মোঃ সোহেল রিগ্যান– উপজাতি উগ্রবাদী সন্ত্রাসীদের বেশ কয়েকটি ফেসবুক আইডি হতে ডঃ ইউছুফ আলী কর্তৃক পাহাড়ে ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিতকরণের একটি মিথ্যা বানোয়াট খবর ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে- যা তা উদ্দেশ্যপ্রণোদীত এবং ভিত্তিহীন।
পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতি বৌদ্ধ চাকমা মারমা, বম, খুমি ও চাক এবং হিন্দু ত্রিপুরা যখন স্বধর্ম ছেড়ে ধর্মান্তরিত হয়ে খ্রিস্টধর্মে দীক্ষিত হয় তখন কিন্তু বর্নিত মহলের প্রতিবাদ বা এই নিয়ে কথা বলতে দেখা যায় না! শুধুমাত্র তাদের চোখে পড়ে কেউ সেচ্ছায় ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত হলে। ডঃ ইউছুফ আলী একজন সহজসরল প্রকৃতরি লোক এবং মানবতার ফেরিওয়ালা। তার বিরুদ্ধে সন্ত্রাসীরা যে অভিযোগ করছে তার বিন্দুমাত্র সত্যতা নেই। তিনি কখনো কোন উপজাতিকে জোরপূর্বক বা প্রভোলন দেখিয়ে ইসলাম ধর্মে ধমান্তরিত করেনি। ধর্মান্তরিত করেছেন উপজাতীয়দের তথাকথিত সন্ত্রাসী সশস্ত্র গোষ্ঠী কর্তৃক বাবা এবং মাকে মেরে ফেলায় এতিম ছেলেমেয়েদেরকে। নিতান্তই বাঁচার তাগিদে তার এতিম বা অনাথ আশ্রয় তারা মানুষ হচ্ছে।
পার্বত্য চট্টগ্রামের ধর্মান্তরিতকরণের চরম বাস্তবতা হচ্ছে খ্রিস্টান মিশনারী, এনজিও এবং বৈদেশিক দাতাসংস্থা কর্তৃক হাজার হাজার হতদরিদ্র সহজসরল উপজাতিকে টার্গেট করে শিক্ষা ও সহায়তার নামে খ্রিস্ট ধর্মে ধমান্তরিত করা হয়। পার্বত্য চট্টগ্রামে মিশনারীরা শিক্ষা ও আশ্রম এবং সহায়তার নামে প্রতিনিয়ত বৌদ্ধ উপজাতি এবং হিন্দু ত্রিপুরাদের খ্রিস্ট ধর্মে ধর্মান্তরিত করে আসছে তা নিয়ে উপজাতি সন্ত্রাসীদের নীরবতা জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে৷ তারা ডঃ ইউছুফ আলীর বিরুদ্ধে মিথ্যা বানোয়াট তথ্য ছড়িয়ে পাহাড়ে মুসলিম বাঙ্গালী ও সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে কুৎসা রটিয়ে জনমনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলার প্রচেষ্টা করছে। তাদের প্রকৃত উদ্দেশ্য পাহাড় হতে মুসলিম বাঙ্গালী এবং সেনাবাহিনী হটিয়ে এবং পার্বত্য চট্টগ্রামকে খ্রিস্টান রাষ্ট্র করা।
পার্বত্য চট্টগ্রামে খ্রিস্ট ধর্মের প্রচার ও ধর্মান্তরিতকরণের চরম বাস্তবতা এবং এর পরিসংখ্যান জানা যাক-
১৯৯৮ সাল হতে ২০২০ সাল পর্যন্ত ৪৩৪৪ জন খ্রিস্টান হয়েছে -বৌদ্ধ এবং হিন্দু ধর্ম হতে। অপর দিকে মাত্র ৪৫০ জন হয়েছে মুসলিম। হিন্দু হয়েছে ৭৬ জন(তথ্যসূত্র-দৈনিক জনকন্ঠ ২৪শে এপ্রিল ২০২১)।পরিসংখ্যান অনুযায়ী এখানে ব্যাপক হারে খ্রিস্টান ধর্মে ধর্মান্তরিত হয়েছে৷ তবুও অপপ্রচারকারী উগ্রবাদী সন্ত্রাসীরা একপেশে শুধুমাত্র ইসলামে ধর্মান্তরিত হওয়াকে ফলো করে প্রচার করছে। অদ্যবধি পর্যন্ত পাহাড়ে ৪৪৬ টি হিন্দু মন্দির হয়েছে, ১৬৬০ টি বৌদ্ধ কিয়াং হয়েছে এবং ক্রিস্টান গির্জা হয়েছে ৬৬৪টি যা শান্তি চুক্তির পূর্বে যথাক্রমে ২৭০ টি মন্দির ১১১৯টি গির্জা ও সর্বোপরি ২৭৪ টি মাত্র গির্জা ছিল। তার পরেও সন্ত্রাসীরা শুধুমাত্র ইসলামের বিরুদ্ধে অপপ্রচারে নেমেছে।
আরো একটু খোলসা করে বললে, গত ৩০ বছরে অর্থাৎ ১৯৯১ সাল হতে ২০১১ সাল পর্যন্ত সরকারি আদমশুমারি অনুযায়ী পার্বত্য চট্টগ্রামে খ্রিস্টান ধর্মের অনুসারীদের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১৩৪.৪৭%। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী ১৯৯১ সালে পার্বত্য চট্টগ্রামের মোট জনসংখ্যা ৯৭৪৪৪৫ জনের মধ্যে ৪২৯৯৫৪ জন ছিল মুসলমান, যা শতাংশ হিসাব মোট জনসংখ্যার ৪৪.১২% । অপরদিকে ২০১১ সালের মোট জনসংখ্যা ১৫৯৮২৩১ জনের বিপরীতে মুসলিম জনসংখ্যার পরিমাণ ছিল ৬৮০৮১০ জন, যা শতাংশের হিসেবে ৪২.৬০%। সে হিসেবে গত ৩০ বছরে পার্বত্য চট্টগ্রামে মুসলিম জনসংখ্যা কমেছে প্রায় ২%। এর বিপরীতে ১৯৯১ সালে খ্রিস্টান ধর্মের অনুসারীদের জনসংখ্যা যেখানে ছিল ২২২০৬ জন (মোট জনসংখ্যার ২.২৮%), যা ২০১১ সালে বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ৫২০৬৬ জনে। শতাংশের বিচারে যা বর্তমানে মোট জনসংখ্যার ৩.২৬%(পরিসংখ্যান ব্যুরো জুন ২০২২)। উপরের তথ্য উপাত্ত হতে সহজে অনুমেয় যে, গত ৩০ বছরে পার্বত্য চট্টগ্রামে ব্যাপক হারে খ্রিস্টধর্মে ধর্মান্তরের ঘটনা ঘটেছে, যা বর্তমানেও চলমান রয়েছে। অনুসন্ধানে দেখা যায় যে, আর্থ সামাজিক উন্নয়নের অন্তরালে দেশি এবং বিদেশি কিছু স্বার্থন্বেষী মহলের উদ্যোগে পরিচালিত কপিতয় এনজিও দারিদ্র উপজাতি জনগণকে খ্রিস্টধর্মে ধর্মান্তরের হীন চক্রান্তে নিয়োজিত রয়েছে। এক্ষেত্রে, কারিতাস, ওয়ার্ল্ড ভিশন, সনে ইন্টারন্যাশনাল, কমিউনিটি এডভান্সমেন্ট ফোরাম, ব্যাপ্টিস্ট চার্চ ওফ বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য। এ সকল এনজিও পার্বত্য চট্টগ্রামের নিম্নবিত্ত পরিবারের অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে আর্থিক প্রলোভন দেখিয়ে তাদের সংস্কৃতি, কৃষ্টি এবং স্বকীয়তা বিসর্জনের মাধ্যমে এই ধর্মান্তকরণের কার্যক্রম পরিচালিত করছে। ফলশ্রুতিতে, বর্তমানে পার্বত্য চট্টগ্রামে খ্রিস্ট ধর্মের সংখ্যা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। অনুসন্ধানে দেখা যায় যে, গত পহেলা জানুয়ারি পার্বত্য চুক্তির পর হতে এ পর্যন্ত প্রায় ৪৩৪৪ জন উপজাতীয় ব্যক্তিবর্গ এসকল এনজিওদের প্রলোভনের ফাঁদে পা দিয়ে নিজস্ব ধর্ম-সংস্কৃতি বিসর্জন দিয়ে খ্রিষ্ট ধর্মে ধর্মান্তরিত হয়েছে। যা বেসরকারি হিসেবে আরো বেশি। এক্ষেত্রে এসকল এনজিওদের অন্যতম লক্ষবস্তু হল ক্ষয়িষ্ণু কিছু ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী যথা চাকমা, মারমা বম, চাক, লুসাই ও পাংখা নৃ-গোষ্ঠী। যাদের মোটামুটি সকলেই খৃষ্টধর্মে ধর্মান্তরিত হয়েছে। ধর্মান্তরের পাশাপাশি পার্বত্য চট্টগ্রামে গির্জার সংখ্যা উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে। গত আগস্ট ২০১৭ এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী পার্বত্য চট্টগ্রামে যেখানে গির্জার সংখ্যা ছিল ৩৬৫ টি, তা ২০২২ সালের আগস্টের মধ্যে বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ৬৬৪ টিতে। এই পরিসংখ্যান থেকে প্রতীয়মান হয় যে পার্বত্য চট্টগ্রামে খ্রিষ্টধর্মের প্রভাব কিভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। আর এভাবে চলতে থাকলে হয়তো আগামী ২০ বছরে পার্বত্য চট্টগ্রামের মোট জনসংখ্যার শতকরা ৫০ ভাগ মানুষ খ্রিস্ট ধর্মের অনুসারী হবে।
যেখানে পার্বত্য চট্টগ্রামে হাজার হাজার উপজাতি মিশনারীদের খপ্পরে পড়ে খ্রিস্টান হয়ে যাচ্ছে সেটা নিয়ে তার ভ্রক্ষেপ নেই!পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতি উগ্রবাদী সন্ত্রাসীরা পূর্বেও সরকারের বিরুদ্ধে নানান মিথ্যা বানোয়াট অপপ্রচার করেছে। এখন আবার পাহাড়ে ইসলামধর্মে ধর্মান্তরিতকরণের মিথ্যা বানোয়াট অপপ্রচার শুরু করেছে। বান্দরবানে প্রতিনিয়ত খ্রিস্টান ধর্মে যে সাধারণ উপজাতিরা ধর্মান্তরিত হচ্ছে তা নিয়ে উপজাতি নেতৃত্ব শ্রেণী এবং সন্ত্রাসীদের মাথা ব্যাথা নেই৷
সন্ত্রাসীরা বোধহয় এটা জানে না যে, ইসলাম ধর্মে কাউকে জোর করে ধর্মান্তরিত করার নিয়ম নেই। পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি মানুষ ইসলামের দিকে ঝুঁকছে স্বেচ্ছায়। বান্দরবানে যদি কেউ ইসলামের পথে এসে থাকে তাও স্বেচ্ছায় এসেছে। কারণ ইসলামে কাউকে জোর করে ধর্মান্তরিত করার নজির নেই৷ সাম্প্রদায়িকতা সৃষ্টি করার জন্য এধরণের মিথ্যা বানোয়াট অপপ্রচার করা হয়েছে বলে প্রতিয়মান হয়।
নিম্নে সংযুক্ত ছবিগুলোর দিকে চোখ বুলালে বুঝতে অসুবিধা হবেনা যে, পাহাড়ে খ্রিস্টান ধর্মে প্রচার-প্রসার এবং খ্রিস্টধর্মে ধর্মান্তরিত করার বাস্তবতা।