মোঃ সোহেল রিগ্যান– ১৯৯৮ সালের ২৬ ডিসেম্বর রাজধানী ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনের মধ্য দিয়ে প্রসিত বিকাশ খীসার নেতৃত্বে পার্বত্য চুক্তির বিরোধিতা করে স্বায়ত্তশাসন দাবি রেখে ইউপিডিএফ আত্মপ্রকাশ করেই অদ্যবধি পর্যন্ত পাহাড়ের চাঁদাবাজি, অস্ত্রবাজি, অপহরণ ও খুন-গুম করে জনজীবন অতিষ্ঠ করে আসছে। ইউপিডিএফ-এর মিথ্যা স্বপ্ন ও মিথ্যা বুলিতে এ দীর্ঘসময় অনেক উপজাতি একবুক আশা নিয়ে ইউপিডিএফ এ যোগদান করেছে৷ ইউপিডিএফ যোগদান করার একটা পর্যায়ে তারা দেখতে পায় এখানে জাতির অধিকার এর দোহাই দিয়ে চাঁদাবাজি করা হয়। আর চাঁদাবাজির সেসব টাকা ইউপিডিএফ-এর শীর্ষ নেতারা ভাগবাটোয়ারা করে নেয় এবং তাদের ছেলেসন্তানদের উচ্চ শিক্ষিত করতে দেশ-বিদেশের নামি-দামি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করাচ্ছে ও নিজেরা বিলাসবহুল জীবনযাপন করছে! কিন্তু চাঁদাবাজি ও অস্ত্রবাজি করতে গিয়ে হত্যাকাণ্ডের শিকার হচ্ছে মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। মোট কথা শীর্ষ নেতাদের কেউ ক্ষতিগ্রস্ত বা হত্যাকাণ্ডের শিকার হচ্ছেনা। ইউপিডিএফ শীর্ষ নেতারা দুর্নীতি করে কোটিপতি বনে যাওয়ার বিরুদ্ধে অনেক মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মী প্রতিবাদ শুরু করে আবার কেউ কেউ দলত্যাগও করে। ইউপিডিএফ শীর্ষ নেতাদের বিরোধিতা করা ও দলত্যাগ করার শাস্তি হিসেবে বিভিন্ন সময় ইউপিডিএফ লাখ লাখ টাকা জরিমানা করেছে এবং অনেক নেতাকর্মীকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে।
ইউপিডিএফ ত্যাগ করা কিছু নেতাকর্মী ইউপিডিএফ এর মুখোশ উন্মোচন করার উদ্দেশ্যেই ছোট আঁকারে একটি বই বাহির করে। ইউপিডিএফ এর দুর্নীতি ও স্বায়ত্তশাসনের দোহাই দিয়ে সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে চাঁদাবাজি ও অস্ত্রবাজি করার আসল রহস্য যেন পার্বত্যবাসী জানতে পারে মূলত তাই বই’টি প্রকাশ করে। যা পাঠকদের জ্ঞাতার্থে তুলে ধরা হলো-
সৌরভ বাবু কর্মীদের সামনে আদির বিরুদ্ধে নানা সমালোচনা করতে শোনা যায়। এইসব রক্ষণশীল , দুর্নীতিবাজ , অলস, ভীরু কম্যান্ডার দিয়ে যুদ্ধ করে সফল হওয়া কোনভাবে সম্ভব নই বলে আমরা মনেকরি। এ ছাড়াও কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দসহ অনেক নেতা কর্মীদের দুর্নীতি , অনিয়ম ভরি ভরি রয়েছে। যা ভবিষ্যতে বলার জন্য উল্লেখ করা গেল না। ইউপিডিএফ এর ভিতরে অনেক সৎ ও ত্যাগী কর্মী রয়েছে। তারা সৎ ও ত্যাগী হলেও দুর্নীতিবাজ নেতা কর্মীদের অধীনে তাদের দায়িত্ব পালন করতে হয়। তাই আসুন জনগণের পার্টি ইউপিডিএফ- এর মধ্যে লুকিয়ে থাকা দুর্নীতিবাজ নেতাদের চিহ্নিত করে জনগণের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে পার্টিকে দুর্নীতি ও কলঙ্কমুক্ত করি। সৎ , দক্ষ , ত্যাগী ও সাহসী নেতা কর্মীদের সমন্বয়ে পার্টির নেতৃত্ব সাজিয়ে পাহাড়ী জনগণে অধিকারের সংগ্রাম এগিয়ে নিই। এই আন্দোলন সংগ্রামের পথে আমরা সমাজের বিভিন্ন শ্রেণী মরুব্বীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে চায়। ব্যাপক কর্মীবাহিনীর মতামতের ভিত্তিতে পার্টির কার্যক্রম চালিয়ে যেতে চায়। প্রদীপন খীসাদের মতো হঠকারী সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিয়ে কোন কর্মসূচি আমরা নেওয়ার পক্ষে নয় যা জনগণকে হয়রানি ও পরিস্থিতিকে অবনতির দিকে নিয়ে যায়। পরিবর্তিত পরিস্থিতির আলোকে আমরা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে পার্টি এগিয়ে নিতে চায়। সবশেষে আমরা বলতে চাই- ইতোমধ্যে সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে অবস্থান নেওয়ায় আমাদেরকে বিভিন্ন হুমকি, পরিবারদের উচ্ছেদসহ নানা ধরনের হয়রানিমূলক কর্মকান্ড ঘটানো হয়েছে যা অত্যন্ত দুঃখজনক। এইসব অনৈতিক অপকার্যকলাপ অচিরে বন্ধ করার জন্য পার্টির ত্যাগী নেতা কর্মীদের ইউপিডিএফ এর মূল চেতনা ও আদর্শকে বাস্তবায়নে মূলধারার ইউপিডিএফ এর পতাকা তলে সামিল হওয়ার জন্যে সর্বস্তরের নেতা কর্মীদের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি এবং এসব অকাজের জন্য দায়ী নেতা কর্মীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে বাধ্য হলাম। ইউপিডিএফ এর পার্টি ছেড়ে দিয়ে নিষ্ক্রিয় হতে চাইলে আর্থিক দন্ড দিতে হয়। যারা ইউপিডিএফ এর পার্টি ছেড়ে দিয়ে আর্থিক দন্ড দিতে হয়েছে তাদের নাম তালিকা নিম্নে দেওয়া হলো।
১. শ্যামল চাকমা (কালেক্টর ) পিতা – বিন্দু কুমার চাকমা, গ্রাম– জিতেন্দ্র পাড়া, পানছড়ি, খাগড়াছড়ি। টাকার পরিমাণ– ১৪৭,০০০ টাকা।
২. নিকের চাকমা (পিপল) সেকশন কমান্ডার , পিতা বিন্দু হাল্যা চাকমা , লাম্বু পাড়া তারাবন্যা , পানছড়ি , খাগড়াছড়ি । টাকার পরিমাণ- ২৫০,০০০ টাকা।
৩. উজ্জ্বল কান্তি চাকমা (প্রত্যয়) প্লাটুন কমান্ডার, পিতা- মৃত সুরেজ কুমার চাকমা, গ্রাম– নাঙ্গেল পাড়া, নানিয়াচর, রাঙ্গামাটি। টাকার পরিমাণ ৪৩০,০০০ টাকা।
৪.আপেস চাকমা, গ্রাম-বড়ইতলী, বর্মাছড়ি। টাকার পরিমাণ- ৫০,০০০ টাকা।
৫. বিজিগুল চাকমা (ভাস্কর) পরিচালক, গ্রাম–ত্রিপুরাছড়া, বুন্দুকভাঙ্গা। টাকার পরিমাণ ৫০,০০০ টাকা।
৬. নির্ণয় চাকমা , সাধারণ কর্মী , গ্রাম দুরখিয়া , বন্দুকভাঙ্গা । টাকার পরিমাণ – ৯০০০০ টাকা।
৭. সতেজ চাকমা , সেকশন কমান্ডার , খাড়াছড়ি। টাকার পরিমাণ- ২০০০০ টাকা।
৮.এলিন চাকমা (সদত্ত), কালেক্টর, নানিয়াচর। টাকার পরিমাণ ৮০,০০০ টাকা।
৯. তনয় চাকমা (তাপস ), কালেক্টর, গ্রাম খুল্যায় পাড়া, নানিয়াচর টাকার পরিমাণ- ৭০,০০০ টাকা।
১০. দিবিন্দু চাকমা, ঘাগড়া। টাকার পরিমাণ ২০০,০০০ টাকা।
ইউপিডিএফ যদিও নিজেদেরকে গণতান্ত্রিক পার্টি দাবী করে কিন্তু তাদের কাজ কর্মে তথা অকর্মী সুলভ আচরণের কারণে ইউপিডিএফ আজ ডাকাতের পার্টিতে পরিণত হয়েছে। যার কারণে ইউপিডিএফ তার নিজ কর্মীকে মেরে ফেলতে দ্বিধাবোধ করে না। ইউপিডিএফ করেও ইউপিডিএফ এর কর্তৃক যাদেরকে মেরে ফেলা হয়েছে তাদের নামের তালিকা নিম্নে দেওয়া হলো-
১. সমুন চাকমা , সাধারণ কর্মী , গ্রাম উকছড়ি, সুবলং।
২. স্টালিন চাকমা সাধারণ কর্মী, রাঙ্গামাটি।
৩. পরাক্রম চাকমা , কুতুকছড়ি ইউপিডিএফ অফিস দায়িত্বরত অবস্থায় এবং অভিলাস চাকমা , ইউপিডিএফ ত্যাগ করার কারণে পরাক্রম চাকমাকে মেরে ফেলা হয়।
৪. অনিল চাকমা (গোর্কি ) ইউপিডিএফ ত্যাগ করার কারণে সবচেয়ে সাহসী এবং দক্ষ কমান্ডার রয়েল মার্মাকে আনন্দ প্রকাশ চাকমা ও রতন বসু মার্মার (জয় মার্মা) যোগ সাজসে অভিনব কায়দায় রয়েল মার্মাকে লক্ষিছড়ি রক্তছড়ি এলাকায় হত্যা করা হয়।
যেখানে মার্মা জনগোষ্ঠিদের মাঝে এখনো রয়েল মার্মা মৃত্যুর পিছনে রহস্যাবৃত রয়েছে।
৫. দুম্বা চাকমা
৬. দিবাকর চাকমা , এ দুজন সুবলং প্রতিনিধিকে কুতুকছড়িতে ডেকে এনে সামান্য অপরাধে মেরে ফেলা হয়।
৭. সংগ্রাম চাকমা , গ্রাম কৃষ্ণমাছড়া।
৮. কিশোর মোহন চাকমা (অনল ), যাত্রামাণি কার্বারী পাড়া , নানিয়াচর।
৯. দুর্জয় চাকমা।
এবার আপনারা বলুন ইউপিডিএফ কী জাতির অধিকার এর জন্য কাজ করে নাকি চাঁদাবাজি করে বিলাসবহুল জীবনযাপন করার জন্য কাজ করে?