রাঙামাটি সরকারি উচ্চবিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন। এরপর চট্টগ্রামের স্যার আশুতোষ কলেজ থেকে আই এ এবং কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে বি এ পাস করেন। ১৯৬৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় এম এ পাস করেন।
রাজনৈতিক জীবন ও স্বাধীন জুম্মল্যান্ডের প্রত্যয়সম্পাদনা
১৯৬০ সালে কাপ্তাই বাঁধের পানিতে মহাপুরম এলাকা ডুবে যাওয়ায় সন্তু লারমাদের পরিবার খাগড়াছড়িরপানছড়িতে আবাস গড়ে তোলেন। এদিকে বাঁধের প্রকল্প গ্রহণের সময় প্রতিশ্রুত পুনর্বাসন ব্যবস্থা না পাওয়ায় স্থানীয় মানুষের মাঝে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। ১৯৬৩ সালে পার্বত্য চট্টগ্রামকে যে পূর্বে উপজাতি এলাকা ঘোষণা দেয়া হয়েছিল তা বাতিল করা হয়, স্পেশাল স্ট্যাটাস বাতিল করা হয়। এতে অসন্তোষ আরো বাড়ে। এসময় নিজেদের অধিকার আদায়ের জন্য নেতৃত্ব গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তা বোধ করেন সন্তু লারমা। পূর্বে গঠিত পাহাড়ি ছাত্র সমিতির কাজ জোরদার করা হয়। এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় সন্তু লারমা বামপন্থী ছাত্র সংগঠন ছাত্র ইউনিয়নের রাজনীতিতে জড়িত হন। বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা শেষ করে তিনি খাগড়াছড়ি জেলার মহালছড়ি থানার একটি স্কুলে শিক্ষকতা শুরু করেন। ১৯৬৬ সালে জনগণকে রাজনৈতিকভাবে সচেতন করার জন্য ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশন’ গঠনে তিনি ভূমিকা রাখেন।
পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি ও গেরিলা জীবনসম্পাদনা
১৯৭২ সালে গঠিত পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন সন্তু লারমা। তার ভাই মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা ছিলেন এর সাধারণ সম্পাদক। নিয়মতান্ত্রিকভাবে দাবী আদায় সম্ভব হবে না মনে করে ১৯৭৩ সালে তারা সংগঠনের সামরিক শাখা শান্তিবাহিনী গঠন করেন এবং সশস্ত্র সংগ্রাম করার সিদ্ধান্ত নেন। ১৯৭৫ সালে সন্তু লারমা আত্মগোপনে যান। সেই বছরের ২৬ অক্টোবর তিনি গ্রেপ্তার হন। ১৯৮০ সালে ছাড়া পান। ১৯৮১-তে একবার গ্রেপ্তার হয়ে মুক্ত হওয়ার পর আবার তিনি আত্মগোপন করেন। এদিকে এসময় সংগঠনের মধ্যে অভ্যন্তরীণ কোন্দল সৃষ্টি হয়। প্রাথমিকভাবে সমঝোতা হলেও ১৯৮২ সালে অপর গ্রুপের আক্রমণে নিহত হন মানবেন্দ্র লারমা ও আরো আটজন। সন্তু লারমা দল পুনর্গঠনের কাজ শুরু করেন। তিনি ভারপ্রাপ্ত সভাপতি নির্বাচিত হন। অন্য দলটি পিছু হটতে থাকে, ১৯৮৫ সালের মে মাসে তারা আত্মসমর্পণ করে। সে বছর অনুষ্ঠিত সংগঠনের জাতীয় সম্মেলনে কেন্দ্রীয় কমিটি গঠিত হয়, যার সভাপতি নির্বাচিত হন সন্তু লারমা। সম্মেলনে সিদ্ধান্ত নেয়া হয় সংগ্রামের পাশাপাশি সরকারের সাথে সংলাপের প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখা হবে।
সমঝোতা ও শান্তিচুক্তিসম্পাদনা
সরকারের সাথে বিভিন্ন সময় মোট ২৬টি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। অবশেষে উভয় পক্ষ কিছুটা নমনীয় হলে ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। সন্তু লারমার নেতৃত্ব সকল ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্টি গুলো মেনে না নিয়ে সশস্ত্র সংগ্রামে লিপ্ত হয়। ফলে চুক্তি বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া এখনো সমাপ্ত করা সম্ভব হয়ে উঠেনি।
তথ্য সূত্র- উইকিপিডিয়া