অনুচ্ছেদ : প্রজাতন্ত্র : রাজধানী : নাগরিকত্ব : জাতীয়তাবাদঃ গণতন্ত্র ও মানবাধিকার : সুযোগের সমতা আইনের দৃষ্টিতে সমতাঃ আইনের আশ্রয় লাভের অধিকার : জীবন ও ব্যক্তি – স্বাধীনতার অধিকার রক্ষণ : চলাফেরার স্বাধীনতা সমাবেশের স্বাধীনতা : সম্পত্তির অধিকার বিষয়ে সংবিধান যা বলে:
১। বাংলাদেশ একটি একক , স্বাধীন ও সার্বভৌম প্রজাতন্ত্র , যাহা “ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ ” নামে পরিচিত হইবে। ৬। ( ১ ) বাংলাদেশের নাগরিকত্ব আইনের দ্বারা নির্ধারিত ও নিয়ন্ত্রিত হইবে। ( ২ ) বাংলাদেশের জনগণ জাতি হিসাবে বাঙালী এবং নাগরিকগণ বাংলাদেশী বলিয়া পরিচিতি হইবেন। ৯। ভাষাগত ও সংস্কৃতিগত একক সত্তাবিশিষ্ট যে বাঙালী জাতি ঐক্যবদ্ধ ও সংকল্পবদ্ধ সংগ্রাম করিয়া জাতীয় মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব অর্জন করিয়াছেন , সেই বাঙালী জাতীর ঐক্য ও সংহতি হইবে বাঙালী জাতীয়তাবাদের ভিত্তি।১১। প্রজাতন্ত্র হইবে একটি গণতন্ত্র , যেখানে মৌলিক মানবাধিকার ও স্বাধীনতার নিশ্চয়তা থাকিবে , মানবসত্তার মর্যাদা ও মূল্যের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ নিশ্চিত হইবে এবং প্রশাসনের সকল পর্যায়ে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে জনগণের কার্যকর অংশগ্রহণ নিশ্চিত হইবে।১৯। ( ১ ) সকল নাগরিকের জন্য সুযোগের সমতা নিশ্চিত করিতে রাষ্ট্র সচেষ্ট হইবেন। ২৭। সকল নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান এবং আইনের সমান আশ্রয়লাভের অধিকারী। ৩১।আইনের আশ্রয়লাভ এবং আইনানুযায়ী ও কেবল আইনানুযায়ী ব্যবহারলাভ যে কোন স্থানে অবস্থানরত প্রত্যেক নাগরিকের এবং সাময়িকভাবে বাংলাদেশে অবস্থানরত অপরাপর ব্যক্তির অবিচ্ছেদ্য অধিকার এবং বিশেষতঃ আইনানুযায়ী ব্যতীত এমন কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাইবে না , যাহাতে কোন ব্যক্তির জীবন , স্বাধীনতা , দেহ , সুনাম বা সম্পত্তির হানি ঘটে।৩২। আইনানুযায়ী ব্যতীত জীবন ও ব্যক্তিস্বাধীনতা হইতে কোন ব্যক্তিকে বঞ্চিত করা যাইবে ৩৬। জনস্বার্থে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসঙ্গত বাধানিষেধ সাপেক্ষে বাংলাদেশের সর্বত্র অবাধ চলাফেরা , ইহার যে কোন স্থানে বসবাস ও বসতিস্থাপন এবং বাংলাদেশ ত্যাগ ও বাংলাদেশে পুনঃপ্রবেশ করিবার অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের থাকিবে।৩৭। জনশৃঙ্খলা বা জনস্বাস্থ্যের স্বার্থে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসঙ্গত বাধানিষেধ – সাপেক্ষে শান্তিপূর্ণভাবে ও নিরস্ত্র অবস্থায় সমবেত হইবার এবং জনসভা ও শোভাযাত্রায় যোগদান করিবার অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের থাকিবে।৪২। (১) আইনের দ্বারা আরোপিত বাধা নিষেধ – সাপেক্ষে প্রত্যেক নাগরিকের সম্পত্তি অর্জন , ধারণ , হস্তান্তর ও অন্যভাবে বিলি – ব্যবস্থা করিবার অধিকার থাকিবে এবং আইনের কর্তৃত্ব ব্যতিত কোন সম্পত্তি বাধ্যতামূলকভাবে গ্রহণ, রাষ্ট্রায়ত্ত বা দখল করা যাইবে না।
সংবিধানের এই মৌলিক ধারাগুলো হতে পার্বত্য চট্টগ্রামের বাঙ্গালীরা যুগ যুগ ধরে বঞ্চিত। সংবিধানে কী বলা আছে আর পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তিতে কী বলা আছে? তা পাঠকের জ্ঞাতার্থে তুলে ধরা হলো:
পার্বত্য চুক্তির বিতর্কিত ধারাগুলোর (ক) সাধারণ১) উভয়পক্ষ পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলকে উপজাতি অধ্যুষিত অঞ্চল হিসাবে বিবেচনা করিয়া এ অঞ্চলের বৈশিষ্ট্য সংরক্ষণ এবং এ অঞ্চলের সার্বিক উন্নয়ন অর্জন করার প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করিয়াছেন।বাংলাদেশ সংবিধানের ১ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে ‘বাংলাদেশ একটি একক, স্বাধীন ও সার্বভৌম প্রজাতন্ত্র’। অর্থাৎ বাংলাদেশ একটি এককেন্দ্রিক রাষ্ট্র হিসেবে সংবিধানে স্বীকৃত।এক কেন্দ্রীক রাষ্ট্রে কোন প্রকার আঞ্চলিকতার কিংবা শাসনের বৈধতা নেই। এই থেকে প্রতিয়মান হয় যে পার্বত্য চুক্তির এই ধারাটি অসাংবিধানিক।
৩) ‘অ-উপজাতীয় স্থায়ী বাসিন্দা’ বলিতে যিনি উপজাতীয় নহেন এবং যাহার পার্বত্য জেলায় বৈধ জায়গা-জমি আছে এবং যিনি পার্বত্য জেলায় সুনির্দিষ্ট ঠিকানায় সাধারণতঃ বসবাস করেন তাহাকে বুঝাইবে। বাংলাদেশ সংবিধানের ৬ ( ২ ) এর মতে বাংলাদেশের জনগণ জাতি হিসাবে বাঙালী এবং নাগরিকগণ বাংলাদেশী বলিয়া পরিচিতি হইবেন। এবং৯ এ বলা আছে ভাষাগত ও সংস্কৃতিগত একক সত্তাবিশিষ্ট যে বাঙালী জাতি ঐক্যবদ্ধ ও সংকল্পবদ্ধ সংগ্রাম করিয়া জাতীয় মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব অর্জন করিয়াছেন , সেই বাঙালী জাতীর ঐক্য ও সংহতি হইবে বাঙালী জাতীয়তাবাদের ভিত্তি। অথচ পার্বত্য চুক্তির এখানে বাঙ্গালীকে অ-উপজাতি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। যা স্পষ্ট সংবিধান লঙ্ঘন এবং বাঙ্গালী জাতিকে অবজ্ঞা করার শামিল।
জেলা পরিষদকে পার্বত্য জেলা পরিষদ করে অসাংবিধানিক পার্বত্য চুক্তির নিম্নোক্ত ধারা সংযুক্ত করা হয়েছে। যার কিছু অসাংবিধানিক ধারা তুলে ধরা হয়েছে।
৪) (ক) প্রতিটি পার্বত্য জেলা পরিষদে মহিলাদের জন্যে ৩ (তিন) টি আসন থাকিবে। এসব আসনের এক-তৃতীয়াংশ (১/৩) অ-উপজাতীয়দের জন্যে হইবে।বাংলাদেশ সংবিধান মতে ১৯। ( ১ ) সকল নাগরিকের জন্য সুযোগের সমতা নিশ্চিত করিতে রাষ্ট্র সচেষ্ট হইবেন। এখানে যে, বৈষম্য সৃষ্টি হলো তা বাংলাদেশ সংবিধান অনুযায়ী চরম অনিয়ম এবং পক্ষপাতিমূলক।
(গ) ৪ নম্বর ধারার উপ-ধারা (৫)-এর দ্বিতীয় পংক্তিতে অবস্থিত ‘ডেপুটি কমিশনার’ এবং ‘ডেপুটি কমিশনারের’ শব্দগুলি পরিবর্তে যথাক্রমে ‘সার্কেল চীফ’ এবং ‘সার্কেল চীফের’ শব্দগুলি প্রতিস্থাপিত হইবে। এই ধারাগুলোও স্পষ্ট সংবিধান লঙ্ঘন। কারণ বাংলাদেশ সংবিধানে কোথায়ও ‘ডেপুটি কমিশনার’ শব্দের পরিবর্তে যথাক্রমে সার্কেল চীফ’ শব্দগুলো প্রতিস্থাপিত হওয়ার এমন কথা লেখা নেই।
(ঘ) ৪ নম্বর ধারার নিম্নোক্ত উপ-ধারা সংযোজন করা হইবে ‘কোন ব্যক্তি অ-উপজাতীয় কিনা এবং হইলে তিনি কোন সম্প্রদায়ের সদস্য তাহা সংশ্লিষ্ট মৌজার হেডম্যান/ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান/পৌর সভার চেয়ারম্যান কর্তৃক প্রদত্ত সার্টিফিকেট দাখিল সাপেক্ষে সংশ্লিষ্ট সার্কেলের চীফ স্থির করিবেন এবং এতদসম্পর্কে সার্কেল চীফের নিকট হইতে প্রাপ্ত সার্টিফিকট ব্যতীত কোন ব্যক্তি অ-উপজাতীয় হিসাবে কোন অ-উপজাতীয় সদস্য পদের জন্যে প্রার্থী হইতে পারিবেন না। এই ধারাটি সম্পূর্ণ বিতর্কিত এবং অসাংবিধানিক, বাংলাদেশ সংবিধান মতে ৬। ( ১ ) বাংলাদেশের নাগরিকত্ব আইনের দ্বারা নির্ধারিত ও নিয়ন্ত্রিত হইবে। অথচ এখান সংশ্লিষ্ট মৌজার হেডম্যান এবং সার্কেল চীফ তা স্থির করিবেন বলে বলা হয়েছে!
৮) ১৪ নম্বর ধারায় চেয়ারম্যানের পদ কোন কারণে শূন্য হইলে বা তাহার অনুপস্থিতিতে পরিষদের অন্যান্য সদস্যদের দ্বারা নির্বাচিত একজন উপজাতীয় সদস্য সভাপতিত্ব করিবেন এবং অন্যান্য দায়িত্ব পালন করিবেন বলিয়া বিধান থাকিবে। বাংলাদেশ সংবিধানে সকল নাগরিকদের জন্য সমান অধিকার এখানে কেন উপজাতি সদস্য সভাপতিত্ব করবেন! ১৩) ৩১ নম্বর উপ-ধারা (১) ও উপ-ধারা (২) এ পরিষদে সরকারের উপ-সচিব সমতুল্য একজন মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা সচিব হিসাবে থাকিবেন এবং এই পদে উপজাতীয় কর্মকর্তাদের অগ্রাধিকার প্রদান করা হইবে বলিয়া বিধান থাকিবে। এখানে কেন সংবিধান না মেনে বৈষম্য করা হবে?
২৪) (ক) ৬২ নম্বর ধারার উপ-ধারা (১) সংশোধন করিয়া নিম্নোক্তভাবে এই উপ-ধারাটি প্রণয়ন করা হইবে : আপাততঃ বলবৎ অন্য কোন আইনে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, পার্বত্য জেলা পুলিশের সাব-ইন্সপেক্টর ও তদনিম্ন স্তরের সকল সদস্য প্রবিধান দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে পরিষদ কর্তৃক নিযুক্ত হইবেন এবং পরিষদ তাহাদের বদলি ও প্রবিধান দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে তাহাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করিতে পারিবে। তবে শর্ত থাকে যে, উক্ত নিয়োগের ক্ষেত্রে জেলার উপজাতীয়দের অগ্রাধিকার বজায় রাখিতে হইবে। এখানে কেন সংবিধানের আইন ও পুলিশ প্রবিধান লঙ্ঘন করে জেলা পরিষদের হাতে পুলিশ ন্যস্ত হবে এবং তারা নিয়োগ দিবে?
(ক) আপাততঃ বলবৎ অন্য কোন আইনে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, পার্বত্য জেলার এলাকাধীন বন্দোবস্তযোগ্য খাসজমিসহ কোন জায়গা-জমি পরিষদের পূর্বানুমোদন ব্যতিরেকে ইজারা প্রদানসহ বন্দোবস্ত, ক্রয়, বিক্রয় ও হস্তান্তর করা যাইবে না। তবে শর্ত থাকে যে, রক্ষিত (Reserved বনাঞ্চল, কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ প্রকল্প এলাকা, বেতবুনিয়া ভূ-উপগ্রহ এলাকা, রাষ্ট্রীয় শিল্প কারখানা ও সরকারের নামে রেকর্ডকৃত ভূমির ক্ষেত্রে এ বিধান প্রযোজ্য হইবে না।(খ) আপাততঃ বলবৎ অন্য কোন আইনে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, পার্বত্য জেলা পরিষদের নিয়ন্ত্রণ ও আওতাধীন কোন প্রকারের জমি, পাহাড় ও বনাঞ্চল পরিষদের সাথে আলোচনা ও ইহার সম্মতি ব্যতিরেকে সরকার কর্তৃক অধিগ্রহণ ও হস্তান্তর করা যাইবে না।(গ) পরিষদ হেডম্যান, চেইনম্যান, আমিন, সার্ভেয়ার, কানুনগো ও সহকারী কমিশনার (ভূমি)দের কার্যাদি তত্ত্বাবধান ও নিয়ন্ত্রণ করিতে পারিবে।২৭) ৬৫ নম্বর ধারা সংশোধন করিয়া নিম্নোক্তভাবে এই ধারা প্রণয়ন করা হইবে। আপাততঃ বলবৎ অন্য কোন আইনে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, জেলার ভূমি উন্নয়ন কর আদায়ের দায়িত্ব পরিষদের হস্তে ন্যস্ত থাকিবে এবং জেলায় আদায়কৃত উক্ত কর পরিষদের তহবিলে থাকিবে।উপরোক্ত ৫টি ধারা কি সংবিধানের চেয়ে বড়? দেশের সংবিধান হচ্ছে সর্বোচ্চ আইন।সেই সংবিধানের ৭নং ধারার ২ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে ‘জনগণের অভিপ্রায়ের পরম অভিব্যক্তিরূপে এই সংবিধান প্রজাতন্ত্রের সর্বোচ্চ আইন এবং অন্য কোন আইন যদি এই সংবিধানের সহিত অসমঞ্জস হয়, তাহা হইলে সেই আইনের যতখানি অসামঞ্জস্যপূর্ণ, ততখানি বাতিল হইবে’৷সংবিধানকে যদি সত্যিকারার্থে সর্বোচ্চ আইন মানা হয় তাহলে উপরোক্ত অসাংবিধানিক ধারা বাতিল হইবে।
পরিষদের হাতে ন্যস্ত করা হয়েছে:
গ) উপজাতীয় আইন ও সামাজিক বিচার;ঙ) সামাজিক বিচারের ফিস;ঞ) ব্যবসার উপর কর;এগুলো সম্পূর্ণ বেআইনি নিয়ম। কারণ উপরোক্ত বিষয়গুলোর বিষয়ে স্পষ্ট সাংবিধানিকর রাষ্ট্রীয় আইন রয়েছে।(গ) একক রাষ্ট্রে আঞ্চলিকতার সুযোগ দেওয়ার অসাংবিধানিক পার্বত্য চুক্তির পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের কিছু ধারা তুলে ধরা হলো:
১) পার্বত্য জেলা পরিষদসমূহ অধিকতর শক্তিশালী ও কার্যকর করিবার লক্ষ্যে পার্বত্য জেলা স্থানীয় সরকার পরিষদ আইন, ১৯৮৯ ইং (১৯৮৯ সনের ১৯, ২০ ও ২১নং আইন)-এর বিভিন্ন ধারা সংশোধন ও সংযোজন সাপেক্ষে তিন পার্বত্য জেলা স্থানীয় সরকার পরিষদের সমন্বয়ে একটি আঞ্চলিক পরিষদ গঠন করা হইবে।
২) পার্বত্য জেলা পরিষদের নির্বাচিত সদস্যগণের দ্বারা পরোক্ষভাবে এই পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হইবেন যাহার পদমর্যাদা হইবে একজন প্রতিমন্ত্রীর সমকক্ষ এবং তিনি অবশ্যই উপজাতীয় হইবেন।
৩) চেয়ারম্যানসহ পরিষদ ২২ (বাইশ) জন সদস্য লইয়া গঠন করা হইবে। পরিষদের দুই-তৃতীয়াংশ সদস্য উপজাতীয়দের মধ্য হইতে নির্বাচিত হইবে। পরিষদ ইহার কার্যপদ্ধতি নির্ধারণ করিবেন। পরিষদের গঠন নিম্নরূপ হইবে :চেয়ারম্যান – ১ জনসদস্য উপজাতীয় (পুরুষ)- ১২ জনসদস্য উপজাতীয় মহিলা)- ২ জনসদস্য অ-উপজাতীয় (পুরুষ)- ৬ জনসদস্য অ-উপজাতীয় (মহিলা)- ১ জনউপজাতীয় পুরুষ সদস্যদের মধ্যে ৫ জন নির্বাচিত হইবেন চাকমা উপজাতি হইতে, ৩ জন মার্মা উপজাতি হইতে, ২ জন ত্রিপুরা উপজাতি হইতে, ১ জন মুরং ও তনচৈঙ্গ্যা উপজাতি হইতে এবং ১ জন লুসাই, বোম, পাংখো, খুমী, চাক ও খিয়াং উপজাতি হইতে।অ-উপজাতি পুরুষ সদস্যদের মধ্যে হইতে প্রত্যেক জেলা হইতে ২ জন করিয়া নির্বাচিত হইবেন।উপজাতীয় মহিলা সদস্য নিয়োগের ক্ষেত্রে চাকমা উপজাতি হইতে ১ জন এবং অন্যান্য উপজাতি থেকে ১জন নির্বাচিত হইবেন।
৪) পরিষদের মহিলাদের জন্য ৩ (তিন) টি আসন সংরক্ষিত রাখা হইবে। এক-তৃতীয়াংশ (১/৩) অ-উপজাতীয় হইবে।
৫) পরিষদের সদস্যগণ তিন পার্বত্য জেলা পরিষদের নির্বাচিত সদস্যগণের দ্বারা পরোক্ষভাবে নির্বাচিত হইবেন। তিন পার্বত্য জেলার চেয়ারম্যানগণ পদাধিকারবলে পরিষদের সদস্য হইবেন এবং তাহাদের ভোটাধিকার থাকিবে।পরিষদের সদস্য প্রার্থীদের যোগ্যতা ও অযোগ্যতা পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্যদের যোগ্যতা ও অযোগ্যতার অনুরূপ হইবে।
৬) পরিষদের মেয়াদ ৫ (পাঁচ) বৎসর হইবে। পরিষদের বাজেট প্রণয়ন ও অনুমোদন, পরিষদ বাতিলকরণ, পরিষদের বিধি প্রণয়ন, কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়োগ ও নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি সংশ্লিষ্ট বিষয় ও পদ্ধতি পার্বত্য জেলা পরিষদের অনুকূলে প্রদত্ত ও প্রযোজ্য বিষয় ও পদ্ধতির অনুরূপ হইবে।
৭) পরিষদে সরকারের যুগ্মসচিব সমতুল্য একজন মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা থাকিবেন এবং এই পদে নিযুক্তির জন্য উপজাতীয় প্রার্থীকে অগ্রাধিকার দেওয়া হইবে।
৮) (ক) যদি পরিষদের চেয়ারম্যানের পদ শূন্য হয় তাহা হইলে অন্তরবর্তীকালীন সময়ের জন্য পরিষদের অন্যান্য উপজাতীয় সদস্যগণের মধ্য হইতে একজন তিন পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্যগণের দ্বারা পরোক্ষভাবে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হইবেন।(খ) পরিষদের কোন সদস্যপদ যদি কোন কারণে শূন্য হয় তবে উপ-নির্বাচনের মাধ্যমে তাহা পূরণ করা হইবে।
৯) (ক) পরিষদ তিনটি পার্বত্য জেলা পরিষদের অধীনে পরিচালিত সকল উন্নয়ন কর্মকান্ড সমন্বয় সাধন করাসহ তিনটি পার্বত্য জেলা পরিষদের আওতাধীন ও উহাদের উপর অর্পিত বিষয়াদি সার্বিক তত্ত্বাবধান ও সমন্বয় করিবে। ইহা ছাড়া অর্পিত বিষয়াদির দায়িত্ব পালনে তিন জেলা পরিষদের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব কিংবা কোনরূপ অসংগতি পরিলক্ষিত হইলে আঞ্চলিক পরিষদের সিদ্ধান্তই চুড়ান্ত বলিয়া পরিগণিত হইবে।
(গ) তিন পার্বত্য জেলার সাধারণ প্রশাসন, আইন-শৃঙ্খলা ও উন্নয়নের ব্যাপারে আঞ্চলিক পরিষদ সমন্বয় সাধন ও তত্ত্বাবধান করিতে পারিবে।(ঘ) পরিষদ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনাসহ এনজিও’দের কার্যাবলী সমন্বয় সাধন করিতে পারিবে। (ঙ) উপজাতীয় আইন ও সামাজিক বিচার আঞ্চলিক পরিষদের আওতাভুক্ত থাকিবে। (চ) পরিষদ ভারী শিল্পের লাইসেন্স প্রদান করিতে পারিবে।
১০) পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড, পরিষদের সাধারণ ও সার্বিক তত্ত্বাবধানে অর্পিত দায়িত্ব পালন করিবে। উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে সরকার যোগ্য উপজাতীয় প্রার্থীকে অগ্রাধিকার প্রদান করিবেন।
১১) ১৯০০ সালের পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসন বিধি এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট আইন, বিধি ও অধ্যাদেশের সাথে ১৯৮৯ সনের স্থানীয় সরকার পরিষদ আইনের যদি কোন অসংগতি পরিলক্ষিত হয় তবে আঞ্চলিক পরিষদের পরামর্শ ও সুপারিশক্রমে সেই অসংগতি আইনের মাধ্যমে দূর করা হইবে।
১২) পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষ নির্বাচনের ভিত্তিতে আঞ্চলিক পরিষদ গঠিত না হওয়া পর্যন্ত সরকার অন্তরবর্তীকালীন আঞ্চলিক পরিষদ গঠন করিয়া তাহার উপর পরিষদের প্রদেয় দায়িত্ব দিতে পারিবেন।
১৩) সরকার পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ে আইন প্রণয়ন করিতে গেলে আঞ্চলিক পরিষদের সাথে আলোচনাক্রমে ও ইহার পরামর্শক্রমে আইন প্রণয়ন করিবেন। তিনটি পার্বত্য জেলার উন্নয়ন ও উপজাতীয় জনগণের কল্যাণের পথে বিরূপ ফল হইতে পারে এইরূপ আইনের পরিবর্তন বা নতুন আইন প্রণয়নের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিলে পরিষদ সরকারের নিকট আবেদন অথবা সুপারিশমালা পেশ করিতে পারিবেন।
১৪) নিম্নোক্ত উৎস হইতে পরিষদের তহবিল গঠন হইবে:(ক) জেলা পরিষদের তহবিল হইতে প্রাপ্ত অর্থ;(খ) পরিষদের উপর ন্যস্ত এবং তৎকর্তৃক পরিচালিত সকল সম্পত্তি হইতে প্রাপ্ত অর্থ বা মুনাফা;(গ) সরকার বা অন্যান্য কর্তৃৃপক্ষের ঋণ ও অনুদান;(ঘ) কোন প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি কর্তৃক প্রদত্ত অনুদান;(ঙ) পরিষদের অর্থ বিনিয়োগ হইতে মুনাফা;(চ) পরিষদ কর্তৃক প্রাপ্ত যে কোন অর্থ;(ছ) সরকারের নির্দেশে পরিষদের উপর ন্যস্ত অন্যান্য আয়ের উৎস হইতে প্রাপ্ত অর্থ।(ঘ) পুনর্বাসন, সাধারণ ক্ষমা প্রদর্শন ও অন্যান্য বিষয়াবলী২) সরকার ও জনসংহতি সমিতির মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষর ও বাস্তবায়ন এবং উপজাতীয় শরণার্থী ও আভ্যন্তরীণ উপজাতীয় উদ্বাস্তুদের পুনর্বাসনের পর সরকার এই চুক্তি অনুযায়ী গঠিতব্য আঞ্চলিক পরিষদের সাথে আলোচনাক্রমে যথাশীঘ্র পার্বত্য চট্টগ্রামে ভূমি জরিপ কাজ শুরু এবং যথাযথ যাচাইয়ের মাধ্যমে জায়গা-জমি সংক্রান্ত বিরোধ নিষ্পত্তি করতঃ উপজাতীয় জনগণের ভূমি মালিকানা চুড়ান্ত করিয়া তাহাদের ভূমি রেকর্ডভূক্ত ও ভূমির অধিকার নিশ্চিত করিবেন।৩) সরকার ভূমিহীন বা দুই একরের কম জমির মালিক উপজাতীয় পরিবারের ভূমির মালিকানা নিশ্চিত করিতে পরিবার প্রতি দুই একর জমি স্থানীয় এলাকায় জমির লভ্যতা সাপেক্ষে বন্দোবস্ত দেওয়া নিশ্চিত করিবেন। যদি প্রয়োজন মত জমি পাওয়া না যায় তাহা হইলে সেই ক্ষেত্রে টিলা জমির (গ্রোভল্যান্ড) ব্যবস্থা করা হইবে।৪) জায়গা-জমি বিষয়ক বিরোধ নিষ্পত্তিকল্পে একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির নেতৃত্বে একটি কমিশন (ল্যান্ড কমিশন) গঠিত হইবে। পুনর্বাসিত শরণার্থীদের জমি-জমা বিষয়ক বিরোধ দ্রুত নিষ্পত্তি করা ছাড়াও এ যাবৎ যেইসব জায়গা-জমি ও পাহাড় অবৈধভাবে বন্দোবস্ত ও বেদখল হইয়াছে সেই সমস্ত জমি ও পাহাড়ের মালিকানা স্বত্ব বাতিলকরণের পূর্ণ ক্ষমতা এই কমিশনের থাকিবে। এই কমিশনের রায়ের বিরুদ্ধে কোন আপিল চলিবে না এবং এই কমিশনের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত বলিয়া বিবেচিত হইবে। ফ্রীঞ্জল্যান্ড (জলে ভাসা জমি)-এর ক্ষেত্রে ইহা প্রযোজ্য হইবে।৫) এই কমিশন নিম্নোক্ত সদস্যদের লইয়া গঠন করা হইবে :(ক) অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি;খ) সার্কেল চীফ (সংশ্লিষ্ট);গ) আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান/প্রতিনিধি;ঘ) বিভাগীয় কমিশনার/অতিরিক্ত কমিশনার;ঙ) জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান (সংশ্লিষ্ট)।৬) (ক) কমিশনের মেয়াদ তিন বছর হইবে। তবে আঞ্চলিক পরিষদের সাথে পরামর্শক্রমে উহার মেয়াদ বৃদ্ধি করা যাইবে।(খ) কমিশন পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রচলিত আইন, রীতি ও পদ্ধতি অনুযায়ী বিরোধ নিষ্পত্তি করিবেন।এখানে উল্লেখ্য যে, ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য বাংলাদেশের ভূমি আইন রয়েছে এবং আদালত আছে। এসব কিছুকে পাশকাটিয়ে এই বিতর্ক নিয়ম ভূমির বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে পারে না। এই কমিশনের চেয়ারম্যানের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার সুযোগ নেই। সুতারং এটা সম্পূর্ণ অসাংবিধানিক এবং বৈষম্যমূলক পদক্ষেপ।
১৮) পার্বত্য চট্টগ্রামের সকল সরকারী, আধা-সরকারী, পরিষদীয় ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের সকল স্তরের কর্মকর্তা ও বিভিন্ন শ্রেণীর কর্মচারী পদে উপজাতীয়দের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পার্বত্য চট্টগ্রামের স্থায়ী অধিবাসীদের নিয়োগ করা হইবে। তবে কোন পদে পার্বত্য চট্টগ্রামের স্থায়ী অধিবাসীদের মধ্যে যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তি না থাকিলে সরকার হইতে প্রেষণে অথবা নির্দিষ্ট সময় মেয়াদে উক্ত পদে নিয়োগ করা যাইবে।
১৯) উপজাতীয়দের মধ্য হইতে একজন মন্ত্রী নিয়োগ করিয়া পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক একটি মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা করা হইবে। এই মন্ত্রণালয়কে সহায়তা করিবার জন্য নিম্নে বর্ণিত উপদেষ্টা কমিটি গঠন করা হইবে।(ক) পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রী(খ) চেয়ারম্যান/প্রতিনিধি, আঞ্চলিক পরিষদ(গ) চেয়ারম্যান/প্রতিনিধি, রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ(ঘ) চেয়ারম্যান/প্রতিনিধি, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ(ঙ) চেয়ারম্যান/প্রতিনিধি, বান্দরবন পার্বত্য জেলা পরিষদ(চ) সাংসদ, রাঙ্গামাটি(ছ) সাংসদ, খাগড়াছড়ি(জ) সাংসদ, বান্দরবন(ঝ) চাকমা রাজা(ঞ) বোমাং রাজা(ট) মং রাজা(ঠ) তিন পার্বত্য জেলা হইতে সরকার কর্তৃক মনোনীত পার্বত্য এলাকার স্থায়ী অধিবাসী তিনজন অ-উপজাতীয় সদস্য।উপরোক্ত চুক্তির বিতর্কিত ধারাগুলোকে ‘সংবিধান’ দিয়ে বিশদভাবে ব্যাখা করতে গেলে লেখা অনেক বড় হবে তাই লেখা বড় না করে সংবিধানের ১ নং অনুচ্ছেদ দিয়ে তার ব্যাখা দিয়ে দিলাম। সংবিধানের ১ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে ‘বাংলাদেশ একটি একক, স্বাধীন ও সার্বভৌম প্রজাতন্ত্র’। অর্থাৎ বাংলাদেশ একটি এককেন্দ্রিক রাষ্ট্র হিসেবে সংবিধানে স্বীকৃত।একটি একক কেন্দ্রীক রাষ্ট্রে কোন প্রকার আঞ্চলিকতার কিংবা শাসনের বৈধতা নেই। তাই পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বৈধতা হারিয়েছে। পার্বত্য চুক্তিতে সংবিধান বিরোধী যেসমস্ত আইন প্রণয়ন করা হয়েছে তা না পড়লে এবং খুব নিবিড়ভাবে পর্যালোচনা না করলে এর বিশাল তফাৎ সহজেই অনুয়েম করা সম্ভব নয়। এই চুক্তির ধারাগুলোকে সংবিধানের সঙ্গে পরীক্ষা নিরিক্ষার মাধ্যমে এই বিষয়ে আমার সল্প জ্ঞান থেকে যতটুকু ‘ধারণ’ করেছি তা থেকে বলতে পারি পার্বত্য চুক্তি বাংলাদেশ সংবিধানকে পাশকাটিয়ে করা হয়েছে। তা না হলে একটি একক রাষ্ট্রে কীভাবে আঞ্চলিকতার ঠাঁই দেওয়া হয়?