মোঃ সোহেল রিগ্যান– পার্বত্য চট্টগ্রামের দেশদ্রোহী বিচ্ছিন্নতাবাদী শান্তিবাহিনী কর্তৃক ১৯৮৩ সালের ২৬ জুলাই গোলকপতিমাছড়া, মাইচ্যেছড়া ও তারাবনছড়ি গণহত্যা সংগঠিত হয়। এ গণহত্যা ২৬ জুলাই, ২৭ জুলাই; ৯ আগষ্ট, ১০ আগষ্ট, ১১ আগষ্ট পর্যন্ত চলে।
সরকার ১৯৭৯ সালে রাষ্ট্রের অখণ্ডতার নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করেই সরকারি ভূমিতে সমতল থেকে কয়েক হাজার বাঙ্গালী এনে পূর্নবাসন করে পার্বত্য চট্টগ্রামে। গোলকপতিমাছড়া, মাইচ্যেছড়া, তারাবনছড়িও তারই ধারাবাহিকতায় বাঙ্গালী পূর্ণবাসন করে। মানবজাতির রক্ত পিপাসু সন্তু লারমার পার্বত্য চট্টগ্রাম জন সংহতি সমিতি ‘পিসিজেএসএস’ প্রকাশ তথাকথিত শান্তিবাহিনীর হায়েনা কর্তৃক গোলকপতিমাছড়া, মাইচ্যেছড়া, তারাবনছড়াতে বাঙ্গালীদের গ্রামগুলোতে অগ্নি সংযোগসহ লুটপাট, হত্যা,বাঙ্গালী নারীদের গণধর্ষণ ও পরে গুম করে নারকীয়তা সৃষ্টি করেছিলো।
একটি শান্ত জনপদের অধিবাসীদের নিঃশেষ (নিধন) করতে যে, সমস্ত আয়োজনের প্রয়োজন হয় তার সবই করেছে সন্তু লারমার হায়েনা শান্তিবাহিনী। ৩টি বাঙ্গালী গ্রামে ২৭০ জন শান্তিবাহিনীর হায়েনারা প্রবেশ করে চতুর্দিক থেকে ঘিরে ফেলে। ২৬ জুলাই সন্ধ্যা থেকে এ গণহত্যার অভিযান পরিচালনা করে ২৭ জুলাই ২টাই শেষ করে। এসময় তারা যে, নৃশংসতা, বর্বরতা ও তাণ্ডব চালায় তার ভয়াবহতা আমার সল্প জ্ঞানে তুলে ধরা সম্ভব নয়। তাই সংক্ষিপ্তভাবে শুধুই উল্লেখ্য করছি, গণহত্যায় হতাহতের পরিসংখ্যান ও কিছু বর্ণনা। এ গনহত্যায় ৯৪৩ জন বাঙ্গালী নিহত হয়েছিলো। আহত করা হয়েছে আরও ১২০০ জনের অধিক, অপহরণ ও গুম করা হয়েছে আরো শত শত বাঙ্গালীকে। ধর্ষণ করা হয়েছে ২৫ জন বাঙ্গালী শিশু ও কিশোরী মেয়েকে। গণধর্ষণ করা হয়েছে ১৬ জন বাঙ্গালী গৃহবধূকে। এ গণহত্যায় নিহতদের সিংহ ভাগ বৃদ্ধ, নারী ও শিশু।
হায়েনারা সর্বপ্রথম, অগ্নিসংযোগ করার পূর্বে বাঙ্গালীদের ঘর বাড়ি তল্লাশি করে টাকা পয়সা, সোনাদানা লুটপাট করে।
তারপর গৃহপালিত পশুসহ বাঙ্গালীদের ঘর বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে। ১৯ ঘন্টা ব্যবধানে ৩টি শান্ত জনপদের অধিবাসীদের একতৃতীয়াংশ হত্যা, আহত ও গুম, এবং ধর্ষণের মাধ্যমে শেষ করে দেয়। একটি জাতিকে নিধন করার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট। কিন্তু না!… হায়েনারা এখানে থেমে থাকেনি তারা আবার ৯ আগষ্ট, ১০ আগষ্ট ও ১১ আগষ্ট পর্যন্ত দফায় দফায় হামলা পরিচালনা করে গণহত্যার পরিসংখ্যান ভারী করে, এবং নিজেদের নৃশংসতার তাণ্ডবলীলার ভয়াবহতা প্রকাশ করে।
সেসময় গণহত্যা থেকে বেছে যাওয়া ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, তাদের সেদিন স্বয়ং আল্লাহ বাঁচিয়ে রেখেছে। না হয় শান্তিবাহিনীর হায়েনাদের হাত থেকে বেছে ফিরা কিছুতেই সম্ভব ছিলনা। তারা নিজ চোখে দেখেছে, শিশু, কিশোরী ও তাদের স্ত্রীদের ধর্ষণের পর হত্যা করতে এবং শিশুদের বুকে আঘাত করে হত্যা করতে। তারা শান্তিবাহিনীর হায়েনাদের এমনও দেখেছে, তমিজ উদ্দিন নামের এক বাঙ্গালীকে নৃশংসভাবে হত্যা করার পর তার লাশের উপর দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করে উল্লাস করতে! প্রত্যক্ষদর্শী হুমায়ুন কবির জানান, “শান্তিবাহিনী গুলি করে বাঙ্গালীদের হত্যা করার পর মৃত্যু নিশ্চিত করতে দা-ছোরা দিয়ে লাশ কেটে টুকরো টুকরো করে মৃত্যু নিশ্চিত করেছে৷ আরফান নামের এক প্রতিবাদী যুবকের বুকের কলিজা কেটে হায়েনারা উল্লাস করেছে। সেসময় উপজাতি শান্তিবাহিনীর সদস্যরা যে নৃশংসতা, বর্বরতা ও তাণ্ডবলীলার মাধ্যমে গণহত্যা চালিয়েছে, তা পৃথিবীর অন্য কোন দ্বিতীয় দেশে হয়েছে কিনা যথেষ্ট সন্দেহ আছে।”
গনহত্যার পর ঐ অঞ্চল আজ পাহাড়ি লোকালয়। মানবজাতির রক্ত পিপাসু খুনী সন্তু লারমার বিচার আজ পর্যন্ত বাংলার মাটিতে হয়নি। ১৯৯৭ সালের পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির মাধ্যমে তাকে দায়মুক্তি দেয়া হয়! পার্বত্য চট্টগ্রামে ৩৮ হাজার বাঙ্গালী হত্যা করে সে আজ প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদা ভোগ করছে। এটা স্বজন হারা পার্বত্য বাঙ্গালী পরিবারগুলোর সাথে উপহাসের সামিল।